নিজস্ব প্রতিবেদক : ট্রেনের আগাম টিকেটের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি হলেও ইদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে স্বস্তি নিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ঘরমুখো মানুষ।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। এদিন কিছু ট্রেন দেরিতে ছাড়লেও সময়সূচি বিপর্যয় হয়নি। স্টেশনে তেমন একটা ভিড় না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। কমলাপুর থেকে দুপুর পৌনে ৩টায় রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সিল্ক সিটির যাত্রী নওরোজ সুফিয়ান ইসলাম জানান, টিকেট কিনতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে যতটা ঝক্কি পোহাতে হয়েছে, যাত্রার দিন ততটাই স্বস্তিতে ট্রেনে চাপতে পেরেছেন।
নওরোজ বলেন, “বুধবারের টিকেট কাটার জন্য গত শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে স্টেশনে এসে লাইন ধরেছিলাম। টিকেট পেয়েছিলাম দুপুর আড়াইটায়। আজ বাড়ি যাচ্ছি একদম আরামসে!”
চাপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহী কমিউটার ট্রেনে দুই মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন বনশ্রীর বাসিন্দা পারভিন সুলতানা। স্বামীর অফিসে এখনও ছুটি মেলেনি, তাই তার স্বামী বাড়ি যাবেন আগামীকাল শুক্রবার। বলেন, “ওদের বাবার এখনও অফিস চলছে। ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছি।
“গতবছর কোভিড সংক্রমণের কারণে গ্রামের বাড়িতে কোরবানি দিতে পারিনি। এবার দিচ্ছি। সবাই একসাথে ঈদ করবে বলে বাচ্চারাও খুব এক্সাইটেড।”
গত মঙ্গলবার আগাম টিকেট বিক্রির শেষদিন এবং ঈদযাত্রার প্রথমদিন হওয়ায় কমলাপুরে বিকেল পর্যন্ত ছিল টিকেটপ্রত্যাশী এবং ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বুধবার চিত্র ছিলো অনেকটাই ভিন্ন। টিকেট কাউন্টার ছিল বেশ ফাঁকা।
ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, “এ পর্যন্ত আমাদের যে কয়টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গিয়েছে, তার বেশিরভাগই সময়মতো স্টেশন ছেড়েছে।”
এদিন শুধুমাত্র রংপুর এক্সপ্রেস দেড়ঘণ্টা দেরিতে, নীলফামারী এক্সপ্রেস আধাঘণ্টা এবং সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩৫ মিনিট দেরি করে ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মাসুদ সারওয়ার বলেন, “ট্রেনগুলো স্টেশনে ফিরে এসেছেই দেরিতে। ট্রেন দেরিতে এলে এখান থেকে সব ব্যবস্থাপনা শেষ করে ট্রেন ছাড়তে একটু দেরিই হয়।”
ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের শতভাগ টিকেট বিক্রি হয়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের যে চাপ থাকে, সেটি এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি যেহেতু এখনও অফিস আদালত চলমান।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে স্টেশনে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ভিড় আরও অনেক বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কথা বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে এবার আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে স্ট্যান্ডিং টিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান স্টেশন মাস্টার মাসুদ সারওয়ার। তিনি বলেন, “প্রত্যেকেই নাড়ীর টানে ঘরে ফিরতে চায়। যেহেতু ব্যাপক সংখ্যক যাত্রী এখনও টিকেট পাননি, তাদের কথা বিবেচনা করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে স্ট্যান্ডিং টিকেট দেওয়া হবে।”
এছাড়া ঈদযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আনতে এবং অযাচিত ভিড় এড়াতে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনগুলো জয়দেবপুর এবং বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে না বলেও জানান স্টেশন মাস্টার। মাসুদ সারওয়ার বলেন, “যখন ট্রেনগুলো ফিরে আসে, ওই স্টেশনগুলো থেকে অনেক যাত্রী বিনা টিকেটেই ট্রেনে উঠে যায়। সেকারণে যারা টিকেট কেটে ট্রেনে ওঠেন, তারা ঠিকভাবে বসতে পারেন না। “গতবার এধরনের অনেক অভিযোগ আসায়, এবার ফেরার পথে স্টেশনদুটিতে ট্রেন থামবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে”।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করায় যাত্রীদের নিজেদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করে মাস্ক পরে ট্রেনে ভ্রমণ করার আহবান জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার।
ট্রেনে স্বস্তির ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ