ঢাকা ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ট্রেনযাত্রায় পূর্ণতা পেল পদ্মা সেতু

  • আপডেট সময় : ০২:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালুর ৯ মাস বাদে সেতুটি দিয়ে প্রথমবারের মতো চলা পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, “এই রেল চলার মধ্য দিয়ে আজ এই সেতু পূর্ণাঙ্গতা পেল।”
পরীক্ষামূলক ট্রেনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর উপর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে পৌঁছে একথা বলেন তিনি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনকারী পদ্ম্ াসেতুতে গত বছরের ২৫ জুন গাড়ি চলাচল শুরু হলেও পরিকল্পনা মাফিক ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। তবে ছয় মাসের মধ্যে এই সেতুতে নিয়মিত ট্রেন চলাচলের আশা প্রকাশ করেন নুরুল ইসলাম।
“আশা করা হচ্ছে, এ বছরেই ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলবে। অগাস্টের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ হবে, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করবেন। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চলবে।”
পরীক্ষামূলক ট্রেনযাত্রায় সুজনের সহযাত্রী ছিলেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, আব্দুস সোবহান গোলাপ, ইকবাল হোসেন অপু, নাঈম রাজ্জাকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। নারী-পুরুষ-শিশুরা ট্রেনের হুইসেলের শব্দে রেললাইনের পাশে ছুটে আসেন। হাত নেড়ে, চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল তারা।
চৈত্রের দুপুরে পুকুরে গোসলে নামা কিশোরের দল ট্রেনের শব্দ পেয়ে ভেজা শরীরে ছুটে আসে রেললাইনের পাশে। কোথাও কোথাও স্কুলের ক্লাস থেকে রেললাইনের পাশে এসে দাঁড়ায় শিশুর দল। নন এসি বগিগুলোর জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তার জবাব দেন যাত্রীদের অনেকে। শিশুদের কেউ কেউ লাফাতে লাফাতে ছুট দেয় ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গেই।
রসুন শুকাতে দেওয়া কিষাণি শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন ট্রেনের দিকে। দুধের শিশুকে কাঁধে বসিয়ে ছুটতে ছুটতে আসতে দেখা যায় এক বাবাকেও। পদ্মা সেতুর উপরে ওঠা প্রথম ট্রেনটি দেখতে অনেকেই এসেছিলেন মোবাইল ফোন হাতে। কেউ ট্রেনের ভিডিও করছিলেন, কেউ ট্রেনের সঙ্গে তুলছিলেন সেলফি। ২টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে ওঠে। এতক্ষণ ঝমঝম শব্দে ট্রেনটি চললেও সেতুর ওপর স্লিপারবিহীন রেলপথে সেই শব্দ বিলীন হয়ে গেল। কেবল চাকার সঙ্গে লাইনের ঘর্ষণের একটা শো শো শব্দ আসছিল। ট্রেনটি মূল সেতুতে ওঠার সময় আতশবাজি ফোটানো হয়। ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৩টা ১৮ মিনিটে মাওয়া স্টেশনে এসে দাঁড়ায় ট্রেনটি। ট্রেনটি চালিয়ে নিয়েছিলেন লোকো মাস্টার রবিউল ইসলাম ও সহকারী লোকো মাস্টার আরিফুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরসের নতুন ইঞ্জিনটি চীন থেকে আনা চকচকে লাল-সবুজ সাতটি বগিকে পরীক্ষামূলক যাত্রায় ধীর গতিতে টেনে নিয়ে পদ্মা পার করে। ট্রেনটির পেছনে আরেকটি ইঞ্জিন জুড়ে দেওয়া ছিল। তবে এ লাইনে ইঞ্জিনটি সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে বলে জানালেন প্রকৌশলীরা। চীনের ঋণ ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল লাইনসহ ২১৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর– এই তিন ভাগে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত।
রেলমন্ত্রী সুজন জানান, ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭২ শতাংশ এবং মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি প্রায় ৯১ শতাংশ। ভাঙ্গা-যশোর প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
প্রকল্পের খরচ বাড়ছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আগামী বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটা বলা যাবে।” দুই তলা পদ্মা সেতুর উপরতলার সড়কপথ গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০ অগাস্ট সেতুর নিচতলায় রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সাত মাসের মাথায় গত ৩১ মার্চ সেতুর ওপর রেললাইন তৈরির কাজ শেষ হয়। এই রেললাইনটি পাথরবিহীন (ব্যালাস্টলেস), সেতুর পাটাতনের উপর ঢালাইয়ের মাধ্যমে স্লিপার বসানো হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ট্রেনযাত্রায় পূর্ণতা পেল পদ্মা সেতু

আপডেট সময় : ০২:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালুর ৯ মাস বাদে সেতুটি দিয়ে প্রথমবারের মতো চলা পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, “এই রেল চলার মধ্য দিয়ে আজ এই সেতু পূর্ণাঙ্গতা পেল।”
পরীক্ষামূলক ট্রেনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর উপর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে পৌঁছে একথা বলেন তিনি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনকারী পদ্ম্ াসেতুতে গত বছরের ২৫ জুন গাড়ি চলাচল শুরু হলেও পরিকল্পনা মাফিক ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। তবে ছয় মাসের মধ্যে এই সেতুতে নিয়মিত ট্রেন চলাচলের আশা প্রকাশ করেন নুরুল ইসলাম।
“আশা করা হচ্ছে, এ বছরেই ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলবে। অগাস্টের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ হবে, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করবেন। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চলবে।”
পরীক্ষামূলক ট্রেনযাত্রায় সুজনের সহযাত্রী ছিলেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, আব্দুস সোবহান গোলাপ, ইকবাল হোসেন অপু, নাঈম রাজ্জাকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। নারী-পুরুষ-শিশুরা ট্রেনের হুইসেলের শব্দে রেললাইনের পাশে ছুটে আসেন। হাত নেড়ে, চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল তারা।
চৈত্রের দুপুরে পুকুরে গোসলে নামা কিশোরের দল ট্রেনের শব্দ পেয়ে ভেজা শরীরে ছুটে আসে রেললাইনের পাশে। কোথাও কোথাও স্কুলের ক্লাস থেকে রেললাইনের পাশে এসে দাঁড়ায় শিশুর দল। নন এসি বগিগুলোর জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তার জবাব দেন যাত্রীদের অনেকে। শিশুদের কেউ কেউ লাফাতে লাফাতে ছুট দেয় ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গেই।
রসুন শুকাতে দেওয়া কিষাণি শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন ট্রেনের দিকে। দুধের শিশুকে কাঁধে বসিয়ে ছুটতে ছুটতে আসতে দেখা যায় এক বাবাকেও। পদ্মা সেতুর উপরে ওঠা প্রথম ট্রেনটি দেখতে অনেকেই এসেছিলেন মোবাইল ফোন হাতে। কেউ ট্রেনের ভিডিও করছিলেন, কেউ ট্রেনের সঙ্গে তুলছিলেন সেলফি। ২টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে ওঠে। এতক্ষণ ঝমঝম শব্দে ট্রেনটি চললেও সেতুর ওপর স্লিপারবিহীন রেলপথে সেই শব্দ বিলীন হয়ে গেল। কেবল চাকার সঙ্গে লাইনের ঘর্ষণের একটা শো শো শব্দ আসছিল। ট্রেনটি মূল সেতুতে ওঠার সময় আতশবাজি ফোটানো হয়। ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৩টা ১৮ মিনিটে মাওয়া স্টেশনে এসে দাঁড়ায় ট্রেনটি। ট্রেনটি চালিয়ে নিয়েছিলেন লোকো মাস্টার রবিউল ইসলাম ও সহকারী লোকো মাস্টার আরিফুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরসের নতুন ইঞ্জিনটি চীন থেকে আনা চকচকে লাল-সবুজ সাতটি বগিকে পরীক্ষামূলক যাত্রায় ধীর গতিতে টেনে নিয়ে পদ্মা পার করে। ট্রেনটির পেছনে আরেকটি ইঞ্জিন জুড়ে দেওয়া ছিল। তবে এ লাইনে ইঞ্জিনটি সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে বলে জানালেন প্রকৌশলীরা। চীনের ঋণ ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল লাইনসহ ২১৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর– এই তিন ভাগে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত।
রেলমন্ত্রী সুজন জানান, ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭২ শতাংশ এবং মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি প্রায় ৯১ শতাংশ। ভাঙ্গা-যশোর প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
প্রকল্পের খরচ বাড়ছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আগামী বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটা বলা যাবে।” দুই তলা পদ্মা সেতুর উপরতলার সড়কপথ গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০ অগাস্ট সেতুর নিচতলায় রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সাত মাসের মাথায় গত ৩১ মার্চ সেতুর ওপর রেললাইন তৈরির কাজ শেষ হয়। এই রেললাইনটি পাথরবিহীন (ব্যালাস্টলেস), সেতুর পাটাতনের উপর ঢালাইয়ের মাধ্যমে স্লিপার বসানো হয়েছে।