প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠকে বসেছিলেন। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠককে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। তবে তাদের বৈঠক শেষে কোনো ধরনের চুক্তি বা যুদ্ধ থামানোর ঘোষণা আসেনি। ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে সেটির মাধ্যমে চুক্তি করা সম্ভব। তবে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইউক্রেন এবং ইউরোপকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হবে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড তুলে দিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির মাধ্যমে -বৈঠক শেষে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই নেতা। সেখানে পুতিনকে প্রথমে কথা বলতে দেন ট্রাম্প। এরপর কথা বলা শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, তারা দুই দেশ এ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু কোন কোন বিষয়ে সেটি স্পষ্ট করেননি তিনি। পুতিন বলেন, যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো চুক্তি করতে হয় তাহলে যে সমস্যার কারণে তিনি ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছেন সেই সমস্যার মূল উৎপাটন করতে হবে। এছাড়া এই আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আভাসও দিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, আমি মনে করি আজকের বৈঠক শুধুমাত্র ইউক্রেন সমস্যা সমাধানের শুরু নয়, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসায়িক ও বাস্তবসম্মত সম্পর্ক ফিরিয়ে আনবে।
সাবেক প্রেসিডেন্টের জো বাইডেনের জায়গায় ট্রাম্প থাকলে ইউক্রেনে হয়ত তিনি কখনো হামলা চালাতেন না বলে দাবি করেন পুতিন। পুতিনের বক্তব্য শেষ হলে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা শুরু করেন ট্রাম্প। ওই সময় তিনি ইঙ্গিত দেন, তারা দুজন অনেক বিষয়েই সম্মত হয়েছেন। কিন্তু কিছু বড় বিষয়ে সম্মত হতে পারেননি। যার কারণে কোনো চুক্তি হয়নি। ট্রাম্প বলেন, অনেক, অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বেশিরভাগ বিষয়ে একমত। তবে কিছু বড় বিষয়ে হতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। তবে চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই। আমি স্বল্প সময়ে ন্যাটোকে, যাদের এ বিষয়ে যথার্থ- তাদের এবং অবশ্যই ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আজকের বৈঠকের ব্যাপারে অবহিত করব।
স্বল্পস্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনের শেষে ট্রাম্পকে মস্কোতে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান পুতিন। তখন ট্রাম্প জানান, তার মনে হয় মস্কোতে তাদের বৈঠক হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বা পুতিনের কেউ সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নেননি। সাংবাদিকরা চিৎকার অনেক প্রশ্ন করলেও সেগুলোর জবাব দেননি দুজন। সূত্র: সিবিএস
যুদ্ধ বন্ধে ভূখণ্ড চায় রাশিয়া, ইউক্রেনকে দিতে হবে: বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। এতে তিনি জানান, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হবে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড তুলে দিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির মাধ্যমে।
ফক্স নিউজের সাংবাদিক ও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সিন হ্যানিটি তখন ভূখণ্ড দেওয়া এবং মার্কিনিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এসব বিষয়ে আমরা অনেকটা সম্মত হয়েছি। আসলে, আমরা অনেক বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমি আপনাকে বলতে পারি, এ বৈঠকটি ছিল উষ্ণ বৈঠক।
পুতিনকে ‘শক্তিশালী ব্যক্তি’ এবং ‘কঠোর’ হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প। তবে তা সত্ত্বেও তাদের বৈঠক বেশ ইতিবাচক হয়েছে বলে জানান তিনি। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধে বন্ধে রাশিয়ার চাহিদা অনুযায়ী ইউক্রেনকে তাদের ভূখণ্ড দিতে হবে। এগুলো মেনে নিয়ে ইউক্রেনকে চুক্তি করতে হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা (যুদ্ধ) শেষের খুব কাছে আছি। এবং দেখুন, ইউক্রেনকে এটি মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য কোনো উপদেশ আছে কি না? এমন প্রশ্ন ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করুন। সূত্র: সিএনএন
পুতিনকে মেলানিয়ার চিঠি, পৌঁছে দিলেন ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় বিশ্বের দুই ক্ষমতাধর নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে এক ভিন্ন মাত্রা নিয়ে হাজির হলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ‘হাই প্রোফাইল’ এই বৈঠকে তিনি সশরীরে ছিলেন না, কিন্তু ব্যক্তিগত এক চিঠিতে তার উপস্থিতি জোরদারভাবেই থাকল। চিঠিটি তিনি লিখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে, সেই চিঠি আবার পৌঁছে দিয়েছেন স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং। আলাস্কায় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সম্ভাবনা, সুযোগ সবকিছুর সঙ্গে এখন সেই চিঠি নিয়েও আলোচনা তুঙ্গে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চিঠিটিতে স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেওয়া মার্কিন ফার্স্ট লেডি যুদ্ধের কারণে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার শিশুদের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের দুই কর্মকর্তা। শুক্রবার হোয়াইট হাউজের দুই কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে অপহৃত শিশুদের প্রসঙ্গ তুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই চিঠি দিয়েছেন তিনি। এতে যুদ্ধের কারণে অপহৃত শিশুদের কথা আছে, বলেছেন তারা। এ নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলতে তারা রাজি হননি। যুদ্ধের সময় শিশুদের ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগ নিয়ে ইউক্রেইন শুরু থেকেই বেশ শোরগোল তুলে আসছে।