ঢাকা ১১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ‘ভুলের ওপর ভুল’, চীনের মন্তব্য

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : চীন যদি পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই হুঁশিয়ারিকে ভুলের ওপর ভুল- বলে অভিহিত করেছে চীন। খবর বিবিসির। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।

আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে ‘ভুলের ওপর ভুল’ বলে অভিহিত করেছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীন তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়ে বলেছে, শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা হোক এবং দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার মত পার্থক্যের সমাধান করা হোক।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প চীনকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেন তাদের পাল্টা শুল্ক তুলে নেওয়ার জন্য। অন্যথায় ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন, যেটিকে তিনি তার ‘লিবারেশন ডে’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই দিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ কর আরোপের কথাও জানান। জবাবে রোববার পাল্টা ব্যবস্থা নেয় বেইজিং। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ওয়াশিংটনের ‘দাদাগিরি’ ফলানোর অভিযোগ এনে বলছে, বেইজিং তাদের ‘ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে’।

যদি ট্রাম্প তার হুঁশিয়ারি কার্যকর করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে চীনা পণ্যের ওপর মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে কারণ এটি মার্চে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক এবং গত সপ্তাহে ঘোষিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের ওপর অতিরিক্তভাবে বসানো হবে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি ও প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে এ পদক্ষেপ বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও গভীর করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থগিতের কথা ভাবছেন না ট্রাম্প
এদিকে নতুন ঘোষিত মার্কিন শুল্ক নীতি স্থগিতের কথা আপাতত বিবেচনায় নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি, দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলের ওপর থেকেও শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাসের বিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি তিনি। গত সোমবার (৭ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা উঠে আসে। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বিশ্বব্যাপী আরোপিত চড়া শুল্ক স্থগিতের সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওই বিষয়ে কিছু ভাবছি না।

আগের বাক্যের রেশ ধরে তিনি আরও বলেন, (শুল্ক ঘোষণার পর) অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের সবার সঙ্গে ন্যায্য চুক্তি হবে। এটা ঠিক, কিছু দেশ উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক দিতে বাধ্য থাকবে, কিন্তু চুক্তিগুলো হবে ন্যায়সংগত। বিশ্বের প্রায় সব দেশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে আগ্রহী বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। সে উদ্দেশেই হোয়াইট হাউজ গিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। মার্কিন মুলুকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানিতেও ১৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলের ওপর ঘোষিত শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, (শুল্ক হ্রাস) হতেও পারে, নাও পারে।

আমরা বাণিজ্যচুক্তির সম্পূর্ণ নতুন এক দিগন্ত নিয়ে কাজ করছি। তবে এটা ভুলে গেলে কিন্তু হবে না, ইসরায়েলকে আমরা অনেক সহায়তা দিই। বছরে চারশ কোটি ডলার কিন্তু ছোট অঙ্ক নয়। প্রসঙ্গত, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি পণ্যের ওপর বিশ্বব্যাপী দেদারসে শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। যে কোনও পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আছে, এমন সব দেশের ওপর শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছেন তিনি। দিনটিকে তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে আখ্যা দিলেও, অধিকাংশ দেশ ওই দিন থেকেই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে আছে। প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে ভুগিয়েছিলেন পুরো বিশ্বকে। এবারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক খেলায় সাধারণ মানুষ কতটুকু নাজেহাল হয়, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ‘ভুলের ওপর ভুল’, চীনের মন্তব্য

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : চীন যদি পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই হুঁশিয়ারিকে ভুলের ওপর ভুল- বলে অভিহিত করেছে চীন। খবর বিবিসির। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।

আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে ‘ভুলের ওপর ভুল’ বলে অভিহিত করেছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীন তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়ে বলেছে, শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা হোক এবং দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার মত পার্থক্যের সমাধান করা হোক।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প চীনকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেন তাদের পাল্টা শুল্ক তুলে নেওয়ার জন্য। অন্যথায় ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন, যেটিকে তিনি তার ‘লিবারেশন ডে’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই দিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ কর আরোপের কথাও জানান। জবাবে রোববার পাল্টা ব্যবস্থা নেয় বেইজিং। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ওয়াশিংটনের ‘দাদাগিরি’ ফলানোর অভিযোগ এনে বলছে, বেইজিং তাদের ‘ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে’।

যদি ট্রাম্প তার হুঁশিয়ারি কার্যকর করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে চীনা পণ্যের ওপর মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে কারণ এটি মার্চে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক এবং গত সপ্তাহে ঘোষিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের ওপর অতিরিক্তভাবে বসানো হবে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি ও প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে এ পদক্ষেপ বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও গভীর করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থগিতের কথা ভাবছেন না ট্রাম্প
এদিকে নতুন ঘোষিত মার্কিন শুল্ক নীতি স্থগিতের কথা আপাতত বিবেচনায় নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি, দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলের ওপর থেকেও শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাসের বিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি তিনি। গত সোমবার (৭ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা উঠে আসে। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বিশ্বব্যাপী আরোপিত চড়া শুল্ক স্থগিতের সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওই বিষয়ে কিছু ভাবছি না।

আগের বাক্যের রেশ ধরে তিনি আরও বলেন, (শুল্ক ঘোষণার পর) অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের সবার সঙ্গে ন্যায্য চুক্তি হবে। এটা ঠিক, কিছু দেশ উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক দিতে বাধ্য থাকবে, কিন্তু চুক্তিগুলো হবে ন্যায়সংগত। বিশ্বের প্রায় সব দেশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে আগ্রহী বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। সে উদ্দেশেই হোয়াইট হাউজ গিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। মার্কিন মুলুকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানিতেও ১৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েলের ওপর ঘোষিত শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, (শুল্ক হ্রাস) হতেও পারে, নাও পারে।

আমরা বাণিজ্যচুক্তির সম্পূর্ণ নতুন এক দিগন্ত নিয়ে কাজ করছি। তবে এটা ভুলে গেলে কিন্তু হবে না, ইসরায়েলকে আমরা অনেক সহায়তা দিই। বছরে চারশ কোটি ডলার কিন্তু ছোট অঙ্ক নয়। প্রসঙ্গত, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি পণ্যের ওপর বিশ্বব্যাপী দেদারসে শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। যে কোনও পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আছে, এমন সব দেশের ওপর শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছেন তিনি। দিনটিকে তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে আখ্যা দিলেও, অধিকাংশ দেশ ওই দিন থেকেই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে আছে। প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে ভুগিয়েছিলেন পুরো বিশ্বকে। এবারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক খেলায় সাধারণ মানুষ কতটুকু নাজেহাল হয়, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।