বিদেশের খবর ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা ও হোয়াইট হাউস টিমের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এফবিআই জানিয়েছে, তারা বোমা হামলার হুমকি ও হয়রানি ঘটনার বিষয়ে অবগত। গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার কমপক্ষে ৯ জনকে এই ধরনের হয়রানিমূলক হুমকি দেওয়া হয়েছে।
যাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি। তাদের প্রতি প্রতিরক্ষা, আবাসন, কৃষি ও শ্রম বিভাগের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীতরাও রয়েছেন। ওই দুই দিন কী হয়েছিল সেই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।
ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিরা নিজেরা তো হয়েছেনই, একই সঙ্গে পরিবারও সহিংস হামলার হুমকির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্রুত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের আমাদের জন্য উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন, বিপজ্জনক হুমকি এবং সহিংসতা আমাদের দমাতে পারবে না। তবে তিনি বা এফবিআই কেউই কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেনি।
নিউইয়র্কের রিপাবলিকান এলিস স্টেফানিক জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী হয়েছে। তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন যে, তার পারিবারিক বাড়ি বোমা হামলার হুমকির লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। তার অফিস জানায়, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্কে থ্যাংকসগিভিংয়ের জন্য যাওয়ার সময় তার স্বামী ও তিন বছরের ছেলের সঙ্গে গাড়িতে থাকা অবস্থায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
ডিফেন্স সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত পিট হেগসেথও পরে জানান, তাকেও লক্ষ্য করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা গত বুধবার সকালে তার বাড়িতে এসে জানান যে, তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য পাইপ বোমা হামলার হুমকি পেয়েছেন। ওই সময় বাড়িতে তার সাত সন্তান ঘুমাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমি কখনোই ভয় পাব না বা দমে যাব না; কখনোই না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সেটাই আমি করবো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও তার নির্বাচনী প্রচারের সময় দু’বার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। তবে তিনি এ রকম ভুয়া কল পাননি বলে মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। কিন্তু তিনিও সম্প্রতি হুমকির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অ্যারিজোনার কর্মকর্তারা। সেখানে এক ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিন ভিডিও পোস্ট করে ট্রাম্প ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। পরে সপ্তাহের শুরুতেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন।
মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এই সপ্তাহে যারা লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তারা কেউই মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস দ্বারা সুরক্ষিত ছিলেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থার প্রশাসক হিসেবে মনোনীত করেছেন লি জেলডিনকে। তিনিও নিশ্চিত করেছেন যে তাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তিনি বলেন, একটি প্রো-প্যালেস্টাইন থিমযুক্ত বার্তাসহ একটি পাইপ বোমার হুমকি তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। আমার পরিবার ও আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমরা এখন নিরাপদে আছি। স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
ট্রাম্পের কৃষি বিভাগের প্রধান হিসেবে মনোনীত ব্রুক রলিনস এক্সে পোস্ট করে টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থের পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কারণ তার পরিবারের প্রতি দেওয়া হুমকির বিষয়ে পুলিশ দ্রুত তদন্ত করেছে। তিনি বলেন, আমরা অক্ষত ছিলাম এবং দ্রুত বাড়ি ফিরে এসেছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবাসন বিভাগের জন্য মনোনীত স্কট টার্নারও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। প্রত্যেকেই প্রতিজ্ঞা করেছেন, এ ধরনের হুমকি তাদের দমাতে পারবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে অবগত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রেসিডেন্ট ইলেকটের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মার্কিন কংগ্রেসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, তারা ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে হয়রানির বিষয়ে কাজ করছে। তবে অন্য কেউ যেন একই প্রক্রিয়া অনুকরণ করে হুমকি না দেয়, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের মনোনয়ন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া ফ্লোরিডার রিপাবলিকান ম্যাট গেটজকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ফ্লোরিডার ওকালুসা কাউন্টির শেরিফের অফিস নিশ্চিত করেছে, নাইসভেল শহরের একটি বাড়ির ঠিকানায় বোমার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপরেই তার বাড়ির ডাকবাক্সটি পরীক্ষা করা হয় এবং সেখানে কোনো ডিভাইস পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকা অনুসন্ধান করেও কিছু পাওয়া যায়নি।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কমার্স সেক্রেটারি হিসাবে মনোনীত হাওয়ার্ড লুটনিকের নিউ ইয়র্কের বাড়িতেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ম্যাট গেটজের পরিবর্তে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্যাম বন্ডি। তাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ সুসি উইলসও এই তালিকায় আছেন।
ফক্স নিউজ জানিয়েছে, সিআইএ পরিচালক হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত জন র্যাটক্লিফও হুমকির শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ভুয়া কৌশল অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাগুলো পরিচালনাকারী বিচারক ও প্রসিকিউটরদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গত বছর বড়দিনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের হয়রানি করা হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই রিপাবলিকান ছিলেন। তবে কয়েক ডেমোক্র্যাটও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।