ঢাকা ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল,কী বার্তা দিতে চাইছে ভারত

  • আপডেট সময় : ০৮:০২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ‘ইতিবাচক’ বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত সরকার। গত সোমবার (৮ এপ্রিল) ভারতের রাজস্ব বিভাগের এক সার্কুলারে জানানো হয়, ২৯ জুন ২০২০-এ প্রকাশিত সার্কুলার, যার অধীনে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, সেটি বাতিল করা হলো। এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নেপাল বা ভুটানে পণ্য পাঠানো যেতো। ব্যবহারিকভাবে এর ব্যবহার অত্যন্ত কম হলেও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই সুবিধাকে তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই নেতার মধ্যে ৪০ মিনিটব্যাপী বৈঠকের পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে সংবাদ বিবৃতি দেওয়া হয়, সেটি নিয়ে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় সরকারের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বাংলাদেশের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এর কয়েক দিন পরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে একটি বার্তা দিতে চাইছে দিল্লি। এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘কূটনীতি কখনও মিডিয়ার মাধ্যমে করা যায় না। স্পর্শকাতর বিষয়ে সবসময় সাবধানে মন্তব্য করাই শ্রেয়। বাংলাদেশ ও ভারত—উভয়পক্ষ থেকে মিডিয়া ব্যবহার করে কূটনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার একটি চেষ্টা আছে। এগুলো ভালো সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।’ আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতীয়রা বাংলাদেশের জন্য যে সুবিধা বাতিল করেছে, সেটির ব্যবহারিক মূল্য কম। অত্যন্ত কম সংখ্যক পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় নেপাল বা ভুটানে পাঠানো হয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বড় কোনও ক্ষতি হবে না এবং আমার ধারণা দিল্লি এটি বুঝেশুনে করেছে।’
কী বলা আছে
৮ এপ্রিল তারিখের ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ১৩/২০২৫ সার্কুলারে উদ্দেশ্য (সাবজেক্ট) অংশে বলা হয়েছে, ২৯ জুন, ২০২০ তারিখে ২৯/২০২০ সার্কুলার বাতিল করা হলো এবং এর মাধ্যমে স্থল কাস্টমস বন্দর ব্যবহার তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা রহিত করা হলো। এই সার্কুলার অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে, তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য যদি কোনও কার্গো বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে, সেগুলো ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হলো।
নতুন সম্পর্ক
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্ক তৈরি হয়। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের পরে দুইপক্ষের মধ্যে ইতিবাচকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মতো একটি পরিবেশ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে কে কী বলেছে সেটির ব্যাখ্যা নিয়ে উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী খবর পরিবেশিত হয়। এরপরই ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সার্কুলার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সবারই একটি নিজস্ব কন্সটিটিউয়েনসি আছে। বাংলাদেশের কন্সটিটিউয়েনসির জন্য শেখ হাসিনার ফেরত আনার বিষয়টি জরুরি। আবার ভারতের জন্য সংখ্যালঘু বিষয়টি জরুরি। এই দুটি স্পর্শকাতর বিষয় বৈঠকে আলোচনা হবে এটি প্রায় অবধারিত বিষয়। কিন্তু ভেতরের আলোচনা এবং বাইরে কীভাবে সেটিকে জানানো হচ্ছে দুটি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনীতির নিয়ম হচ্ছে স্পর্শকাতর এবং বিকশিত বিষয় সবসময় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে মিডিয়াতে প্রকাশ করা।’ উল্লেখ্য, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে সেটি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমি এটুকু বলবো।’ আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উভয়পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। একপক্ষের আগ্রহে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে না। সেজন্য সবাইকে সংযত আচরণ এবং মন্তব্য করা প্রয়োজন।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল,কী বার্তা দিতে চাইছে ভারত

আপডেট সময় : ০৮:০২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা : গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ‘ইতিবাচক’ বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত সরকার। গত সোমবার (৮ এপ্রিল) ভারতের রাজস্ব বিভাগের এক সার্কুলারে জানানো হয়, ২৯ জুন ২০২০-এ প্রকাশিত সার্কুলার, যার অধীনে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, সেটি বাতিল করা হলো। এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নেপাল বা ভুটানে পণ্য পাঠানো যেতো। ব্যবহারিকভাবে এর ব্যবহার অত্যন্ত কম হলেও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই সুবিধাকে তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই নেতার মধ্যে ৪০ মিনিটব্যাপী বৈঠকের পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে সংবাদ বিবৃতি দেওয়া হয়, সেটি নিয়ে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় সরকারের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বাংলাদেশের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এর কয়েক দিন পরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে একটি বার্তা দিতে চাইছে দিল্লি। এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘কূটনীতি কখনও মিডিয়ার মাধ্যমে করা যায় না। স্পর্শকাতর বিষয়ে সবসময় সাবধানে মন্তব্য করাই শ্রেয়। বাংলাদেশ ও ভারত—উভয়পক্ষ থেকে মিডিয়া ব্যবহার করে কূটনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার একটি চেষ্টা আছে। এগুলো ভালো সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।’ আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতীয়রা বাংলাদেশের জন্য যে সুবিধা বাতিল করেছে, সেটির ব্যবহারিক মূল্য কম। অত্যন্ত কম সংখ্যক পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় নেপাল বা ভুটানে পাঠানো হয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বড় কোনও ক্ষতি হবে না এবং আমার ধারণা দিল্লি এটি বুঝেশুনে করেছে।’
কী বলা আছে
৮ এপ্রিল তারিখের ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ১৩/২০২৫ সার্কুলারে উদ্দেশ্য (সাবজেক্ট) অংশে বলা হয়েছে, ২৯ জুন, ২০২০ তারিখে ২৯/২০২০ সার্কুলার বাতিল করা হলো এবং এর মাধ্যমে স্থল কাস্টমস বন্দর ব্যবহার তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা রহিত করা হলো। এই সার্কুলার অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে, তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য যদি কোনও কার্গো বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে, সেগুলো ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হলো।
নতুন সম্পর্ক
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্ক তৈরি হয়। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের পরে দুইপক্ষের মধ্যে ইতিবাচকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মতো একটি পরিবেশ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে কে কী বলেছে সেটির ব্যাখ্যা নিয়ে উভয় দেশের সংবাদমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী খবর পরিবেশিত হয়। এরপরই ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সার্কুলার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সবারই একটি নিজস্ব কন্সটিটিউয়েনসি আছে। বাংলাদেশের কন্সটিটিউয়েনসির জন্য শেখ হাসিনার ফেরত আনার বিষয়টি জরুরি। আবার ভারতের জন্য সংখ্যালঘু বিষয়টি জরুরি। এই দুটি স্পর্শকাতর বিষয় বৈঠকে আলোচনা হবে এটি প্রায় অবধারিত বিষয়। কিন্তু ভেতরের আলোচনা এবং বাইরে কীভাবে সেটিকে জানানো হচ্ছে দুটি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনীতির নিয়ম হচ্ছে স্পর্শকাতর এবং বিকশিত বিষয় সবসময় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে মিডিয়াতে প্রকাশ করা।’ উল্লেখ্য, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে সেটি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমি এটুকু বলবো।’ আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উভয়পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। একপক্ষের আগ্রহে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে না। সেজন্য সবাইকে সংযত আচরণ এবং মন্তব্য করা প্রয়োজন।’