প্রত্যাশা ডেস্ক : সমতা আইনের আওতায় শুধু জৈবিক লিঙ্গের মাধ্যমেই কাউকে নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। অর্থাৎ যারা জন্মগতভাবে নারী, তাদেরই শুধু নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। ট্রান্স বা রূপান্তরিতদের নারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দেন। খবর আল জাজিরার। এমন রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রান্স সমর্থকরা। এদিকে ব্রিটিশ সরকার এ রায়কে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। রায়টি এই নিয়ে ছিল যে, একজন ট্রান্স নারী যার কাছে জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেট (জিআরসি) আছে, যা তাকে আইনিভাবে নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়; তিনি কি ব্রিটেনের ‘ইকুয়ালিটি অ্যাক্ট’ আইন অনুযায়ী নারী হিসেবে বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাবেন কি না। এই রায় নিশ্চিত করে যে, নারীদের জন্য একক-লিঙ্গের পরিষেবা যেমন শরণার্থী কেন্দ্র, হাসপাতালের ওয়ার্ড এবং খেলাধুলায় ট্রান্স নারীরা সেবা পাবে না। ট্রান্সজেন্ডার প্রচারকরা বলেছেন, এতে বৈষম্য বাড়তে পারে, বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত হাসপাতাল, আশ্রয়স্থল এবং স্পোর্টস ক্লাবগুলোর জন্য স্পষ্টতা আনবে।
একক লিঙ্গের স্থানগুলো আইনত সুরক্ষিত এবং এই সরকার সর্বদা সুরক্ষিত রাখবে বলে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন। রায়টি আইনি অস্পষ্টতা দূর করে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হজ বলেন, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো সমতা আইন ২০১০-এ ‘নারী’ এবং ‘যৌন’ শব্দ দুটো দিয়ে যথাক্রমে জৈবিক নারী এবং জৈবিক লিঙ্গকে বোঝায়। কিন্তু এই রায়কে এক পক্ষের বিরুদ্ধে অপর পক্ষের জয় হিসেবে না দেখার পরামর্শ দেন প্যাট্রিক হজ। বিচারক আরও বলেন, আইনটি ট্রান্সজেন্ডারদের ‘লৈঙ্গিক পরিচয় পুনর্নিধারণের’ বৈশিষ্ট্যকেই কেবল সুরক্ষা দেয় না, বরং সব ধরনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বৈষম্য এবং তাদের রূপান্তরিত লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে যেকোনো ধরনের হয়রানির বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়। ব্রিটেন এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার একটি গুরুতর রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। হ্যারি পটার গল্পের লেখক জে. কে. রাউলিং আদালতের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনিও লিঙ্গ সমালোচনার ক্ষেত্রে সরব ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে শুনানি করাতে তিনজন অসাধারণ, দৃঢ়চেতা স্কটিশ নারীকে তাদের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। জয়লাভ করে তারা সমগ্র যুক্তরাজ্যজুড়ে নারীদের অধিকার রক্ষা করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ট্রান্স নারী বা পুরুষ কেউই আদালতের সিদ্ধান্তের কারণে বঞ্চিত হবে না। কারণ, সমতা আইন বৈষম্য বা হয়রানির বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা দিয়েছে। তবে ট্রান্সজেন্ডার সমর্থকদের শঙ্কা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্য ডেকে আনতে পারে। স্টোনওয়াল গ্রুপসহ সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং অন্যান্য পরিচয়ধারীদের সংগঠনগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ একটি চ্যালেঞ্জিং দিন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ের ব্যাপক, ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রায়ে দেখা গেছে, ট্রান্স ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমতা আইন জরুরিভাবে হালনাগাদ করা দরকার হতে পারে।