বিদেশের খবর ডেস্ক : ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের মত নিজেদের আয়রন ডোম নির্মাণের ঘোষণা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ট্রাম্প দক্ষিণ ফ্লোরিডায় তার গলফ রিসোর্টে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের এক সমাবেশে বক্তব্যে বলেন একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি চারটি নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব। প্রথম আদেশটি হলো অত্যাধুনিক আয়রন ডোম মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করা, যা আমেরিকানদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। পরে চারটি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প যার একটি ছিল ওই আয়রন ডোম নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা। ট্রাম্প তার এবারের নির্বাচনী প্রচারণায়ও আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে সম্প্রচারিত এক পডকাস্টে তিনি ইলন মাস্ককে বলেছিলেন, আমি বিশ্বের সেরা আয়রন ডোম নির্মাণ করতে চাই। এরপর, গত বছরের জুলাই মাসেও রিপাবলিকান পার্টির মঞ্চে একই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এদিকে মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় বা কার্যকর কি না, তা প্রশ্ন স্বাপেক্ষ। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে মিসাইল প্রতিরক্ষা কর্মসূচি যেমন গ্রাউন্ড-বেজড মিডকোর্স ডিফেন্স সিস্টেম এবং টার্মিনাল হাই অল্টিচুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) প্রোগ্রাম রয়েছে। তারা আরও বলছেন, ইসরায়েলের আয়রন ডোমে হামাসে তৈরি নিম্ন ক্ষমতার রকেট ও মর্টারের বিরুদ্ধে কার্যকর এবং ইসরায়েলের আকার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট রাজ্য নিউ জার্সির সমান। বিশাল মার্কিন মূল ভূখণ্ডে অনুরূপ একটি ব্যবস্থা তৈরি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সম্ভবত অকার্যকরও হতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের মতো প্রতিপক্ষের উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে।
ট্রান্সজেন্ডার নিয়োগ নিষিদ্ধ
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সই করা এক নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গঠনে কৌশলগত অগ্রাধিকারের অংশ হিসেবে এই আদেশ জারি করেছে বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের মতে- বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগগুলো বাতিল করা এবং সামরিক বাহিনী থেকে ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ সম্পূর্ণভাবে দূর করাই এই আদেশের মূল লক্ষ্য।
এর আগে ২০১৭ সালেও তার প্রথম মেয়াদে ট্রান্সজেন্ডারদের সামরিক বাহিনীতে ভর্তি নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশ জারি করে ছিলেন ট্রাম্প। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই আদেশ বাতিল করেন। ধারণা করা হয় মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় ৮ হাজার ট্রান্সজেন্ডার সদস্য রয়েছেন। এছাড়া অন্য এক আদেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাধ্যতামূলক নিয়মাবলি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় বরখাস্ত প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনাসদস্যকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। এই সদস্যরা ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
৬০ কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক ছুটি
বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা স্থগিত করার পর ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-এর প্রায় ৬০ জন সিনিয়র ক্যারিয়ার কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডি কর্মীদের আহ্বান জানায়, তারা যেন ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বব্যাপী সহায়তা বরাদ্দকরণে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। নির্দেশনা উপেক্ষা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় তাদের। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউএসএআইডির অ্যাক্টিং অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেসন গ্রে’র পাঠানো একটি অভ্যন্তরীণ মেমোতে বলা হয়, ‘নতুন নেতৃত্ব কয়েকটি কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে যা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ এবং আমেরিকান জনগণের মতামত এড়াতে পরিকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে, আমরা কয়েকজন ইউএসএআইডি কর্মীকে পূর্ণ বেতন ও সুবিধাসহ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠিয়েছি,’ মেমোতে বলেন অ্যাক্টিং অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেসন গ্রে। ছুটিতে পাঠানো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে তারা একটি ইমেইল পান যেখানে জানানো হয় তাদের প্রশাসনিক ছুটিতে রাখা হয়েছে এবং এর কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।