ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে ১৭ ভিডিওতে জুলাই হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ দৃশ্য

  • আপডেট সময় : ০৯:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর তার জবানবন্দি দিয়েছেন। ৫৪তম ও শেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অপর সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিন দুপুর সোয়া ১২টার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। এরপর শপথ পড়ে নিজের জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালকে দেখান। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ভয়ংকর বা নৃশংস দৃশ্য ফুটে উঠেছে। প্রথমেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। একপর্যায়ে একে একে সব দেখানো হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি আখ্যায়িত করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের চিত্রও তুলে ধরা হয়।

এছাড়া, রংপুর-রাজধানীর চানখারপুলে চালানো পুলিশের পাশবিকতার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এমনকি আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাটিও ফুটে ওঠে। সবশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের চালানো হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বানানো একটি প্রামান্যচিত্র দেখানো হয়। আর এসব ভিডিও প্রদর্শনী বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তানভীর হাসান জোহাসহ অন্যরা।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় অন্য সাক্ষীদের পাশাপাশি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ট্রাইব্যুনালে তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আরো দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ মো. কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান। তাদের জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। এছাড়া ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন। একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

সানা/আপ্র/২৮/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ট্রাইব্যুনালে ১৭ ভিডিওতে জুলাই হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ দৃশ্য

আপডেট সময় : ০৯:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর তার জবানবন্দি দিয়েছেন। ৫৪তম ও শেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অপর সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিন দুপুর সোয়া ১২টার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। এরপর শপথ পড়ে নিজের জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালকে দেখান। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ভয়ংকর বা নৃশংস দৃশ্য ফুটে উঠেছে। প্রথমেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। একপর্যায়ে একে একে সব দেখানো হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি আখ্যায়িত করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের চিত্রও তুলে ধরা হয়।

এছাড়া, রংপুর-রাজধানীর চানখারপুলে চালানো পুলিশের পাশবিকতার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এমনকি আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাটিও ফুটে ওঠে। সবশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের চালানো হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বানানো একটি প্রামান্যচিত্র দেখানো হয়। আর এসব ভিডিও প্রদর্শনী বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তানভীর হাসান জোহাসহ অন্যরা।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় অন্য সাক্ষীদের পাশাপাশি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ট্রাইব্যুনালে তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আরো দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ মো. কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান। তাদের জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। এছাড়া ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন। একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

সানা/আপ্র/২৮/০৯/২০২৫