ঢাকা ০১:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

টোঙ্গায় সুনামি: জরুরি সরবরাহের জন্য জোর প্রস্তুতি

  • আপডেট সময় : ১২:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :প্রশান্ত মহাসাগরের একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ও পরবর্তী সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত টোঙ্গায় জরুরি সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। দ্বীপপুঞ্জটির প্রধান বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে আগ্নেয়গিরির ছাই সরাতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে বেশ কয়েকটি দল। এসব দলের প্রায় ২০০ জন সদস্য বেলচা ও ঠেলাগাড়ি নিয়ে অনবরত ছাই সরিয়ে যাচ্ছে। রানওয়েটি পরিষ্কার হলে খাবার ও পানীয় জল নিয়ে ফ্লাইটগুলো সেখানে নামতে পারবে।
গত শনিবার হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা-হা’আপেই আগ্নেয়গিরিতে প্রচ- বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। বিস্ফোরণের পর একটি প্রবল শকওয়েভ পুরো প্রশান্ত মহাসাগারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় ১৫ মিটার উঁচু ঢেউ নিকটবর্তী টোঙ্গার দ্বীপগুলোতে আছড়ে পড়ে। কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিমান থেকে তোলা ছবিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া গেছে। বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। ঘন ছাইয়ের স্তরে ছেয়ে গেছে বিশাল এলাকা।
এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেলেও হতাহাতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে চার জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিন জন স্থানীয় ও একজন ব্রিটিশ নাগরিক বলে জানিয়েছে বিবিসি। অগ্ন্যুৎপাতের সময় গ্যাস, ধোঁয়া ও ঘন ছাইয়ের কু-ুলি আকাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে যায়। টোঙ্গার সরকার এই অগ্ন্যুৎপাতকে ‘নজিরবিহীন বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেছে। এ ঘটনার পর সেখানে জাহাজ পাঠিয়েছে প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। টোঙ্গার স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে জাতিসংঘের আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে ছাই পরিষ্কার করার কাজ চলছে, কিন্তু যা ভাবা হয়েছিল এটি তার চেয়ে বেশি কঠিন হচ্ছে, তারপরও ভালো অগ্রগতি হয়েছে এবং ফ্লাইট চলাচল শিগগিরই শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি জোনাথন ভাইচ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এটি চালু করা যাবে (মঙ্গলবার), কিন্তু এটি এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি কারণ আরও ছাই এসে পড়ছে।” ভাইচ নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্রুত সাড়ার প্রশংসা করেছেন। দেশ দু’টি তাদের নৌবাহিনীর জাহাজের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহের কাজ করছে আর এসব জাহাজে সাগরের পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে আর এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, জাহাজগুলো ‘আমাদের জন্য প্রচুর পানি নিয়ে ও স্যানিটেশনের রসদ’ নিয়ে আসছে। দ্বীপগুলোর পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
নিউ জিল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিনি হেনার বিবিসিকে বলেছেন, সম্প্রতি তারা টোঙ্গায় দুটি নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছেন যেগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। “টোঙ্গায় যেতে তিন থেকে চার দিন লাগবে। দু’টি জাহাজেই প্রচুর পানি, খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রি আছে,” বলেছেন তিনি।
সাগরের নিচ দিয়ে যাওয়া একটি ক্যাবলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত ছিল টোঙ্গা। কিন্তু অগ্ন্যুৎপাতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্বীপপুঞ্জটির সঙ্গে বাকি বিশ্বের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
প্রবাসী টোঙ্গানরা দেশে থাকা স্বজনদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলেও যোগাযোগ করতে না পেরে খবরের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। গত মঙ্গলবার টোঙ্গার সরকার জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে আছে তবে স্থানীয় কিছু টেলিফোন সেবা সচল আছে আর যোগাযোগ পুরোপুরি সচল করতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সুনামিতে ৬৫ বছর বয়সী একজন নারী, ৪৯ বছর বয়সী একজন পুরুষ ও অ্যাঞ্জেলা গ্লোভার নামের একজন ব্রিটিশ নারী মারা গেছেন। আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং চতুর্থ আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে।
প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপুর বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে পানি সরবরাহ ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ আছে আর জাহাজ চলাচলের রুটগুলো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্রাণ সরবরাহের সময় টোঙ্গার কোভিডমুক্ত অবস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করবে তারা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টোঙ্গায় সুনামি: জরুরি সরবরাহের জন্য জোর প্রস্তুতি

আপডেট সময় : ১২:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :প্রশান্ত মহাসাগরের একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ও পরবর্তী সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত টোঙ্গায় জরুরি সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। দ্বীপপুঞ্জটির প্রধান বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে আগ্নেয়গিরির ছাই সরাতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে বেশ কয়েকটি দল। এসব দলের প্রায় ২০০ জন সদস্য বেলচা ও ঠেলাগাড়ি নিয়ে অনবরত ছাই সরিয়ে যাচ্ছে। রানওয়েটি পরিষ্কার হলে খাবার ও পানীয় জল নিয়ে ফ্লাইটগুলো সেখানে নামতে পারবে।
গত শনিবার হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা-হা’আপেই আগ্নেয়গিরিতে প্রচ- বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। বিস্ফোরণের পর একটি প্রবল শকওয়েভ পুরো প্রশান্ত মহাসাগারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় ১৫ মিটার উঁচু ঢেউ নিকটবর্তী টোঙ্গার দ্বীপগুলোতে আছড়ে পড়ে। কৃত্রিম উপগ্রহ ও বিমান থেকে তোলা ছবিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া গেছে। বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। ঘন ছাইয়ের স্তরে ছেয়ে গেছে বিশাল এলাকা।
এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেলেও হতাহাতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে চার জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিন জন স্থানীয় ও একজন ব্রিটিশ নাগরিক বলে জানিয়েছে বিবিসি। অগ্ন্যুৎপাতের সময় গ্যাস, ধোঁয়া ও ঘন ছাইয়ের কু-ুলি আকাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে যায়। টোঙ্গার সরকার এই অগ্ন্যুৎপাতকে ‘নজিরবিহীন বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেছে। এ ঘটনার পর সেখানে জাহাজ পাঠিয়েছে প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। টোঙ্গার স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে জাতিসংঘের আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে ছাই পরিষ্কার করার কাজ চলছে, কিন্তু যা ভাবা হয়েছিল এটি তার চেয়ে বেশি কঠিন হচ্ছে, তারপরও ভালো অগ্রগতি হয়েছে এবং ফ্লাইট চলাচল শিগগিরই শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি জোনাথন ভাইচ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এটি চালু করা যাবে (মঙ্গলবার), কিন্তু এটি এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি কারণ আরও ছাই এসে পড়ছে।” ভাইচ নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্রুত সাড়ার প্রশংসা করেছেন। দেশ দু’টি তাদের নৌবাহিনীর জাহাজের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহের কাজ করছে আর এসব জাহাজে সাগরের পানি বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে আর এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, জাহাজগুলো ‘আমাদের জন্য প্রচুর পানি নিয়ে ও স্যানিটেশনের রসদ’ নিয়ে আসছে। দ্বীপগুলোর পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
নিউ জিল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিনি হেনার বিবিসিকে বলেছেন, সম্প্রতি তারা টোঙ্গায় দুটি নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছেন যেগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। “টোঙ্গায় যেতে তিন থেকে চার দিন লাগবে। দু’টি জাহাজেই প্রচুর পানি, খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রি আছে,” বলেছেন তিনি।
সাগরের নিচ দিয়ে যাওয়া একটি ক্যাবলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত ছিল টোঙ্গা। কিন্তু অগ্ন্যুৎপাতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্বীপপুঞ্জটির সঙ্গে বাকি বিশ্বের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
প্রবাসী টোঙ্গানরা দেশে থাকা স্বজনদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলেও যোগাযোগ করতে না পেরে খবরের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। গত মঙ্গলবার টোঙ্গার সরকার জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে আছে তবে স্থানীয় কিছু টেলিফোন সেবা সচল আছে আর যোগাযোগ পুরোপুরি সচল করতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সুনামিতে ৬৫ বছর বয়সী একজন নারী, ৪৯ বছর বয়সী একজন পুরুষ ও অ্যাঞ্জেলা গ্লোভার নামের একজন ব্রিটিশ নারী মারা গেছেন। আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং চতুর্থ আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে।
প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপুর বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে পানি সরবরাহ ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ আছে আর জাহাজ চলাচলের রুটগুলো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্রাণ সরবরাহের সময় টোঙ্গার কোভিডমুক্ত অবস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করবে তারা।