ঢাকা ১০:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

টোকিও অলিম্পিকস ২০২০-এ নজর কেড়েছে যে প্রযুক্তিগুলো

  • আপডেট সময় : ১২:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অগাস্ট ২০২১
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে ‘টোকিও ২০২০ অলিম্পিক গেমস’-এর নাম আলাদা করে লেখা থাকবে বিভিন্ন কারণে। প্রথমত, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের প্রতিযোগিতা পিছিয়ে এসেছে ২০২১ সালে। একই কারণে সবগুলো ইভেন্ট ও স্টেডিয়াম ছিল দর্শকশূন্য। কিন্তু এই সব জটিলতার মধ্যে আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে এর আয়োজন থেকে উদযাপনের সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার।
টোকিও অলিম্পিকস শুরু হওয়ার আগেই আয়োজকরা বলেছিলেন, প্রযুক্তির হিসেবে ইতিহাসের সবচেয়ে আধুনিক অলিম্পিক গেইমস হবে এটি। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন আয়োজকরা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নির্ভর রোবট, অত্যাধুনিক ট্র্যাক, থ্রিডি অ্যাথলেট ট্র্যাকিং আর অলিম্পিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (ওবিএস) মিলিয়ে– আনকোড়া নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উপস্থিতি ছিল সবখানেই।
এআই আর রোবোটিক্স ছিল সবখানে : অ্যাথলেটদের স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে মাঠের সহকারী– টোকিও অলিম্পিকসের সবখানেই চোখে পড়েছে এআই নির্ভর রোবটের উপস্থিতি। ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরার প্রযুক্তির ব্যবহারেও বড় ভূমিকা রেখেছে রোবটগুলো। এর ফলে অলিম্পিকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব কর্মীর সংখ্যা ছিলো একদিকে কম, অন্যদিকে একজন মানব কর্মীর পক্ষে একসঙ্গে অনেকগুলো দায়িত্ব পালন সম্ভব না হলেও রোবটের ব্যবহারের ফলে সহজ করে আনা গেছে জটিল কার্যপ্রণালি।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য রোবটগুলো বানিয়েছে টয়োটা। মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে রোবটগুলো। যেমন, বর্শা নিক্ষেপ প্রতিযোগিতার সময় ছুঁড়ে মারা বর্শা কম সময়ে সংগ্রহ করার সবচেয়ে সহজ পথ খুঁজতে এআই-এর উপর নির্ভর করেছে ‘সেলফ-ডাইভিং’ রোবটগুলো। এ ছাড়াও, মানব কর্মী ও দর্শকদের সহযোগিতা করার জন্যও আলাদা রোবট বানিয়েছিল টয়োটা।
১১ হাজার অ্যাথলেটের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো ৪৪ হেক্টর আয়তনের অলিম্পিক ভিলেজে। ভিলেজে অ্যাথলেটদের পৌঁছে দেওয়া আর চলাফেলার সাহায্য করেছে টয়োটার তৈরি চালকবিহীন ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি)’।
২০২০একবারে ২০ জন অ্যাথলেট পরিবহন করতে পারে ওই ইভিগুলো। তবে, জাপানের টাইমআউট ম্যাগাজিন বলছে, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হলেও অ্যাথলেটদের সহযোগিতা করার জন্য একজন অনবোর্ড অপরেটরও থাকতেন ইভিগুলোয়।
ইনটেল-এর থ্রিডি ট্র্যাকিং প্রযুক্তি : অলিম্পিক আয়োজকদের চিপ জায়ান্ট ইনটেল প্রযুক্তি সহযোগিতা দিচ্ছে বেশ লম্বা সময় ধরেই। টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর ক্ষেত্রে ইনটেলের যে প্রযুক্তিটি সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেটি হলো ‘থ্রিডি অ্যাথলেট ট্র্যাকিং (থ্রিডিএটি)’। থ্রিডিএটি-কে ‘এই শ্রেণির মধ্যে সর্বপ্রথম’ বলে আখ্যা দিয়েছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
নির্দিষ্ট ট্র্যাক ও ফিল্ড ইভেন্টে দর্শকদের নতুন প্রজন্মের গ্রাফিক্স ওভারলে ভিজুয়ালাইজেশন সুবিধা দিয়েছে এই প্রযুক্তি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার ভিশন আর ইনটেল-এর জিওন (ঢবড়হ) প্রসেসর ব্যবহার করে প্রতিযোগিতা চলার সময়েই মাঠে অ্যাথলেটদের ডেটা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে পারে এই প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রচলিত ভিডিও ডেটা ব্যবহার করে এটি, বিশেষায়িত স্যুট বা আলাদা সেন্সর প্রয়োজন পড়ে না এর।
থ্রিডিএটি আর এআই নির্ভর পারফর্মেন্স ট্র্যাকিং প্রযুক্তির বদৌলতে একদিকে অ্যাথলেটদের অনুশীলন ব্যবস্থা সহজ হয়েছে, কমেছে ইনজুরির ঝুঁকি; অন্যদিকে অলিম্পিকের প্রচার ব্যবস্থা ও দর্শকদের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা পেয়েছে নতুন মাত্রা।
প্রচার প্রযুক্তিতে ওবিএস বিপ্লব : টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর বেশিরভাগ ইভেন্টেই সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি দর্শকরা। কিন্তু অলিম্পিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেম বা ওবিএস-এর বদৌলতে আল্টা-হাই ডেফিনিশন হাই ডাইনামিক রেঞ্জ-এর ভিডিও দেখতে পেরেছেন দর্শকরা। দর্শকদের সশরীরে খেলার দেখার অনুভূতি দিতে আরও আছে তিন হাজার ছয়শ’ মাইক্রোফোন থেকে সংগ্রহ করা অডিও। ওবিএস-এর অংশ হিসেবে যোগ হয়েছে ভার্চুয়াল থ্রিডি গ্রাফিক্স ফিচার। ‘স্পোর্টস ক্লাইম্বিং’-এর জন্য ওবিএস আরোহনের দেয়ালটির একটি থ্রিডি মডেল তৈরি করেছিল। দেয়ালের বিভিন্ন অংশের প্রতিবন্ধকতার ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ দিয়ে আরোহনকারীরা কীভাবে ওই জায়গাগুলো পার হবেন বা হয়েছেন, স্ক্রিনে সেই ডেটা দেখাতে পারে এই প্রযুক্তি।
২০২০এ ছাড়াও বিভিন্ন খেলায় বড় ভূমিকা রেখেছে ইনটেল-এর তৈরি মাল্টি-ক্যামেরা রিপ্লে সিস্টেম। জিমন্যাস্টিক্স এবং স্কেটবোর্ডিংয়ের মতো খেলাগুলোর ভেন্যুর নির্দিষ্ট স্থানে দায়িত্বে ছিল এআই নির্ভর রোবট। ওই রোবটগুলোর উপরে স্থাপন করা হয়েছিলো ফোরকে ক্যামেরা। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজের উপর এআই প্রয়োগ করে অ্যাথলেটদের পারফর্মেন্স-এর ভার্চুয়াল ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে ওই রিপ্লে সিস্টেম। যার ফলাফল অনেকটা ‘মেট্রিক্স’ সিনেমার অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মতো বলে মন্তব্য করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রিক সাইট প্রিস্কাউটার।
অন্যদিকে চীনের প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সঙ্গে জোট বেঁধে ওবিএস ক্লাউড সেবা চালু করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ওবিএস-এর ব্রডকাস্টিং প্রযুক্তির অংশ হিসেবে আরও আছে একশ’ দশ ঘণ্টার লাইভ স্টেরিওস্কোপিক এবং প্যানোরামা ভিডিও ফুটেজ। এর পাশাপাশি ফাইভজি সংযোগ, এআই নির্ভর ইমেজ রিকগনিশন এবং স্পিচ-টু-টেক্সট প্রযুক্তিও আছে ওবিএস-এর অংশ হিসেবে।
আলোচনায় মোন্ডোর ট্র্যঠশ : ১৯৪৮ সালে থেকে অলিম্পিক গেইমসের ট্র্যাক বানায় মোন্ডো। সব মিলিয়ে ১২টি অলিম্পিকের জন্য ট্র্যাক বানিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। তবে টোকিও অলিম্পিকের জন্য মোন্ডার তৈরি ট্র্যাক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দৌড়বিদদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অলিম্পিক ট্র্যাকের উপরের স্তরটি তৈরি করা হয়েছে তৃমাত্রিক রাবার কণিকা নিয়ে। এর ফলে গতি অর্জনে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন দৌড়বিদরা। ‘মনে হয় যেন আমি মেঘের উপর হাঁটছি’, মোন্ডোট্র্যাক নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একশ’ মিটার স্প্রিন্টার রনি বেকার। ‘ট্র্যাকটা আসলেই খুব সুন্দর। আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে আরামদায়ক ট্র্যাক এটি’–যোগ করেন তিনি।
অলিম্পিকের ট্র্যাক নিয়ে নিজের সাইটে মোন্ডো বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো ‘অ্যাথলেটদের গতি ও পারফর্মেন্স বাড়ানো’। ট্র্যাকের উপরের স্তরে রাবার কণিকা ব্যবহার করা হলেও নিচের স্তরটি ফাঁপা। ফাঁপা স্তরটি বাতাস দিয়ে পূরণ করায় দৌড়ানোর সময় ‘বাউন্সি’ অনুভূতি হয় এতে। ফলে দৌঁড়ানোর অনুভূতি হয় আরামদায়ক, মেলে বাড়তি গতি।
মানসিক প্রস্তুতি আর অনুশীলনেও ছিল প্রযুক্তির ব্যবহার : অন্যদিকে দলভিত্তিক বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহারও নজরে পড়েছে এবারের অলিম্পিকে। ইইজি সেন্সরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাথলেটদের মস্তিষ্ক তরঙ্গ মেপেছে যুক্তরাষ্ট্র। নজর রাখা হয়েছে কীভাবে মস্তিষ্ক তরঙ্গের পরিবর্তন তাদের পারফর্মেন্সের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তার উপর। অ্যাথলেটরা বেশি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারলে সেক্ষেত্রে ‘মেডিটশন অ্যাপ’ও কাজে লেগেছে তাদের শান্ত করতে। মার্কিন দল ‘ফোকাস কাম’ নামের নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে প্রিস্কাউটার। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে ‘নিউরাল পাথওয়ে’ ও ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ নির্মাণের মাধ্যমে মানসিকভাবে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত করতে পারতেন বলে জানিয়েছে সাইটটি।
ইউনিফর্ম : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতার দলের সুইমস্যুট তৈরি হয়েছে হাঙ্গরের ত্বক অনুকরণে। ‘ফাস্টস্কিন এলজেডআর পিওর ভ্যালোর’ স্যুটগুলোর নকশা করা হয়েছে সাঁতারের সময় বিপরীতমুখী টানের হার কমানোর লক্ষ্য নিয়ে। এ ছাড়াও স্থানভেদে প্রয়োজন অনুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা আছে ওই স্যুটের।
প্রযুক্তিসুবিধা পেয়েছে চীনের ভারোত্তলন এবং জিমন্যাস্টিক্স দলও। অ্যান্টা স্পোর্টস-এর তৈরি বিশেষ জুতো ব্যবহার করে প্রতিযোগিতার সময় নিজের ভারসাম্য রক্ষায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে দেশটির ভারোত্তোলন দল। অন্যদিকে চীনের রেসলিং দলের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ‘অ্যান্টি-গ্র্যাব ফেব্রিক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রতিযোগিতার সময় বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণ কমিয়ে আনতে জিমন্যাস্টদের ইউনিফর্মের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকমের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রিস্কাউটার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টোকিও অলিম্পিকস ২০২০-এ নজর কেড়েছে যে প্রযুক্তিগুলো

আপডেট সময় : ১২:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অগাস্ট ২০২১

প্রযুক্তি ডেস্ক : অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে ‘টোকিও ২০২০ অলিম্পিক গেমস’-এর নাম আলাদা করে লেখা থাকবে বিভিন্ন কারণে। প্রথমত, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের প্রতিযোগিতা পিছিয়ে এসেছে ২০২১ সালে। একই কারণে সবগুলো ইভেন্ট ও স্টেডিয়াম ছিল দর্শকশূন্য। কিন্তু এই সব জটিলতার মধ্যে আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে এর আয়োজন থেকে উদযাপনের সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার।
টোকিও অলিম্পিকস শুরু হওয়ার আগেই আয়োজকরা বলেছিলেন, প্রযুক্তির হিসেবে ইতিহাসের সবচেয়ে আধুনিক অলিম্পিক গেইমস হবে এটি। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন আয়োজকরা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নির্ভর রোবট, অত্যাধুনিক ট্র্যাক, থ্রিডি অ্যাথলেট ট্র্যাকিং আর অলিম্পিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (ওবিএস) মিলিয়ে– আনকোড়া নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উপস্থিতি ছিল সবখানেই।
এআই আর রোবোটিক্স ছিল সবখানে : অ্যাথলেটদের স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে মাঠের সহকারী– টোকিও অলিম্পিকসের সবখানেই চোখে পড়েছে এআই নির্ভর রোবটের উপস্থিতি। ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরার প্রযুক্তির ব্যবহারেও বড় ভূমিকা রেখেছে রোবটগুলো। এর ফলে অলিম্পিকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব কর্মীর সংখ্যা ছিলো একদিকে কম, অন্যদিকে একজন মানব কর্মীর পক্ষে একসঙ্গে অনেকগুলো দায়িত্ব পালন সম্ভব না হলেও রোবটের ব্যবহারের ফলে সহজ করে আনা গেছে জটিল কার্যপ্রণালি।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য রোবটগুলো বানিয়েছে টয়োটা। মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে রোবটগুলো। যেমন, বর্শা নিক্ষেপ প্রতিযোগিতার সময় ছুঁড়ে মারা বর্শা কম সময়ে সংগ্রহ করার সবচেয়ে সহজ পথ খুঁজতে এআই-এর উপর নির্ভর করেছে ‘সেলফ-ডাইভিং’ রোবটগুলো। এ ছাড়াও, মানব কর্মী ও দর্শকদের সহযোগিতা করার জন্যও আলাদা রোবট বানিয়েছিল টয়োটা।
১১ হাজার অ্যাথলেটের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো ৪৪ হেক্টর আয়তনের অলিম্পিক ভিলেজে। ভিলেজে অ্যাথলেটদের পৌঁছে দেওয়া আর চলাফেলার সাহায্য করেছে টয়োটার তৈরি চালকবিহীন ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি)’।
২০২০একবারে ২০ জন অ্যাথলেট পরিবহন করতে পারে ওই ইভিগুলো। তবে, জাপানের টাইমআউট ম্যাগাজিন বলছে, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হলেও অ্যাথলেটদের সহযোগিতা করার জন্য একজন অনবোর্ড অপরেটরও থাকতেন ইভিগুলোয়।
ইনটেল-এর থ্রিডি ট্র্যাকিং প্রযুক্তি : অলিম্পিক আয়োজকদের চিপ জায়ান্ট ইনটেল প্রযুক্তি সহযোগিতা দিচ্ছে বেশ লম্বা সময় ধরেই। টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর ক্ষেত্রে ইনটেলের যে প্রযুক্তিটি সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেটি হলো ‘থ্রিডি অ্যাথলেট ট্র্যাকিং (থ্রিডিএটি)’। থ্রিডিএটি-কে ‘এই শ্রেণির মধ্যে সর্বপ্রথম’ বলে আখ্যা দিয়েছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
নির্দিষ্ট ট্র্যাক ও ফিল্ড ইভেন্টে দর্শকদের নতুন প্রজন্মের গ্রাফিক্স ওভারলে ভিজুয়ালাইজেশন সুবিধা দিয়েছে এই প্রযুক্তি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার ভিশন আর ইনটেল-এর জিওন (ঢবড়হ) প্রসেসর ব্যবহার করে প্রতিযোগিতা চলার সময়েই মাঠে অ্যাথলেটদের ডেটা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে পারে এই প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রচলিত ভিডিও ডেটা ব্যবহার করে এটি, বিশেষায়িত স্যুট বা আলাদা সেন্সর প্রয়োজন পড়ে না এর।
থ্রিডিএটি আর এআই নির্ভর পারফর্মেন্স ট্র্যাকিং প্রযুক্তির বদৌলতে একদিকে অ্যাথলেটদের অনুশীলন ব্যবস্থা সহজ হয়েছে, কমেছে ইনজুরির ঝুঁকি; অন্যদিকে অলিম্পিকের প্রচার ব্যবস্থা ও দর্শকদের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা পেয়েছে নতুন মাত্রা।
প্রচার প্রযুক্তিতে ওবিএস বিপ্লব : টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর বেশিরভাগ ইভেন্টেই সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি দর্শকরা। কিন্তু অলিম্পিক ব্রডকাস্টিং সিস্টেম বা ওবিএস-এর বদৌলতে আল্টা-হাই ডেফিনিশন হাই ডাইনামিক রেঞ্জ-এর ভিডিও দেখতে পেরেছেন দর্শকরা। দর্শকদের সশরীরে খেলার দেখার অনুভূতি দিতে আরও আছে তিন হাজার ছয়শ’ মাইক্রোফোন থেকে সংগ্রহ করা অডিও। ওবিএস-এর অংশ হিসেবে যোগ হয়েছে ভার্চুয়াল থ্রিডি গ্রাফিক্স ফিচার। ‘স্পোর্টস ক্লাইম্বিং’-এর জন্য ওবিএস আরোহনের দেয়ালটির একটি থ্রিডি মডেল তৈরি করেছিল। দেয়ালের বিভিন্ন অংশের প্রতিবন্ধকতার ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ দিয়ে আরোহনকারীরা কীভাবে ওই জায়গাগুলো পার হবেন বা হয়েছেন, স্ক্রিনে সেই ডেটা দেখাতে পারে এই প্রযুক্তি।
২০২০এ ছাড়াও বিভিন্ন খেলায় বড় ভূমিকা রেখেছে ইনটেল-এর তৈরি মাল্টি-ক্যামেরা রিপ্লে সিস্টেম। জিমন্যাস্টিক্স এবং স্কেটবোর্ডিংয়ের মতো খেলাগুলোর ভেন্যুর নির্দিষ্ট স্থানে দায়িত্বে ছিল এআই নির্ভর রোবট। ওই রোবটগুলোর উপরে স্থাপন করা হয়েছিলো ফোরকে ক্যামেরা। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজের উপর এআই প্রয়োগ করে অ্যাথলেটদের পারফর্মেন্স-এর ভার্চুয়াল ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে ওই রিপ্লে সিস্টেম। যার ফলাফল অনেকটা ‘মেট্রিক্স’ সিনেমার অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মতো বলে মন্তব্য করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রিক সাইট প্রিস্কাউটার।
অন্যদিকে চীনের প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সঙ্গে জোট বেঁধে ওবিএস ক্লাউড সেবা চালু করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ওবিএস-এর ব্রডকাস্টিং প্রযুক্তির অংশ হিসেবে আরও আছে একশ’ দশ ঘণ্টার লাইভ স্টেরিওস্কোপিক এবং প্যানোরামা ভিডিও ফুটেজ। এর পাশাপাশি ফাইভজি সংযোগ, এআই নির্ভর ইমেজ রিকগনিশন এবং স্পিচ-টু-টেক্সট প্রযুক্তিও আছে ওবিএস-এর অংশ হিসেবে।
আলোচনায় মোন্ডোর ট্র্যঠশ : ১৯৪৮ সালে থেকে অলিম্পিক গেইমসের ট্র্যাক বানায় মোন্ডো। সব মিলিয়ে ১২টি অলিম্পিকের জন্য ট্র্যাক বানিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। তবে টোকিও অলিম্পিকের জন্য মোন্ডার তৈরি ট্র্যাক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দৌড়বিদদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অলিম্পিক ট্র্যাকের উপরের স্তরটি তৈরি করা হয়েছে তৃমাত্রিক রাবার কণিকা নিয়ে। এর ফলে গতি অর্জনে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন দৌড়বিদরা। ‘মনে হয় যেন আমি মেঘের উপর হাঁটছি’, মোন্ডোট্র্যাক নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একশ’ মিটার স্প্রিন্টার রনি বেকার। ‘ট্র্যাকটা আসলেই খুব সুন্দর। আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে আরামদায়ক ট্র্যাক এটি’–যোগ করেন তিনি।
অলিম্পিকের ট্র্যাক নিয়ে নিজের সাইটে মোন্ডো বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো ‘অ্যাথলেটদের গতি ও পারফর্মেন্স বাড়ানো’। ট্র্যাকের উপরের স্তরে রাবার কণিকা ব্যবহার করা হলেও নিচের স্তরটি ফাঁপা। ফাঁপা স্তরটি বাতাস দিয়ে পূরণ করায় দৌড়ানোর সময় ‘বাউন্সি’ অনুভূতি হয় এতে। ফলে দৌঁড়ানোর অনুভূতি হয় আরামদায়ক, মেলে বাড়তি গতি।
মানসিক প্রস্তুতি আর অনুশীলনেও ছিল প্রযুক্তির ব্যবহার : অন্যদিকে দলভিত্তিক বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহারও নজরে পড়েছে এবারের অলিম্পিকে। ইইজি সেন্সরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাথলেটদের মস্তিষ্ক তরঙ্গ মেপেছে যুক্তরাষ্ট্র। নজর রাখা হয়েছে কীভাবে মস্তিষ্ক তরঙ্গের পরিবর্তন তাদের পারফর্মেন্সের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তার উপর। অ্যাথলেটরা বেশি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারলে সেক্ষেত্রে ‘মেডিটশন অ্যাপ’ও কাজে লেগেছে তাদের শান্ত করতে। মার্কিন দল ‘ফোকাস কাম’ নামের নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে প্রিস্কাউটার। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে ‘নিউরাল পাথওয়ে’ ও ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ নির্মাণের মাধ্যমে মানসিকভাবে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত করতে পারতেন বলে জানিয়েছে সাইটটি।
ইউনিফর্ম : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতার দলের সুইমস্যুট তৈরি হয়েছে হাঙ্গরের ত্বক অনুকরণে। ‘ফাস্টস্কিন এলজেডআর পিওর ভ্যালোর’ স্যুটগুলোর নকশা করা হয়েছে সাঁতারের সময় বিপরীতমুখী টানের হার কমানোর লক্ষ্য নিয়ে। এ ছাড়াও স্থানভেদে প্রয়োজন অনুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা আছে ওই স্যুটের।
প্রযুক্তিসুবিধা পেয়েছে চীনের ভারোত্তলন এবং জিমন্যাস্টিক্স দলও। অ্যান্টা স্পোর্টস-এর তৈরি বিশেষ জুতো ব্যবহার করে প্রতিযোগিতার সময় নিজের ভারসাম্য রক্ষায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে দেশটির ভারোত্তোলন দল। অন্যদিকে চীনের রেসলিং দলের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ‘অ্যান্টি-গ্র্যাব ফেব্রিক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রতিযোগিতার সময় বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণ কমিয়ে আনতে জিমন্যাস্টদের ইউনিফর্মের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকমের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রিস্কাউটার।