ঢাকা ১০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

টেলিগ্রামে’ অপরাধের আন্ডারগ্রাউন্ড বাজার

  • আপডেট সময় : ০৫:০১:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন শক্তিশালী অপরাধ চক্র ব্যাপকভাবে মেসেজিং পরিষেবা অ্যাপ টেলিগ্রাম ব্যবহার করে, যা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে বড় আকারের অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনার সুযোগ তৈরি করছে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে টেলিগ্রামে এই আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের কথা বলেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের রিপোর্ট আলোচিত এ অ্যাপের বিরুদ্ধে আরোপিত সর্বশেষ অভিযোগেরই প্রতিনিধিত্ব করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সম্প্রতি ফ্রান্সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলতে দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রাপ্তার হয়েছিলেন টেলিগ্রাম প্রধান পাভেল দুরভ। ক্রেডিট কার্ডের বিশদ বিবরণ, পাসওয়ার্ড, ব্রাউজারের ইতিহাস, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মেলা চোরাই তথ্য টেলিগ্রামে ব্যপক আকারে খোলাখুলিভাবেই লেনদেন হয়। এর বিপরীতে এসবের ওপর অ্যাপটির নজরদারি সামান্যই বলে উল্লেখ রয়েছে জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)-এর রিপোর্টে।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, ডেটা চুরির ম্যালওয়্যার, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি ডিপফেইক সফটওয়্যার, সাইবার অপরাধের জন্য ব্যবহৃত টুল বিক্রির পাশাপাশি এ অ্যাপের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলো অর্থ পাচার পরিষেবাও দিয়ে থাকে।
“আমরা প্রতিদিন বিদেশ থেকে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের চোরাই স্ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করি।” – প্রতিবেদনে চীনা ভাষায় এমন এক বিজ্ঞাপনের উদ্ধৃতিও রয়েছে। “আন্ডারগ্রাউন্ড ডেটা মার্কেট টেলিগ্রামে যুক্ত থাকার জোরালো প্রমাণ রয়েছে এবং বিক্রেতারা সক্রিয়ভাবেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংগঠিত অপরাধ চক্রকে টার্গেট করতে চাইছে।”-আরও বলা হয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টে। সারা বিশ্বে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কয়েকশ কোটি ডলারের এক অপরাধ হাব হয়ে উঠছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এর মধ্যে অনেক চীনা সিন্ডিকেট রয়েছে যা গোপনে পাচার হয়ে আসা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়। এরা বছরে দুই হাজার সাতশ ৪০ কোটি ডলার থেকে তিন হাজার ছয়শো ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয় করে বলে জানিয়েছে ইউএনওডিসি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ইউএনওডিসির উপ-প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেছেন, অ্যাপটিতে অপরাধীদের জন্য সহজে বিচরণের পরিবেশ রয়েছে।
“ব্যবহারকারীদের জন্য এর অর্থ হল, তাদের তথ্য বিভিন্ন কেলেঙ্কারী বা অপরাধমূলক কার্যকলাপে ব্যবহারের ঝুঁকি আগের তুলনায় বেড়েছে।”-রয়টার্সকে বলেন তিনি।
এ অঞ্চলে অপরাধ চক্রগুলোর বিশাল আয়ের কারণেই তাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। ফলে, তারা তাদের কর্মকাণ্ডে নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও প্রযুক্তি যেমন ম্যালওয়্যার, জেনারেটিভ এআই, ডিপফেইক যোগ করছে। ইউএনওডিসি বলেছে, সংস্থাটি ১০টির বেশি ডিপফেইক সফটওয়্যার সেবাদাতাকে চিহ্নিত করেছে, যারা “বিশেষভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার অপরাধীদেরই তাদের গ্রাহক বানায়।” এ ছাড়া, এশিয়ার অন্য জায়গায়, যেমন দক্ষিণ কোরিয়াকে ডিপফেইক পর্নোগ্রাফির অন্যতম লক্ষ্য বলে অনুমান রয়েছে। সেখানে দেশটির পুলিশ টেলিগ্রাম নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে। এর মাধ্যমে পরিষেবাটি অনলাইন যৌন অপরাধে সহায়তা করে কিনা তা খতিয়ে দেখবে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, গত মাসে রয়টার্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একজন হ্যাকার টেলিগ্রামে চ্যাটবট ব্যবহার করে শীর্ষ ভারতীয় বীমা কোম্পানি স্টার হেলথ-এর তথ্য ফাঁস করেছে। কোম্পানিটি এ নিয়ে এ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। সেই চ্যাটবট ব্যবহার করে, বিভিন্ন পলিসি ও বীমা দাবির ফাইল ডাউনলোড করতে পেরেছিল রয়টার্স, তথ্যের মধ্যে ছিল ফোন নম্বর, ঠিকানা, ট্যাক্সের বিবরণ, আইডি কার্ডের কপি, পরীক্ষার ফলাফল ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টেলিগ্রামে’ অপরাধের আন্ডারগ্রাউন্ড বাজার

আপডেট সময় : ০৫:০১:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

প্রযুক্তি ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন শক্তিশালী অপরাধ চক্র ব্যাপকভাবে মেসেজিং পরিষেবা অ্যাপ টেলিগ্রাম ব্যবহার করে, যা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে বড় আকারের অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনার সুযোগ তৈরি করছে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে টেলিগ্রামে এই আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের কথা বলেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের রিপোর্ট আলোচিত এ অ্যাপের বিরুদ্ধে আরোপিত সর্বশেষ অভিযোগেরই প্রতিনিধিত্ব করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সম্প্রতি ফ্রান্সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলতে দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত ও গ্রাপ্তার হয়েছিলেন টেলিগ্রাম প্রধান পাভেল দুরভ। ক্রেডিট কার্ডের বিশদ বিবরণ, পাসওয়ার্ড, ব্রাউজারের ইতিহাস, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মেলা চোরাই তথ্য টেলিগ্রামে ব্যপক আকারে খোলাখুলিভাবেই লেনদেন হয়। এর বিপরীতে এসবের ওপর অ্যাপটির নজরদারি সামান্যই বলে উল্লেখ রয়েছে জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)-এর রিপোর্টে।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, ডেটা চুরির ম্যালওয়্যার, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি ডিপফেইক সফটওয়্যার, সাইবার অপরাধের জন্য ব্যবহৃত টুল বিক্রির পাশাপাশি এ অ্যাপের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলো অর্থ পাচার পরিষেবাও দিয়ে থাকে।
“আমরা প্রতিদিন বিদেশ থেকে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের চোরাই স্ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করি।” – প্রতিবেদনে চীনা ভাষায় এমন এক বিজ্ঞাপনের উদ্ধৃতিও রয়েছে। “আন্ডারগ্রাউন্ড ডেটা মার্কেট টেলিগ্রামে যুক্ত থাকার জোরালো প্রমাণ রয়েছে এবং বিক্রেতারা সক্রিয়ভাবেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংগঠিত অপরাধ চক্রকে টার্গেট করতে চাইছে।”-আরও বলা হয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টে। সারা বিশ্বে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কয়েকশ কোটি ডলারের এক অপরাধ হাব হয়ে উঠছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এর মধ্যে অনেক চীনা সিন্ডিকেট রয়েছে যা গোপনে পাচার হয়ে আসা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়। এরা বছরে দুই হাজার সাতশ ৪০ কোটি ডলার থেকে তিন হাজার ছয়শো ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয় করে বলে জানিয়েছে ইউএনওডিসি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ইউএনওডিসির উপ-প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেছেন, অ্যাপটিতে অপরাধীদের জন্য সহজে বিচরণের পরিবেশ রয়েছে।
“ব্যবহারকারীদের জন্য এর অর্থ হল, তাদের তথ্য বিভিন্ন কেলেঙ্কারী বা অপরাধমূলক কার্যকলাপে ব্যবহারের ঝুঁকি আগের তুলনায় বেড়েছে।”-রয়টার্সকে বলেন তিনি।
এ অঞ্চলে অপরাধ চক্রগুলোর বিশাল আয়ের কারণেই তাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। ফলে, তারা তাদের কর্মকাণ্ডে নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও প্রযুক্তি যেমন ম্যালওয়্যার, জেনারেটিভ এআই, ডিপফেইক যোগ করছে। ইউএনওডিসি বলেছে, সংস্থাটি ১০টির বেশি ডিপফেইক সফটওয়্যার সেবাদাতাকে চিহ্নিত করেছে, যারা “বিশেষভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার অপরাধীদেরই তাদের গ্রাহক বানায়।” এ ছাড়া, এশিয়ার অন্য জায়গায়, যেমন দক্ষিণ কোরিয়াকে ডিপফেইক পর্নোগ্রাফির অন্যতম লক্ষ্য বলে অনুমান রয়েছে। সেখানে দেশটির পুলিশ টেলিগ্রাম নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে। এর মাধ্যমে পরিষেবাটি অনলাইন যৌন অপরাধে সহায়তা করে কিনা তা খতিয়ে দেখবে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, গত মাসে রয়টার্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একজন হ্যাকার টেলিগ্রামে চ্যাটবট ব্যবহার করে শীর্ষ ভারতীয় বীমা কোম্পানি স্টার হেলথ-এর তথ্য ফাঁস করেছে। কোম্পানিটি এ নিয়ে এ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। সেই চ্যাটবট ব্যবহার করে, বিভিন্ন পলিসি ও বীমা দাবির ফাইল ডাউনলোড করতে পেরেছিল রয়টার্স, তথ্যের মধ্যে ছিল ফোন নম্বর, ঠিকানা, ট্যাক্সের বিবরণ, আইডি কার্ডের কপি, পরীক্ষার ফলাফল ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য।