নিজস্ব প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেটি তিনি তাঁর আইনজীবীর হাতে দিয়েছেন।
এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজি সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। পুলিশের হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।
সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আইনজীবী প্রাণনাথ হাজি সেলিমের দেওয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে বলেন, তাঁর মক্কেলের জাহাজের ব্যবসা রয়েছে। তিনি কারাগারে ডিভিশনও পেয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির অংশ কেটে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেটি তিনি আজ (সোমবার) তাঁকে দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘হাজি সেলিমরা কখনো ভাবেননি, তাঁদের জীবনের এমন পরিণতি হবে। কারাগারে আসার আগেও হাজি সেলিম মঞ্চে নেচেছেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন, কারাগারে আসার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ধমকাচ্ছেন, চিৎকার করছেন।’
টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আদালতে হইচইয়ের পর হাজি সেলিম তাঁর আইনজীবীর কাছে পুত্রবধূর কথা জানতে চান। পুত্রবধূ না আসার কারণ আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় আইনজীবী পুত্রবধূর লেখা একটি চিঠি হাজি সেলিমকে দেখান। আইনজীবী সেই চিঠি পড়ে শোনান। এ বিষয়ে আইনজীবী প্রাণনাথ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পুত্রবধূর দেখা নেই। সে কারণে তিনি একটি লেখা পাঠিয়েছেন।
আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা শেষ করে হাজি সেলিম কাঠগড়ার উত্তর পাশে এগিয়ে যান। সেখান থেকে আদালতের বারান্দার অংশ স্পষ্ট করে দেখা যায়। হাজি সেলিম আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ হাজি সেলিমকে দেখে কাঁদতে থাকেন। হাজি সেলিমও কাঁদতে থাকেন। তিনি সবার উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু দেন।
পরে সকাল ১০ টা ৪১ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। তখন শাহবাগ থানায় দায়ের করা মনির হত্যা মামলায় হাজি সেলিমকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানি শেষে সিঁড়ি থেকে নামানোর সময় হাজি সেলিম আরেক দফা পুলিশ সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
কারাগারে থাকা নিয়ে প্রশ্ন: এর আগে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে হাজতখানা থেকে হাজি সেলিমকে বের করা হয়। তখন তিনি বিমর্ষ ছিলেন। আদালতের নিচতলা থেকে দোতলায় নেওয়ার সময় হাজি সেলিম বিরক্তি প্রকাশ করেন।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পুলিশের একজন সদস্য হাজি সেলিমের হেলমেট খুলে দেন। তখন দেখা যায়, হাজি সেলিমের লম্বা সাদা চুল আর দাঁড়ি। পিপি জানান, হাজি সেলিম চুল, দাঁড়ি কাটেন না।
হাজি সেলিম আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁকে আরো কত দিন কারাগারে থাকতে হবে? ইশারায় আরো এক বছর থাকতে হবে কি না, জানতে চান। আইনজীবী প্রাণনাথ ইশারায় দুই মাস থাকতে হবে বলে জানান। এ কথা শোনার পর হাজি সেলিম হাসতে থাকেন। কোরবানির ঈদও কারাগারে কাটাতে হবে জানতে পেরে হাজি সেলিমকে কাঠগড়ার লোহার ওপরে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।