প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা নেওয়ার পর থেকেই অনেক ব্যবহারকারীরা প্ল্যাটফর্মটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তবে ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রাম নয়, যুক্ত হচ্ছেন মাস্টোডন নামের একটি সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে। ফলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু হলেও মাস্টোডনের নাম অপরিচিতই ছিল এতদিন। তবে চলতি সপ্তাহ থেকেই তরতর করে বড় হচ্ছে মাস্টোডন। মাস্টোডন ইতিমধ্যেই টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। টুইটারের স্পষ্ট বিকল্প না থাকতে পারে, তবে মাস্টোডনের ইউজার ইন্টারফেস অনেকটাই টুইটারের মতো। তবে এই প্ল্যাটফর্মটি টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো একটিমাত্র কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয় না; এটি পরিচালনা করে বিভিন্ন গ্রুপ বা ব্যক্তি। মাস্টোডন একদিকে যেমন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়, অন্যদিকে এতে নেই কোনো বিজ্ঞাপনের উৎপাতও।
মাস্টোডন-এ মোট ব্যবহারকারী ৬ লাখ ৫৫ হাজার। এরমধ্যে গত সপ্তাহেই যুক্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী। মাস্টোডন দেখতে অনেক টুইটার অ্যাকাউন্টের মতোই। এর সার্ফেসে ব্যবহারকারীরা যেকোনো পোস্টে লাইক কমেন্ট, অন্যকে অনুসরণ করাসহ পোস্ট ও রিপোস্ট করতে পারবেন। টুইটারে যেখানে ১৪০টি অক্ষর লেখা যায়, সেখানে মাস্টোডনে ৫০০ অক্ষর পর্যন্ত লেখা যায়। টুইটারের মতো ব্লু টিকেরও ঝামেলা নেই। ফলে দ্রুতই নতুন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করছে প্ল্যাটফর্মটি। বিশেষ করে টুইটারের নতুন নিয়মের কারণে যারা বের হয়ে আসছেন, তাদের কাছে ‘মাস্টোডন’ দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
প্ল্যাটফর্মটির ৬ বছরের পথ চলায় এবারেই প্রথম এতো ব্যবহারকারী যুক্ত হলো। ফলে নতুন ব্যবহারকারীদের শুভেচ্ছা জানাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে অ্যাকাউন্ট খোলার আগে একটি সার্ভার পছন্দ করে নিতে হয়। পছন্দ করা সার্ভারের উপর ভিত্তি করে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তারপর ব্যবহারকারী তাদের পছন্দগুলো জানায়। সেই পছন্দের উভর ভিত্তি করে সার্ফেসে বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শিত হয়।প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যবহারকারী যে কাউকে অনুসরণ এবং অন্যরাও তাকে অনুসরণ করতে পারবেন। ব্যবহারকারী তার পছন্দ ও অপছন্দ জানাতে পারবেন। ফলে দারুণ একটি কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায় বলে ব্যবহারকারীদের জানিয়েছে ‘মাস্টোডন’।
মাস্টোডনের প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রোচকো। নামটি দেওয়া হয়েছে হেভি মেটাল ব্যান্ড মাস্টোডনের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এটি চলে ক্রাউডফান্ডিং, অর্থাৎ মানুষের চাঁদায়। রোচকো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২৭ অক্টোবর থেকে ওইদিন পর্যন্ত মাস্টোডনের ব্যবহারকারী ২ লাখ ৩০ হাজার বেড়েছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ লাখ ৫৫ হাজার। অন্যদিকে জুলাইয়ে টুইটারের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ২৩৮ মিলিয়ন। রোচকো মাস্টোডনকে মূলত প্রকল্প হিসেবেই বানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি টুইটারের মতো বড় নয়, তবে সম্প্রতি নেটওয়ার্কটির রেকর্ড সম্প্রসারণ হয়েছে।’
টুইটার থেকে বেশ কয়েকটি বড় নাম যোগ দিয়েছে মাস্টোডনে। যেমন নভেম্বরের শুরুতেই টুইটার ছেড়ে মাস্টোডনে সাইনআপ করেছেন কমেডিয়ান ক্যাথি গ্রিফিন। অক্টোবরের শেষ দিকে যোগ দিয়েছেন সাংবাদিক মলি জং-ফাস্ট। দুজনেরই টুইটারের বিপুলসংখ্যক অনুসারী ছিল। মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণ করার পর ৩০ অক্টোবর মাস্টোডনে যোগ দেন ইউসিএলএর সহযোগী অধ্যাপক সারাহ টি. রবার্টস। তিনি চলতি বছরের শুরুর দিকে টুইটারে স্টাফ গবেষক হিসেবে কাজ করতেন। টুইটারে তার অনুসারী ছিল ২৩ হাজার। মাস্টোডনে যোগ দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রবার্টসের অনুসারীর সংখ্যা ১ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
টুইটার ছেড়ে দলে দলে যুক্ত হচ্ছেন মাস্টোডন প্ল্যাটফর্মে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ