নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি হত্যা মামলায় সেই মোটরসাইকেল চালকসহ আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় ২৭ জন গ্রেফতার হলেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— মোটরসাইকেল চালক শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু (৩৪), সুমন হোসেন (৩৫), এহতোশাম উদ্দিন চৌধুরী অপু (৩৭) ও শরিফুল ইসলাম হৃদয় (২৭)।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল ও দুটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে, এই মোটরসাইকেল ও অস্ত্র হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা প্রথমেই মূল শুটার আকাশকে গ্রেফতার করেছি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ একেএকে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় আগে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজকের পাঁচ জনসহ মোট ২৭ জন গ্রেফতার হলো।’
১৫ আগস্ট মোল্লা শামীম বেনাপোল হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করেছি।’
হত্যার নির্দেশদাতা জিসান ও মানিক, পরিকল্পনায় মুসা : ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, হত্যার নির্দেশদাতা ছিল বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিক। আর হত্যা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করে মুসা। হরুন অর রশীদ বলেন, ‘টিপুর সঙ্গে মুসার দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই মুসা এই হত্যার পরিকল্পনা করে। সে শামীমকে হত্যার দায়িত্ব দেয়। আমরা মুসাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। তার উদ্দেশ্য ছিল টিপুকে দুনিয়ে থেকে সরিয়ে দেওয়া। জিসান ও মানিক বিদেশে বসে এই হত্যার সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তারা মূলত জানান দিতে চেয়েছে যে, তারা এখনও রয়েছে।’
হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি। উদ্ধারকৃত অস্ত্র টিপু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটি আমরা উদ্ধার করেছি।’
‘আমরা এই হত্যার ঘটনায় জিসান ও মানিককে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি,’ বলেন ডিএমপির ডিবি প্রধান। তিনি জানান, ডিএমপির ডিবির মতিঝিল বিভাগ মামলাটি তদন্ত করছে। গত ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপুকে এজিবি কলোনি থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে গুলি করা হয়। এ সময় পাশে থাকা রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করা হয়। এরপর গোয়েন্দা (মতিঝিল) বিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে এ মামলার মূল শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকা-ের মূল সমন্বয়ক হিসাবে সুমন শিকদার অরফে মুসা ও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহম্মেদ মন্টি ও জাফর আহম্মেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিকের সংশ্লিষ্ঠতার কথা প্রকাশ করে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের মাধ্যমে সুমন শিকদার মুসাকে ইন্টারপোলের সহায়তায় ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ডিবি প্রধান জানান, এক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি, শামীম হোসেন ওরফে মোল্লা শামীম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ত্যাগ করার উদ্দেশে যশোরের বেনাপোল এলাকায় অবস্থান করছে। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় তাকে বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করে। মোল্লা শামীমের দেওয়া তথ্যে তৌফিক হাসান অরফে বাবু অরফে বিডি বাবু, মো. সুমন হোসেন ওরফে সুমন ও মো. এহেতেশাম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে অপুকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে দক্ষিণ গোড়ান থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে হৃদয়কে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি ও তিনটি ম্যাগাজিনসহ গ্রেফতার করা হয়। বাবুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি দক্ষিণ গোড়ান হতে উদ্ধার করা হয়।
টিপু হত্যাকা-ে সেই মোটরসাইকেল চালকসহ গ্রেফতার আরও ৫
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ