নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে টিকা পেতে আগ্রহীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুরুতে টিকার প্রতি অনীহা থাকলেও এখন মানুষ দুই ডোজ টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে উদগ্রীব। টিকা গ্রহণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণসহ অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়া লাগতে পারে, সেই চিন্তা থেকে টিকার প্রতি মানুষের এই আগ্রহ। তবে টিকা প্রয়োগের গতি শ্লথ হওয়ায় আশানুরূপ মানুষকে এখনো টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ টিকার জন্য ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু তারা এখনো টিকা পাননি। কবে আসবে টিকার এসএমএস সেই অপেক্ষায় দিন কাটছে তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন তিন কোটি ৬৫ লাখের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন এক কোটি ৭৫ লাখ। আর দুটি ডোজই সম্পন্ন করেছেন ৭২ লাখের মতো মানুষ।
ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা আবুল হাসান লস্কর। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, গত ২৮ জুলাই তিনিসহ পরিবারের চার সদস্য টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। প্রায় এক মাসেও তাদের টিকার এসএমএস আসেনি। শুধু আবুল হাসান লস্কর নন, এ ধরনের অভিযোগ হাজারও মানুষের। নিবন্ধন করেও যৌক্তিক সময়ে টিকা না পাওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নোমান সিদ্দিক সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে ফিরেছেন। ছুটি শেষে তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাকে ফিরে যেতে বললেও টিকা না পাওয়ার কারণে যেতে পারছেন না তিনি। প্রায় ২০ দিন আগে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখনও টিকা পাননি। টিকা প্রয়োগে এই ধীরগতির মূল কারণ হলো সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টিকা না থাকা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টিকার জন্য চুক্তি হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আসছেও। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বাংলাদেশ অনেক আগে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে সরকার। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র মিয়ানমার ছাড়া সবাই টিকাদানে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে। এমনকি অনেক পরে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশের চেয়ে এক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
সরকারের টার্গেট ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া। বর্তমান গতিতে টিকাদান কর্মসূচি চললে ৮০ শতাংশ লোককে টিকা দিতে ১০ বছর লেগে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সরকার আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।
টিকার এসএমএস পেতে দেরির ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করছে। যার কারণে কেন্দ্রগুলোতে অনেক বেশি নিবন্ধনকারীর সংখ্যা জমে যাচ্ছে। যে কেন্দ্রে টিকার জন্য নিবন্ধন করা হয় সেখানে নিবন্ধনের আইডি নম্বরটা থেকে যায়। ওই নম্বর অনুযায়ী, যে আগে নিবন্ধন করবে তাকে আগে এসএমএস পাঠানো হয়।
টিকার স্বল্পতার কথা জানিয়েছেন টিকা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য ডা. এ এস এম আলমগীরও। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এক সঙ্গে এক-দেড় কোটি টিকা দিয়ে দেওয়ার মতো টিকা এই মুহূর্তে তাদের হাতে নেই। তবে টিকার পর্যাপ্ত মজুদ না থাকলেও ক্রমান্বয়ে আসছে বলে জানান তিনি। যারা ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান শুরু হয়। ওই দিন ৩০ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ১৬১ দিন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭ থেকে ১২ আগস্ট সম্প্রসারিত আকারে টিকা দেওয়া হয়েছিল। ওই ছয় দিনে টিকা দেওয়া হয়েছিল ৫৩ লাখ মানুষকে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা পেলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে যেতো। তবে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ না করায় সংকটে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। পরে অবশ্য বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশ টিকা আনার ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।
টিকার এসএমএসের অপেক্ষায় এক কোটি ৯০ লাখ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ