নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনীকে হামলার টার্গেট করলেও এবার জঙ্গি সংগঠন আনসার আর ইসলাম বিজিবি সদস্যদের টার্গেট করেছিল। পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের টার্গেট হামলার জন্য ইতোমধ্যে রেকিও সম্পন্ন করে জঙ্গি সংগঠনটির একটি টিম। এমনকী হামলার পর কথিত হিজরতের নামে আফগানিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক তৈরির চেষ্টা করছিলেন তারা।
গত শনিবার (৮ মে) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের চার সদস্যকে আটক করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
আটকরা হলেন- মো. জসিমুল ইসলাম ওরফে জ্যাক, মো. আব্দুল মুকিত, মো. আমিনুল হক ও সজীব ইখতিয়ার। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাগ, একটা চাপাতি, পাঁচটি স্মার্টফোন ও দু’টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, সিলেটের যেকোনো একটি বিজিবি স্থাপনায় এবং ঢাকার কোনো একটি পুলিশ স্থাপনায় অথবা টহল টিমের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল আনসার আল ইসলামের এই গ্রুপের। এজন্য তারা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের হামলার উদ্দেশ্যে রেকিও করে।
পুলিশের উপর জঙ্গিদের টার্গেট বহুদিন ধরেই দেখা গেছে কিন্তু হঠাৎ করে বিজিবির উপর তাদের টার্গেট কেন হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা তাগুতের প্রথম ক্যাটাগরিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রেখেছে। এই গ্রুপের দু’জন সদস্য হিজরতের নামে আফগানিস্তানে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আটক চারজনেরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে কথিত হিজরতের নামে আফগানিস্তান পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। টেলিগ্রাম আ্যপসে ‘সায়েন্স প্রজেক্ট’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিল। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিভাইস পর্যালোচনা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল বা মাসুল ফরিদ ওরফে তারিক আব্দুল্লাহর সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ আ্যপস গ্রুপ ও অনলাইনে গোপনীয় টেক্সট নামে সিক্রেট চ্যাটিং আ্যপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। সম্প্রতি তারা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নির্দেশে সিলেটের কোতোয়ালি থানা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে হোটেল ম্যানেজারকে আহত করে পালিয়ে যায়।
আটকদের মধ্যে জসিমুল হক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের, আব্দুল মুকিত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষকতা করতেন। এছাড়া, আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের দেশে যে কয়টি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় তাদের অধিকাংশই আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন দাবি করে। আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়দার শাখা বল নিজেদের দাবি করে। সেই সূত্র ধরেই তারা হয়তো বা আফগানিস্তানে হিজরত করতে গিয়ে থাকতে পারে। আফগানিস্তানে হিজরতের বিষয়টি তাদের ভাষ্য, এ বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। অধিকতর তদন্তে বিষয়টি জানা যাবে।
আটক আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এমন তথ্য এখনো পাইনি। তবে আমরা তাদের রিমান্ডে পেলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। হঠাৎ করে জঙ্গিদের আফগানিস্তানের যাওয়ার বিষয়টি কেন উঠে এলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা নব্য জেএমবির বা অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য তারা বরাবরই আইএস, আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কের একটি বিষয় বলে থাকে। সেই প্রবণতা থেকেই কেউ আফগানিস্তানে গিয়ে থাকতে পারে।
টার্গেট পুলিশ-বিজিবি, আফগানিস্তান পালানোর পরিকল্পনা
ট্যাগস :
টার্গেট পুলিশ-বিজিবি
জনপ্রিয় সংবাদ