ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা-যানজট

  • আপডেট সময় : ০২:২৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। এটা চলে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। অনেক স্থানে ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় রাজধানীজুড়ে।
রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহন, গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরযানে দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। জলজট ও যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও পথচারীরারা। কোনো কোনো রাস্তায় একশ গজ পার হতে সময় লেগে যায় দেড় ঘণ্টা
বসুন্ধরা এলাকায় একটি আইটি কোম্পানিতে কর্মরত ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেইলি রোড থেকে সকাল সাড়ে নয়টার একটু আগে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সাড়ে ১১টার সময়ও বাড্ডা লিংক রোড পার হতে পারিনি। এদিকে রাস্তাতেও দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিল না। রাস্তায় ময়লা পানি।’
একই কথা বলেন সৌমিক নামের এক যুবক। তিনি যাবেন গুলশানে। তারা অফিস শুরু ১০টায়। অথচ ১১টার সময় তিনি গাড়ি নিয়ে রামপুরা ব্রিজের ওপর অবস্থান করছিলেন।
এ সময় সৌমিক বলেন, ‘যানজটের একটি ছবি মোবাইল ফোনে তুলে অফিসের বসকে পাঠিয়েছি। প্রাইভেট চাকরি। ইতোমধ্যে এক ঘণ্টা চলে গেছে। আরও এক ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। তাই বসকে আপাতত জানানো হয়েছে। জানি না অফিসে কখন পৌঁছাতে পারবো।’
অনেক অফিসগামী যাত্রী গাড়ি ভাড়া করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও, পরে সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে ভাড়া গাড়ি রেখে ময়লা পানি মাড়িয়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। তাদেরই একজন আফিফা। তিনি কাজ করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। আফিফা বলেন, ‘ব্যাংকের কাজ শুরু হয়েছে। গ্রাহক আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। তাই গাড়ি ভাড়া করে এলেও গ্রাহকসেবা দিতেই হেঁটে রওনা দিয়েছি।’
ঢাকায় তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত : রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল সোমবার গভীর রাতে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেক আকাশ ছেয়ে ছিল মেঘে। দফায় দফায় চলেছে মুষলধারে বৃষ্টি। ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় ময়মনসিংহে ৪৮ মিলিমিটার, নেত্রকোণায় ৩৬ মিলিমিটার, টাঙ্গাইলে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির খবর এসেছে আরও অন্তত ১৫টি জেলা থেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে দেশের সর্বোচ্চ ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নেত্রকোণায় হয়েছে ৯৭ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, “পুবালী ও পশ্চিমা লঘুচাপের মিলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে দমকা বাতাসসহ বজ্রবৃষ্টি চলছে। বাংলাদেশে বর্ষাও সমাগত।”
তিনি জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। ৪ বা ৫ জুনে উপকূলে পৌঁছলে ধীরে ধীরে তা জুন মাসের প্রথমার্ধে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। সে সময় বৃষ্টির প্রবণতাও বাড়বে। গত শনিবারও দেশের কয়েকটি স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছিল। তার দুদিনের মাথায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ায় গরমের তীব্রতা কেটে গেছে। বর্ষা আসার আগেই উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা ধীরে ধীরে বাগবে বলে জানালেন আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন। “ঢাকায় মঙ্গলবারও বৃষ্টি চলবে। কয়েকদিন পরে বৃষ্টি কমে আসবে এখানে। তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে। বর্ষা যেহেতু চার-পাঁচ দিন পরে টেকনাফে পৌঁছবে, সেখানেও বৃষ্টি বাড়বে।” পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালের অগাস্টে এক দিনে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে ঢাকায়। সে সময় তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ডুবে ঢাকার অনেক সড়ক। অল্প সময়ে এত বৃষ্টিপাত রাজধানীবাসী দেখেছিল ১০ বছর পর।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা-যানজট

আপডেট সময় : ০২:২৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। এটা চলে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। অনেক স্থানে ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় রাজধানীজুড়ে।
রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহন, গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরযানে দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। জলজট ও যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও পথচারীরারা। কোনো কোনো রাস্তায় একশ গজ পার হতে সময় লেগে যায় দেড় ঘণ্টা
বসুন্ধরা এলাকায় একটি আইটি কোম্পানিতে কর্মরত ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেইলি রোড থেকে সকাল সাড়ে নয়টার একটু আগে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সাড়ে ১১টার সময়ও বাড্ডা লিংক রোড পার হতে পারিনি। এদিকে রাস্তাতেও দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিল না। রাস্তায় ময়লা পানি।’
একই কথা বলেন সৌমিক নামের এক যুবক। তিনি যাবেন গুলশানে। তারা অফিস শুরু ১০টায়। অথচ ১১টার সময় তিনি গাড়ি নিয়ে রামপুরা ব্রিজের ওপর অবস্থান করছিলেন।
এ সময় সৌমিক বলেন, ‘যানজটের একটি ছবি মোবাইল ফোনে তুলে অফিসের বসকে পাঠিয়েছি। প্রাইভেট চাকরি। ইতোমধ্যে এক ঘণ্টা চলে গেছে। আরও এক ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। তাই বসকে আপাতত জানানো হয়েছে। জানি না অফিসে কখন পৌঁছাতে পারবো।’
অনেক অফিসগামী যাত্রী গাড়ি ভাড়া করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও, পরে সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে ভাড়া গাড়ি রেখে ময়লা পানি মাড়িয়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। তাদেরই একজন আফিফা। তিনি কাজ করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। আফিফা বলেন, ‘ব্যাংকের কাজ শুরু হয়েছে। গ্রাহক আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। তাই গাড়ি ভাড়া করে এলেও গ্রাহকসেবা দিতেই হেঁটে রওনা দিয়েছি।’
ঢাকায় তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত : রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল সোমবার গভীর রাতে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেক আকাশ ছেয়ে ছিল মেঘে। দফায় দফায় চলেছে মুষলধারে বৃষ্টি। ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় ময়মনসিংহে ৪৮ মিলিমিটার, নেত্রকোণায় ৩৬ মিলিমিটার, টাঙ্গাইলে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির খবর এসেছে আরও অন্তত ১৫টি জেলা থেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে দেশের সর্বোচ্চ ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নেত্রকোণায় হয়েছে ৯৭ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, “পুবালী ও পশ্চিমা লঘুচাপের মিলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে দমকা বাতাসসহ বজ্রবৃষ্টি চলছে। বাংলাদেশে বর্ষাও সমাগত।”
তিনি জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। ৪ বা ৫ জুনে উপকূলে পৌঁছলে ধীরে ধীরে তা জুন মাসের প্রথমার্ধে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। সে সময় বৃষ্টির প্রবণতাও বাড়বে। গত শনিবারও দেশের কয়েকটি স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছিল। তার দুদিনের মাথায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ায় গরমের তীব্রতা কেটে গেছে। বর্ষা আসার আগেই উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা ধীরে ধীরে বাগবে বলে জানালেন আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন। “ঢাকায় মঙ্গলবারও বৃষ্টি চলবে। কয়েকদিন পরে বৃষ্টি কমে আসবে এখানে। তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে। বর্ষা যেহেতু চার-পাঁচ দিন পরে টেকনাফে পৌঁছবে, সেখানেও বৃষ্টি বাড়বে।” পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালের অগাস্টে এক দিনে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে ঢাকায়। সে সময় তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ডুবে ঢাকার অনেক সড়ক। অল্প সময়ে এত বৃষ্টিপাত রাজধানীবাসী দেখেছিল ১০ বছর পর।