ঢাকা ১০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

টানাটানিতে থমকে গেছে মৎস্য ও বোরো চাষ

  • আপডেট সময় : ০১:১০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের আদিতমারী গ্রামে মৎস্য ও বোরো চাষ করতে পারছেন না একাধিক কৃষক। বিদ্যুত বিভাগ মানছে না মৎস্য দপ্তরের প্রত্যয়ন। আদিতমারী গ্রামের নেকাতের ঘাট এলাকার ২৭০ শতক জমির পুকুরে মাছের ডিম ও রেণু উৎপাদন করতে পারছেন না রুয়েট ছাত্র নাজমুল হাসান নামের উদ্যোক্তা।একই জায়গায় বোরো চাষ করতে পারছেন না একাধিক চাষি। জানা যায়, নাজমুল হাসান তার নিজ জলাধারে রেণু, পোনা মাছের আধুনিক চাষের জন্য ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন। এরপর একপর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ আদিতমারী জোনাল অফিস তাকে বিদ্যুতসংযোগের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামানতের টাকা জমা নেয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন দেন। সেখানে মৎস্য কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ২৭০ শতকের পুকুর উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে সেখানে মাছ চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এই প্রত্যয়ন মানতে নারাজ। এমতাবস্থায় সেই পুকুরে ডিম, রেণু, পোনা মাছের আধুনিক চাষ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান রুয়েট ছাত্র নাজমুল। তার দাবি, দ্রুত দাপ্তরিক এসব জটিলতা দূর করে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তার বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হোক।এবং পাশাপাশি বোরো চাষ অব্যাহত থাকুক। তিনি জানান, মান্ধাতার আমলের পরিবারিক কৃষিকে আমি আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করছি।তাদের অভ্যন্তরীন সমস্যা তারাই মিটিয়ে নিক। আমরা খরা মৌসুমে রেণু থেকে পোনা,আর বর্ষায় ধান মাছের চাষ করি। বিদ্যুতের কারণে সেচ পাচ্ছিনা। আমার চাষ নষ্ট হচ্ছে। ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে এসব সমন্বিত আধুনিক চাষ সম্ভব হচ্ছে না।
নাজমুলের স্কুলশিক্ষক বাবা বলেন, আমার বাবা-দাদার আমল থেকে এখানে মাছ চাষ করে আসছি। হঠাৎ আমার প্রকৌশলী ছেলের দাবির কারণে সেখানে মাছ ও ধানের একত্রিত চাষের অনুমতি দেই। কিন্তু আমার প্রকৌশলী ছেলের আধুনিক কৃষির দাবির কারণে,আমার দুকূলই হারাতে বসেছি।না হলো আমার আগেকার চাষাবাদ,না হচ্ছে তার আধুনিক সম্মিত চাষ প্রকল্প। নাজমুলের স্কুলশিক্ষক চাচা বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমসহ কর্মকর্তারা বলেছেন, এখানে মাছ চাষ করবেন ও আরো গভীর করবেন এই মর্মে লিখিত দেন। আমরা লিখিত দেই। পরে তারা বলেন, আমরা নাকি মাছ চাষ না করার অঙ্গীকারনামা দিয়েছি, এখন বিদ্যুৎ দিবে না। ৭০ বছর বয়স্ক স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, আমরা স্থানীয় লোক। এখানে ৩০/৪০ বছর থেকে ধান ও মাছ চাষ করা দেখছি। অন্য পুকুরের মালিকরা এখান থেকে পোনা কিনে নিয়ে যায়। অফ সিজনে ধান চাষ করে। বাকি সময় মাছ চাষ।কে কি বললো, সেটা আমরা জানিনা। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুতের আদিতমারী জোনালের ডিজিএম মো. আইয়ুব আলী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কেউ চাষি কিনা তা দেখে প্রত্যয়ন করি। এই প্রত্যয়ন দিয়ে সে ব্যাংক লোন, বিদ্যুৎসহ অন্য দপ্তরগুলোতে যেতে পারে। তারা সুযোগ দিবে কিনা, সেটা সেই দপ্তর দেখবে।তবে,আমার দীর্ঘ চাকরিজীবনে ওই ঘটনার মত ঘটনা আর ঘটেনি। বিদ্যুৎ খুব সাধারণ বিষয়, চাষি তা পেতে পারেন। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ওই বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত রিপোর্ট সেভাবেই এসেছে। ওই জমিটা মাছ চাষের উপযুক্ত না। অন্য একটি নামে সেচের আবেদন করে সেচ লাইন পান নাই, তাই নতুন করে মাছ চাষের জন্য আবেদন করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টানাটানিতে থমকে গেছে মৎস্য ও বোরো চাষ

আপডেট সময় : ০১:১০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের আদিতমারী গ্রামে মৎস্য ও বোরো চাষ করতে পারছেন না একাধিক কৃষক। বিদ্যুত বিভাগ মানছে না মৎস্য দপ্তরের প্রত্যয়ন। আদিতমারী গ্রামের নেকাতের ঘাট এলাকার ২৭০ শতক জমির পুকুরে মাছের ডিম ও রেণু উৎপাদন করতে পারছেন না রুয়েট ছাত্র নাজমুল হাসান নামের উদ্যোক্তা।একই জায়গায় বোরো চাষ করতে পারছেন না একাধিক চাষি। জানা যায়, নাজমুল হাসান তার নিজ জলাধারে রেণু, পোনা মাছের আধুনিক চাষের জন্য ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন। এরপর একপর্যায়ে পল্লী বিদ্যুৎ আদিতমারী জোনাল অফিস তাকে বিদ্যুতসংযোগের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামানতের টাকা জমা নেয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন দেন। সেখানে মৎস্য কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ২৭০ শতকের পুকুর উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে সেখানে মাছ চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এই প্রত্যয়ন মানতে নারাজ। এমতাবস্থায় সেই পুকুরে ডিম, রেণু, পোনা মাছের আধুনিক চাষ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান রুয়েট ছাত্র নাজমুল। তার দাবি, দ্রুত দাপ্তরিক এসব জটিলতা দূর করে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তার বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হোক।এবং পাশাপাশি বোরো চাষ অব্যাহত থাকুক। তিনি জানান, মান্ধাতার আমলের পরিবারিক কৃষিকে আমি আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করছি।তাদের অভ্যন্তরীন সমস্যা তারাই মিটিয়ে নিক। আমরা খরা মৌসুমে রেণু থেকে পোনা,আর বর্ষায় ধান মাছের চাষ করি। বিদ্যুতের কারণে সেচ পাচ্ছিনা। আমার চাষ নষ্ট হচ্ছে। ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে এসব সমন্বিত আধুনিক চাষ সম্ভব হচ্ছে না।
নাজমুলের স্কুলশিক্ষক বাবা বলেন, আমার বাবা-দাদার আমল থেকে এখানে মাছ চাষ করে আসছি। হঠাৎ আমার প্রকৌশলী ছেলের দাবির কারণে সেখানে মাছ ও ধানের একত্রিত চাষের অনুমতি দেই। কিন্তু আমার প্রকৌশলী ছেলের আধুনিক কৃষির দাবির কারণে,আমার দুকূলই হারাতে বসেছি।না হলো আমার আগেকার চাষাবাদ,না হচ্ছে তার আধুনিক সম্মিত চাষ প্রকল্প। নাজমুলের স্কুলশিক্ষক চাচা বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমসহ কর্মকর্তারা বলেছেন, এখানে মাছ চাষ করবেন ও আরো গভীর করবেন এই মর্মে লিখিত দেন। আমরা লিখিত দেই। পরে তারা বলেন, আমরা নাকি মাছ চাষ না করার অঙ্গীকারনামা দিয়েছি, এখন বিদ্যুৎ দিবে না। ৭০ বছর বয়স্ক স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, আমরা স্থানীয় লোক। এখানে ৩০/৪০ বছর থেকে ধান ও মাছ চাষ করা দেখছি। অন্য পুকুরের মালিকরা এখান থেকে পোনা কিনে নিয়ে যায়। অফ সিজনে ধান চাষ করে। বাকি সময় মাছ চাষ।কে কি বললো, সেটা আমরা জানিনা। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুতের আদিতমারী জোনালের ডিজিএম মো. আইয়ুব আলী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কেউ চাষি কিনা তা দেখে প্রত্যয়ন করি। এই প্রত্যয়ন দিয়ে সে ব্যাংক লোন, বিদ্যুৎসহ অন্য দপ্তরগুলোতে যেতে পারে। তারা সুযোগ দিবে কিনা, সেটা সেই দপ্তর দেখবে।তবে,আমার দীর্ঘ চাকরিজীবনে ওই ঘটনার মত ঘটনা আর ঘটেনি। বিদ্যুৎ খুব সাধারণ বিষয়, চাষি তা পেতে পারেন। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ওই বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত রিপোর্ট সেভাবেই এসেছে। ওই জমিটা মাছ চাষের উপযুক্ত না। অন্য একটি নামে সেচের আবেদন করে সেচ লাইন পান নাই, তাই নতুন করে মাছ চাষের জন্য আবেদন করেন।