ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
শেওড়াপাড়ায় দুই বোন হত্যা

টাকা চুরি দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে ভাগনে

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৪:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামে দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে (১৪) গ্রেফতার কিশোর -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামে দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক কিশোরকে (১৪) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার কিশোর নিহতদের অপর এক বোনের ছেলে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালার বাসা থেকে টাকা চুরি করায় সময় দেখে ফেলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সোমবার (১২ মে) বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাইকেল কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য খালার বাসায় গিয়ে টাকা চুরি করে ওই কিশোর। কিন্তু চুরির বিষয়টি দেখে ফেলায় এবং মা-বাবাকে জানানোর কথা বলায় চাকু ও শিলনোড়া দিয়ে দুই খালা মরিয়ম ও সুফিয়াকে হত্যা করে ওই কিশোর। এরপর বাসায় তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে ১২টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা বলে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার বাসা থেকে বের হয় ওই কিশোর। এরপর বড় খালা মরিয়মের শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়। এ সময় তার মাথায় লাল রঙের ক্যাপ ও মুখে মাক্স ছিল। মরিয়ম তার জন্য শরবত বানাতে যায়। প্লেট-বাটি ধুয়ে বারান্দার দিকে যায় সুফিয়া। এই সুযোগে সে মরিয়মের রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে সাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা চুরি করে।

মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, টাকা চুরির বিষয়টি দেখে মরিয়ম ওই কিশোরকে বকাবকি করে, তার মাকে জানানোর জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকে। এ সময় ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে মরিয়মের পেটে আঘাত করে ওই কিশোর। রক্তাক্ত অবস্থায় মরিয়ম মারতে গেলে সে পুনরায় আঘাত করে। মরিয়মের চিৎকার শুনে সুফিয়া অন্য একটি রুম থেকে এসে ওই কিশোরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সুফিয়ার পেটে আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শীল-পাটার, পাটা এনে মরিয়মের মাথায় একাধিক বার আঘাত করে তার ভাগনে। পরে সুফিয়াকে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে বাথরুমে গিয়ে হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পাশের রুমে গিয়ে খালাতো বোনের একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে। পড়ে বাইরে থেকে বাসায় তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর সিএনজি অটোরিকশায় শনিরআখড়ায় নিজের বাসায় যায় ওই কিশোর। পথে চাবি ও তার পরা লাল ক্যাপ ফেলে দেয়। শনিরআখড়া পৌঁছানোর পর চুরির টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া দেয় এবং রক্ত লেগে থাকার কারণে বাকি টাকা রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর শনিরআখড়ায় নেমে একটি মার্কেটের মসজিদের টয়লেটে ঢুকে ব্যাগে থাকা সকালে পরা গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি পরে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে রক্ত মাখা কাপড়গুলো টয়লেটের ভ্যান্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। জুতায় রক্ত থাকায় সেটিও ফেলে দেয় বাসার সামনে এসে। ১০ মে বিকালে সুফিয়ার দাফনের জন্য নানা বাড়ি ঝালকাঠি যায় সে।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঝালকাঠি থেকে ওই কিশোরকে আটক করা হয়। পরে তার দেখানো মতে স্টার্ন শপিং সেন্টারের পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রঙের রক্ত মাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোনের জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিংয়ের ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, গ্রেফতার কিশোর স্কুল থেকে বহিষ্কৃত। হত্যার ঘটনায় শুধু সাইকেল কেনার উদ্দেশ্য ছিল নাকি অন্য কিছু সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। দুই খালাকে হত্যারা ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শেওড়াপাড়ায় দুই বোন হত্যা

টাকা চুরি দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে ভাগনে

আপডেট সময় : ০৮:৫৪:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামে দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক কিশোরকে (১৪) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার কিশোর নিহতদের অপর এক বোনের ছেলে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালার বাসা থেকে টাকা চুরি করায় সময় দেখে ফেলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সোমবার (১২ মে) বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাইকেল কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য খালার বাসায় গিয়ে টাকা চুরি করে ওই কিশোর। কিন্তু চুরির বিষয়টি দেখে ফেলায় এবং মা-বাবাকে জানানোর কথা বলায় চাকু ও শিলনোড়া দিয়ে দুই খালা মরিয়ম ও সুফিয়াকে হত্যা করে ওই কিশোর। এরপর বাসায় তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে ১২টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা বলে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার বাসা থেকে বের হয় ওই কিশোর। এরপর বড় খালা মরিয়মের শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়। এ সময় তার মাথায় লাল রঙের ক্যাপ ও মুখে মাক্স ছিল। মরিয়ম তার জন্য শরবত বানাতে যায়। প্লেট-বাটি ধুয়ে বারান্দার দিকে যায় সুফিয়া। এই সুযোগে সে মরিয়মের রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে সাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা চুরি করে।

মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, টাকা চুরির বিষয়টি দেখে মরিয়ম ওই কিশোরকে বকাবকি করে, তার মাকে জানানোর জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকে। এ সময় ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে মরিয়মের পেটে আঘাত করে ওই কিশোর। রক্তাক্ত অবস্থায় মরিয়ম মারতে গেলে সে পুনরায় আঘাত করে। মরিয়মের চিৎকার শুনে সুফিয়া অন্য একটি রুম থেকে এসে ওই কিশোরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সুফিয়ার পেটে আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শীল-পাটার, পাটা এনে মরিয়মের মাথায় একাধিক বার আঘাত করে তার ভাগনে। পরে সুফিয়াকে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে বাথরুমে গিয়ে হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পাশের রুমে গিয়ে খালাতো বোনের একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে। পড়ে বাইরে থেকে বাসায় তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর সিএনজি অটোরিকশায় শনিরআখড়ায় নিজের বাসায় যায় ওই কিশোর। পথে চাবি ও তার পরা লাল ক্যাপ ফেলে দেয়। শনিরআখড়া পৌঁছানোর পর চুরির টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া দেয় এবং রক্ত লেগে থাকার কারণে বাকি টাকা রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর শনিরআখড়ায় নেমে একটি মার্কেটের মসজিদের টয়লেটে ঢুকে ব্যাগে থাকা সকালে পরা গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি পরে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে রক্ত মাখা কাপড়গুলো টয়লেটের ভ্যান্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। জুতায় রক্ত থাকায় সেটিও ফেলে দেয় বাসার সামনে এসে। ১০ মে বিকালে সুফিয়ার দাফনের জন্য নানা বাড়ি ঝালকাঠি যায় সে।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঝালকাঠি থেকে ওই কিশোরকে আটক করা হয়। পরে তার দেখানো মতে স্টার্ন শপিং সেন্টারের পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রঙের রক্ত মাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোনের জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিংয়ের ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, গ্রেফতার কিশোর স্কুল থেকে বহিষ্কৃত। হত্যার ঘটনায় শুধু সাইকেল কেনার উদ্দেশ্য ছিল নাকি অন্য কিছু সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। দুই খালাকে হত্যারা ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।