ক্রীড়া ডেস্ক: প্যারিসে আক্রমণের স্রোত বইয়ে দিয়েও সাফল্য না পাওয়া পিএসজি এবার শুরুতেই প্রতিপক্ষের বাঁধ ভেঙে দিল। পরে চলল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্য করল লিভারপুল; কিন্তু জানলুইজি দোন্নারুম্মা রইলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। লড়াই গড়াল টাইব্রেকারে এবং সেখানেও নায়ক তিনিই। তার বিশ্বস্ত কাঁধে চড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখল ফরাসি ক্লাবটি। শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে মঙ্গলবার রাতে লিভারপুলের আঙিনা অ্যানফিল্ডে জয়োল্লাস করল পিএসজি। প্রথম লেগে ১-০ গোলে পরাজিত ফরাসি দলটি এখানে জিতল একই ব্যবধানে।
এরপর টাইব্রেকারে ৪-১ ব্যবধানে জিতে বাজিমাত করল লুইস এনরিকের দল। গত সপ্তাহের প্রথম লেগে পুরোটা সময় দাপট দেখিয়েও আচমকা এক গোলে খেয়ে হেরে গিয়েছিল পিএসজি, মুহূর্তের ঝলকে উল্লাসে মেতেছিল লিভারপুল। এবারের লড়াইয়ে আরও বেশি রূপ বদলাল। আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর হঠাৎ করেই গোল হজম করে লিভারপুল। প্রথমার্ধে দুই দল সমানতালে আক্রমণ করলেও বিরতির পর পাল্টে যায় চিত্র; তুলনামূলক ভালো খেলে স্বাগতিকরা। অতিরিক্ত সময়ের শেষ ভাগে গিয়ে আবার নিয়ন্ত্রণ নেয় পিএসজি। তবে দুই লেগের ১-১ সমতা আর ভাঙেনি।
১২০ মিনিটের লড়াই শেষে সব আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন দোন্নারুম্মা। টাইব্রেকারে পিএসজির চার জন শট নিয়ে জালের দেখা পেলেন সবাই, বিপরীতে দারউইন নুনেস ও কার্টিস জোন্সের শট ঠেকিয়ে দলকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দিলেন দোন্নারুম্মা। প্যারিসে পুরোপুরি খোলসে বন্দি হয়ে থাকা মোহামেদ সালাহ এদিন শুরু থেকে ছিলেন বেশ উজ্জীবিত। প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পটু এই ফরোয়ার্ড ম্যাচের প্রথম ছয় মিনিটেই পরিষ্কার দুটি সুযোগ পেয়ে যান, যদিও একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি চলতি মৌসুমে ৩২টি গোল করা তারকা।
পরের চার মিনিটে গোলে আরও দুটি শট নেয় লিভারপুল, সেগুলোও ছিল না লক্ষ্যে। এরপরই দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে, স্বাগতিক রক্ষণের ছোট এক ভুলের সুযোগে তাদেরকে স্তব্ধ করে দেন দেম্বেলে। দ্বাদশ মিনিটে মাঝমাঠে বল পেয়ে দেম্বেলে ডান দিকে ব্র্যাডলি বার্কোলাকে বাড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে যান ডি-বক্সে, সতীর্থের উদ্দেশ্যে ফিরতি পাস দেন বার্কোলা। ডিফেন্ডার ইব্রাহিমা কোনাতে বলের কাছে আগেভাগে পৌঁছালেও ক্লিয়ার করতে পারেননি, উল্টো আলিসনের পাশ দিয়ে বল চলে যায় গোলমুখে, আর সবার বাধা এড়িয়ে ছোট্ট টোকায় কাজ সারেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। অ্যানফিল্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোনো ম্যাচে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের পর দ্রুত সময়ে গোল হজম করল লিভারপুল। দুই লেগ মিলিয়ে সমতা টেনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে পিএসজি। আক্রমণে আরও জোর দেয় লিভারপুল। একের পর এক চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ।
দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি শট ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় প্রচেষ্টায় জালে বল পাঠায় লিভারপুল; কিন্তু লাইন্সম্যানের অফসাইডের পতাকায় থেমে যায় তাদের উল্লাস। পাঁচ মিনিট পর লুইস দিয়াসের দারুণ হেড ঝাঁপিয়ে রুখে দেন দোন্নারুম্মা। সময় গড়ানোর সঙ্গে খেলার গতি কমতে থাকে। পিএসজির ধার কমে আসে, লিভারপুল চেষ্টা করতে থাকে। লম্বা সময় ধরে পোস্টে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটে দোন্নারুম্মার, তবে দেয়ালে চিড় ধরতে দেননি তিনি।
অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই বেশ সতর্ক হয়ে ওঠে, তাতে এই সময়ে খুব বেশি কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েননি দুই গোলরক্ষকের কেউ। দীর্ঘ সময় পর ১০৯তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন দেম্বেলে; কিন্তু তার জোরাল শট ঝাঁপিয়ে আটকে দেন আলিসন। বাকি সময়ের বেশিরভাগ লিভারপুলের ডি-বক্সের আশেপাশেই বল রইল, কিন্তু কাজের কাজ করতে পারল না কেউ। অতঃপর সব রোমাঞ্চ জমা হলো পেনাল্টি শুটআউটে, যেখানে নায়ক দোন্নারুম্মা। যার দেয়ালে ভেঙে গেল লিভারপুলের আশা। ২০২০ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙেছিলেন দোন্নারুম্মা। এবার ইতালিয়ান গোলরক্ষক হতাশায় ডোবালেন এই ইংলিশ ক্লাবকে।
নতুন আঙ্গিকের এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুরু থেকেই দারুণ ধারাবাহিক ছিল আর্না স্লটের লিভারপুল। প্রাথমিক পর্বে প্রথম সাতটি জিতে সবার আগে তারা জায়গা করে নেয় শেষ ষোলোয়। মৌসুমে জুড়ে পারফরম্যান্সের বিবেচনায় তাদেরকেই শিরোপার বড় দাবিদার মানছিল অনেকে, তাদেরই যাত্রা থেমে গেল নকআউট পর্বের শুরুতে। ঠিক উল্টো অবস্থা পিএসজির। প্রাথমিক পর্বে শুরর দিকে টানা ব্যর্থতায় একটা সময় তাদের পরের ধাপে ওঠায় পড়েছিল শঙ্কার মুখে, তারাই বিদায় করে দিল শিরোপাপ্রত্যাশীদের।