ক্রীড়া ডেস্ক: প্রথম শটে ব্যর্থ হলেন থিও এরনঁদেজ। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে হারা ফ্রান্সের সমর্থকদের জেঁকে ধরল শঙ্কা। তবে পোস্টে দারুণ আস্থা হয়ে থাকা মাইক মিয়াঁ দেখালেন জাদু। ক্রোয়েশিয়ার ইয়োসিপ স্তানিসিচের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। এবার সুযোগ কাজে লাগালেন দায়দ উপামেকানো। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার টাইব্রেকারে জিতে নেশন্স লিগের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল ফ্রান্স। ঘরের মাঠে রোববার রাতে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিয়ে ৯০ মিনিটে ২-০ গোলে জিতে লড়াইয়ে টিকে থাকে ফ্রান্স।
গোলমুখে কিলিয়ান এমবাপের ব্যর্থতার রাতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দারুণ ফ্রি কিকে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন মাইকেল ওলিসে। পরে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উসমান দেম্বেলে। ক্রোয়েশিয়াও প্রথম লেগে একই ব্যবধানে জয় পাওয়ায় দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-২। অতিরিক্ত সময়ে দারুণ কয়েকটি সেভ করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যান ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচ। সেখানে ব্যবধান গড়ে দিলেন মিয়াঁ। ১২০ মিনিটে প্রায় ৬২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৮টি শট নেয় ফ্রান্স, এর আটটি ছিল লক্ষ্েয।
অন্যদিকে রক্ষণে প্রবল মনোযোগ দেওয়া ক্রোয়েশিয়া লক্ষ্যে রাখতে পারেনি কোনো শট। ঘরের মাঠে ম্যাচ শুরু হতেই আক্রমণের জোয়ারে ক্রোয়েশিয়াকে যেন ভাসিয়ে দিতে চাইল ফ্রান্স। প্রথম মিনিট থেকে গেল আক্রমণে। তৃতীয় মিনিটেই এলো সুযোগ। কিন্তু দেম্বেলের কর্নারে হেড লক্ষ্েয রাখতে পারেননি মানু কোনে। পঞ্চদশ মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছে বলে পান কিলিয়ান এমবাপে। তবে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে শট লক্ষ্েয রাখতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটে অহেলিয়া চুয়ামেনির ফ্লিক বেরিয়ে যায় দূরের পোষ্ট ঘেঁষে। ২৪তম মিনিটে দেম্বেলের ক্রসে একটুর জন্য পা ছোঁয়াতে পারেনি এমবাপে। গোলের জন্য বাড়ে ফ্রান্সের অপেক্ষা। ১৪ মিনিট পর দারুণ সুযোগ পান ব্রাডলি বারকোলা। পেনাল্টি স্পটে কাছ থেকে তার শট কোনোমতে পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
একই ছন্দে শুরু করা ফ্রান্স এগিয়ে যায় ৫২তম মিনিটে। ডি বক্সের খুব কাছ থেকে চমৎকার ফ্রি কিকে জাল খুঁজে নেন মাইকেল ওলিসে। নিখুঁত শট ফেরানোর চেষ্টাও করতে পারেননি লিভাকোভিচ। ৯ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ একটুর জন্য কাজে লাগাতে পারেননি চুয়ামেনি। তার হেড বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের কাছ দিয়ে। ৭৫তম মিনিটে এমবাপের নিদারুণ ব্যর্থতায় হাতছাড়া হয়ে যায় আরেকটি খুব ভালো সুযোগ।
ডি বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে রেয়াল মাদ্রিদ তারকা শট রাখতে পারেননি লক্ষ্যে। ক্রোয়াটদের প্রবল চাপে রেখে চার মিনিট পর স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলে ফ্রান্স। ওলিসের কাটব্যাক পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জাল খুঁজে নেন দেম্বেলে। বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করলেও আর গোল করতে পারেনি ফ্রান্স। ৯৫তম মিনিটে ভলি লক্ষ্েয রাখতে পারেননি এমবাপে। পরের মিনিটে দিজিরে দুয়ের দুটি শট চমৎকার রিফ্লেক্সে ফিরিয়ে দেন লিভাকোভিচ। হতাশার রাতে ‘ওয়ান-অন-ওয়ান’ পজিশনে আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন এমবাপে, ১০৮তম মিনিটে। বাঁ দিক থেকে ফরাসি অধিনায়কের শট এগিয়ে এসে ব্যর্থ করে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। ৯ মিনিট পর আরেকটি দুর্দান্ত সেভে এমবাপেকে হতাশায় ডোবান তিনি।
এরপর টাইব্রেকারের রোমাঞ্চ। প্রথম তিন শটের দুটিতেই গোল করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। মার্তিন বাতুরিনার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান মিয়াঁ, ফ্রানিয়ো ইভানোভিচের বুলেট শট যায় বাইরে। তাদের দুই জনের মাঝে গোল করেন নিকোলো মোরো। পরের তিন শটে জালের দেখা পান মারিও পাসালিচ, ক্রিস্তিয়ান ইয়াকিচ ও দুয়ে চালাতা সার। সাডেন ডেথে স্তানিসিচের শট ঠেকিয়ে দেন মিয়াঁ। ফ্রান্সের প্রথম দুটি শট নেন এমবাপে ও চুয়ামেনি, এই দুটি শটে হাত লাগালেও জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি লিভাকোভিচ। জুল কুন্দে মারেন বাইরে।
রান্দাল কোলো মুয়ানি গোল করলে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে যায় ফ্রান্স। কিন্তু সেই যাত্রায় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি এরনঁদেজ। দুয়ে নিজের শটে জাল খুঁজে নিতে না পারলে হেরেই যেত ফ্রান্স। তবে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ সারেন তিনি। আর নিজের শটে দলকে শেষ চারে নিয়ে যান উপেমেকানো।