ফারজানা কাশেমী : টর্ট আইন ও ক্ষতি পূরণ, আইনের প্রারম্ভিক সম্ভাষন। অধিকার বিচ্যুতিতে, মানহানি, আঘাতপ্রাপ্ত, অবহেলা, পরমদায়ের জন্য উদ্ভুত ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও জরিমানা আরোপ আইনগত প্রতিকার।
বিখ্যাত ম্যাকডোনাল্ড কোম্পানিকে জরিমানা প্রদান করেছিলেন ইংল্যান্ডের এক আদালত। জরিমানা প্রদানের কারণ ছিল নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় কফি উৎপাদন। একজন ভদ্র মহিলা তার গাড়ি চালানোর সময় দু’পায়ের মাঝে কফি রেখেছিলেন। গরম কফি তার পায়ে পরে পায়ের চামড়া পুড়ে গিয়েছিল। উক্ত বিষয়ে ভদ্রমহিলা মামলা করার পর ম্যাকডোনাল্ড কোম্পানি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিল-গাড়ি চালানোর সময় দু’পায়ের মাঝে কফি রাখা যৌক্তিত ছিল না। আদালত ম্যাকডোনাল্ড কোম্পানির বিবৃতিতে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছিল। আদালতের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল- ম্যাকডোনাল্ড মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় কফি উৎপাদন করেছে, যা এই বিখ্যাত কোম্পানির ত্রুটি। তাই এই কোম্পানিকে জরিমানা প্রদান করেছিল সংশ্লিষ্ট আদালত।
সাম্প্রতিককালে একজন পঁচাত্তর (৭৫) বয়সী বয়োজেষ্ঠ নাগরিক তার নাতির জন্য দুইশত (২০০) টাকার খাবার কিনেছিলেন ম্যাকডোনাল্ড থেকে। এই ব্যক্তির নাতি গাড়িতে উঠার পরির্বতে তার নানার অনুরোধ উপেক্ষা করে পার্কে খেলছিল। বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তি কিছু সময় ক্লান্ত হয়ে গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি পার্কিং না করার অপরাধ ও ট্রাফিক আইন মান্য না করার অপরাধে তাকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদান করেছেন ইংল্যান্ডের একটি আদালত।
রোম, ইংল্যান্ড, আমেরিকা এসব উন্নত রাষ্ট্রের তৈরি করা আইনের আদলে সাজানো হয়েছে পৃথিবীর কিছু ক্ষুদ্র, অনুন্নত, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের আইন। প্রাচ্যের গতানুগতিক আইনি ধারার ভিত্তিতে অনেক রাষ্ট্রের আইনকানুন, বিচার ব্যবস্থা চলমান, যদিও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে বিধি ব্যবস্থার আইন অনুসরণ করা হয়।
তথাপি আইনের বিধি বিধানের সুস্পষ্ট উল্লেখ ও ব্যাখ্যা প্রদান সত্ত্বেও আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে যথেষ্ট গরমিল পরিলক্ষিত হয়। কার্যকরী অর্থে অনেক আইনের প্রয়োগ নেই প্রাচ্যের আইন অনুসরণকৃত রাষ্ট্রের।
যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অবহেলাজনিত কারণে শিশু হত্যা মামলায় আদালত কর্তৃক আরোপিত ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রায় রাষ্ট্রের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত।
কিছু রাষ্ট্রসমূহে গাড়ির বেপরোয়া গতিতে পৃষ্ঠ হয়ে প্রাণহানিতে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি যেন এক অলীক কল্পনা।
বিক্ষিপ্তভাবে এমন কিছু রাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অবহেলা বা গাফিলতির কারণে বছরের পর বছর মামলা স্বাক্ষীর অভাবে নিষ্পন্ন করা সম্ভব হয় না। উদাহরণস্বরূপ-দশ বছরেও মেডিকেল রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে অপারগ হন।
কিছু সময়ে আবার সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, একই প্রেক্ষাপটে প্রদানকৃত রিপোর্টে আকাশ জমিন গরমিল। যেমন-সংশ্লিষ্ট নারীর স্থলে পুরুষের ডিএনএ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়।
ভুল, অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতার মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বিচ্ছিন্ন পরিক্রমায় কিছু রাষ্ট্রে তদন্ত রিপোর্ট, চার্জশিট প্রাপ্তির নিমিত্তে এত দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়, হয়তো এজাহারকারী মামলার রায় প্রাপ্তির পূর্বেই ইহলোক ত্যাগ করেন। ক্ষতিপূরণ, শাস্তি, জরিমানা প্রদান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকায় হয়তো ক্ষুদ্র, অনুন্নত, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে অনুসরণকৃত আইনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সহায়ক হতো।
লেখক : আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ
টর্ট আইন আর আমাদের দৈনন্দিন জীবন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ