নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই রাজধানীর গাবতলী আমিন বাজার ও শালিপুর এলাকায় ফিরতি মানুষের ঢল নেমেছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর শালিপুর গাবতলী মাজার রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেল ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তারা আবার রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ গাড়িতে, আবার কেউ মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে ঢাকায় আসছেন।
যশোর, খুলনা, ঝিনাইদা, মাগুরা, রংপুর, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ লোকই আট দশজন মিলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে আসছেন। মো. সাইদুল বলেন, গাজীপুর একটি কোম্পানিতে চাকরি করি, চার দিনের ছুটিতে মা বাবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়েছিলাম। ভোরে ১০ জনে মিলে গাবতলী পর্যন্ত একটি মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে এসেছি। জনপ্রতি ২০০০ হাজার টাকা করে নিয়ে গাবতলী নামানোর কথা থাকলেও নামিয়েছে সাভারের শালিপুর এলাকায়, ওখান থেকে হেঁটে গাবতলী আসলাম। তিনি বলেন, অনেক সময় বা কষ্ট ও বাড়তি টাকা খরচ হলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পেরেছি, এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। অন্যদিকে ঈদের দুই দিন পরেও রাজধানী থেকে বহু মানুষকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দেখা গেছে।
দারুসালাম থানার পিআই (পেট্রোল ইন্সপেক্টর) মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের ডিউটি গাবতলী এলাকায় ২৪ ঘণ্টা আছে, তবে সকাল থেকে ঢাকায় ফিরতি মানুষের চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছে, তবে আমরাও চেকপোস্ট বসিয়ে সতার্ক অবস্থায় আছি এবং মাস্কবিহীন কোনো মানুষকে আমরা ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছি না।
ঈদ-উল-ফিতরের তৃতীয় দিন ছিল গতকাল রোববার। নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া মানুষ পুনরায় রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সিটি কেন্দ্রীক গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদের আগে যে যার মত করে নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন।
কেউ মোটরসাইকেলে করে, কেউ সিটি/জেলা কেন্দ্রীক গণপরিবহনে ভেঙে ভেঙে, কেউবা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভাড়া করে আবার কেউ মিনি পিকআপে করে ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন। ছুটি শেষে নিজেদের রুটি-রুজি ও কাজের তাগিদে সবাই ফিরছে ঢাকায়। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানী ফের ব্যস্ত হতে শুরু করছে।
রোববার সকাল থেকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, সায়দাবাদ, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্বাভাবিক ভিড় দেখা গেছে। আন্তঃজেলা গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। অনেক মানুষকে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ফিরতে। এদিকে ফাঁকা ময়মনসিংহ সড়ক দিয়ে আসা ফিরতি মানুষদের টঙ্গী থেকে হেটে আব্দুল্লাহপুর আসতে দেখা গেছে। তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে আবার অন্য যানবাহনে করে বাসায় ফিরছেন। মোটরসাইকেল চালক ইসতিয়াখ বলেন, বাস চলে না তাতে কি!! নিজের মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। এখন রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা, চালাতেও ভালো লেগেছে। তাই মোটর সাইকেলে করে ঢাকায় ফিরলাম। আগামী কাল থেকে অফিস শুরু করবো। তবে ইশতিয়াখের মত অনেকেই এবার ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেলে করে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন। যারা মোটরসাইকেলে করেই আবার ঢাকামুখী হচ্ছেন। আজমত আলী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের চার দিন ছুটি পেয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলেন। ঈদের ছুটি শেষে তিনি রোববার সকালে ঢাকায় ফিরলেন। তিনি বলেন, ভালুকা থেকে মিনি পিকআপ ও টেম্পো করে করে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে একটি বাসে চড়ে টঙ্গী স্টেশনরোড পর্যন্ত এরপর পায়ে হেটে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত এসেছি। এখন একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর বাড্ডায় বাসায় যাবো। আগামীকাল থেকে আবার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করবো। তিনি বলেন, করোনা ঠেকাতে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করেছে। কিন্তু মানুষজন ঠিকই বাড়ি গেছে। কষ্ট করেই গেছে। এখন আমাদের ঢাকায় ফিরতেও কষ্ট হচ্ছে। কাউকেই আটকাতে পারেনি। যদি গণপরিবহন খোলা থাকতো তবে এত কষ্ট হতো না। আর বন্ধ রেখেও কোনো লাভ হয়নি। একটি গার্মেন্টসে সুইং সেকশনে কাজ করনে ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, দক্ষিণখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। পরিবারের সবাই থাকে টাঙ্গাইল। তাই ঈদের ছুটিতে আমি একা ঢাকায় থেকে কি করবো। তাই বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ছুটি শেষ হওয়ার এক-দুইদিন আগেই ঢাকায় এসে পড়েছি। কাল হয়তো অনেক ভিড় হবে। কিন্তু অনেক ভেঙে আসতে হয়েছে। খুব কষ্ট হয়েছে। এদিকে ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষদের চাপে রাজধানীর কিছু কিছু জায়গায় সামান্য যানবাহনের জটলা সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। তবে এই জটলা খুব বেশি সময় থাকছে না। আবারও পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা।
সেই ঝুঁকি নিয়েই ফেরিতে ফিরতি যাত্রা : স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবারও গাদাগাদি করে ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণ জনপদের কর্মজীবী মানুষ।
রোববার সকাল থেকেই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট হয়ে হাজার হাজার মানুষ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে।
লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন। বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, “জরুরি পরিষেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছে এবং গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।” শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচ- চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল। বাগেরহাট থেকে আসা কমল ম-ল নামের এক যাত্রী বললেন, নিজের জেলা থেকে তিনি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছেন। অন্যসময় এই ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা। আর বরিশাল শহর থেকে আসা ফাতেমা রহমান বলেন, “আমার বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত আসতেই ৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। না এসে উপায়ও নেই, অফিস খুলে গেছে।”
কাঁঠালবাড়িতে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ম্যানেজার ভজন কুমার সাহা জানালেন, এই নৌরুটে এখন চলাচল করছে ১৫টি ফেরি। “আজ ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ফেরিতে করেই তারা পার হচ্ছে। আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যরার ঘাটের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন।”
করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে দেশে চলছে লকডাউনের বিধিনিষেধ; লঞ্চ, ট্রেন ও দূর পাল্লার বাসও বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঈদযাত্রার সঙ্গে যেন ভাইরাস যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছে। ফেরিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
ঝুঁকি নিয়ে সেই ঈদযাত্রা ঠেকানো না গেলেও এখন মানুষের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করা যায় কীভাবে, সেই পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেছিলেন, “এই লকডাউনের মধ্যে আবার যদি লোকজন এভাবেই ফেরে তাহলে এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এ কারণে এই ফেরাটা যদি একটু বিলম্বিত করা যায় ভালো হয়। এছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে।” সেই বিপদ এড়াতে সরকার ইতোমধ্যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববারই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে।
ঝুঁকি নিয়েই ফেরিতে ফিরতি যাত্রা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ