শরীয়তপুর প্রতিনিধি: একটি মাত্র সেতুর অভাবে যুগের পর যুগ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরার ৪ টি ইউনিয়নের হাজারো মানুষকে। ঝুঁকি নিয়েই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হতে হচ্ছে প্রতিদিন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার জনপ্রতিনিধিরা সেতু তৈরির অশ্বাস দিলেও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা৷ অপরদিকে এলজিইডি বলছে, সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ফেদুল্লা বেপারি কান্দির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি পদ্মার শাখা নদী। এই নদীর উপর দিয়ে পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড় কান্দি, কু-েরচর, মাঝিরচর ইউনিয়নের অন্তত ২০ টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষের যাতায়াত। সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকোটি দীর্ঘদিনের হওয়ায় অধিকাংশ জায়গায় বাঁশ পচে গেছে। কয়েক জায়গায় মাঝখানে ফাঁকা হয়ে গেছে। মানুষ চলাচল করলে নড়বড়ে সাঁকোটি দুলতে থাকে। কয়েকটি স্থানের হাতলের বাঁশ ভেঙে পড়ে গেছে।এ অঞ্চলের বাসিন্দারা নদী পার হয়ে রূপবাবুর হাট, জাজিরা উপজেলা ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে থাকে। এছাড়াও চিকিৎসা, কৃষি পণ্য পারাপার ও ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই সাঁকোটি। দুর্ভোগ কমাতে স্থানীয় মাঝি মন্টুর উদ্যোগে ও স্থানীয়দের সহায়তায় ৩০০ মিটার একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। শীতে সাঁকো দিয়ে চলাচল করা গেলেও ভরা বর্ষায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরে সাঁকোটি। তখন নৌকা বা ট্রলারই পারাপারের একমাত্র ভরসা। নদীর পূর্বপাড় এলাকার বাসিন্দা মোসলেম বেপারী। তিনি তার বাড়িতে গরুর খামার তৈরি করেছেন। তবে সেতু না থাকায় অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তিনিও। মোসলেম বেপারী বলেন, এই নদী দিয়ে গরু পারাপারে চিন্তায় থাকি। আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। এতো কষ্ট করে গরু লালন-পালন করে বড় করি। কিন্তু এ গরু ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারি না। গ্রামেই অল্প দামে বিক্রি করে দিতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাকে নিয়ে যাতায়াত করেন গৃহবধূ আসমা আক্তার। তিনি বলেন, বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। ওকে একা ছাড়তে ভয় লাগে যদি সাঁকো ভেঙে নিচে পড়ে যায়। এখানে যদি একটি সেতু থাকতো তাহলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না। শিক্ষার্থী ইরফাত জাহান বলেন, আমাদের সাঁকো পার হতে ভীষণ ভয় লাগে। কিছুদিন আগেও আমার এক বন্ধু সাঁকো ভেঙে নিচে পড়ে গিয়ে বইখাতা সব পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল মান্নান চৌকিদার বলেন, সেতু না থাকায় আমাদের অনেক দুর্ভোগ। অনেক সময় দেখা যায় নদী পারাপারের আগেই পথে রোগী মারা যায়। গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে।বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন খেয়া ঘাটের মাঝি মন্টু মিয়া। তিনি বলেন, মানুষ নৌকার আশায় অনেক সময় নদীর পাড়ে বসে থাকে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে যাতায়াতে তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। আমাকেও মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যে মোবাইল ডেকে নিয়ে আসে। তাই নদীর ওপারের মানুষদের রাত বিরাতে যাতায়াতের কথা চিন্তা করে তিন বছর আগে স্থানীয়দের কাছ থেকে সাহায্য উঠিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী ইমন মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ও আমাদের এলজিইডি কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছি। ২০২১ সালে সেতুটির কাজ করতে গেলে সেতুর উচ্চতা বিআইডব্লিউটিএ থেকে যতোটুকু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তার সাথে এপ্রোস সড়কটি আমরা মেলাতে না পারায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। এখন নতুন একটি ডিজাইন করা হচ্ছে। ডিজাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওখানে সেতু তৈরির কাজ শুরু করা হবে।
ঝুঁকি নিয়ে যুগের পর যুগ ৩০০ মিটার সাঁকো পারাপার
জনপ্রিয় সংবাদ