ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং পরামর্শক রঙ্গনা হেরাথের বিশ্বাস, জয়ের মানসিকতাই নিউজিল্যান্ড সিরিজে বড় শক্তি হবে বাংলাদেশের।
১৯৯৯, ২০১৭ ও ২০২১—বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং পরামর্শক রঙ্গনা হেরাথের জীবনে এই তিন বছরের আছে আলাদা গুরুত্ব। সাবেক লঙ্কান স্পিনার ১৯৯৯ ও ২০১৭ সালে খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারানোর স্বাদ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে কোচ হিসেবে তিনি আবারও পেলেন সেই তৃপ্তি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশ দলের বিজয় উৎসব হেরাথকে যেন ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল খেলোয়াড়ি জীবনে। মজার ব্যাপার, দল আর ভূমিকা বদল হলেও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর আনন্দটা তাঁর কাছে মনে হয়েছে একই রকম।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই হেরাথ বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং পরামর্শকের দায়িত্বে আছেন। আর এই সিরিজ থেকেই জয়ের রথ ছুটছে বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে তিন সংস্করণেই হারানোর পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে। জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার এই মানসিকতাকেই বাংলাদেশ দলের জন্য বড় প্রাপ্তি মনে করেন হেরাথ, যেটা নিউজিল্যান্ড সিরিজেও হবে দলের বড় শক্তি। কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে হেরাথ বলছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জেতার পর দলের মধ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা কদিন পরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলব। আমি নিশ্চিত, নিউজিল্যান্ড সিরিজেও আমরা জয়ের মানসিকতা ধরে রাখতে পারব।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজের পর অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ দল। হেরাথের আশা, বাংলাদেশ দল জয়ের মানসিকতা ধরে রেখেই যাবে বিশ্বকাপে, ‘বিশ্বকাপের জন্য আমাদের দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। নিউজিল্যান্ড সিরিজেও জয়ের এই মানসিকতা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপে তা কাজে লাগবে।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও স্পিনই হবে বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র। ২০ ওভারের ম্যাচের ১২ ওভারই হয়তো করবেন স্পিনাররা। আর তার নেতৃত্বে থাকবেন সাকিব আল হাসানের মতো অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার, যাঁর বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা আছে হেরাথেরও। সেই সাকিবকে এখন দেখছেন একই ড্রেসিংরুমে। হেরাথ বলছিলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা, ‘সাকিবের বিপক্ষে খেলেও এখন তাঁর কোচ হিসেবে কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। পরিসংখ্যানই তাঁর হয়ে সব বলে দেয়। সাকিবের মানের ক্রিকেটার আপনি খুব কমই দেখতে পাবেন। আশা করছি তাঁর সঙ্গে আমার জুটিটা ভালো জমবে।’
বাংলাদেশ দলের কয়েকজন তরুণ স্পিনারও নজর কেড়েছেন হেরাথের। টেস্ট দলের মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানদের মধ্যে সফল স্পিনারের ছায়া দেখছেন তিনি। সাদা বলের ক্রিকেটে মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদরাও বলার মতো সাফল্য পাচ্ছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় টিকে থাকার জন্য যে মানসিকতা ও কৌশলগত জ্ঞান দরকার, সেটা নিয়ে তরুণদের সঙ্গে অনেক কাজ করার আছে বলে মনে করেন হেরাথ, ‘আমি এসেছি এক-দেড় মাস হলো। এই কয় দিনে দক্ষতা ও কৌশলগত যেসব দিক দেখেছি, তাতে ওরা প্রত্যেকেই ভালো জায়গায় আছে। আমি ওদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কৌশলগত ও মানসিক দিকটা আরও ভালো করার চেষ্টা করছি। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে দক্ষতার চেয়েও বেশি পার্থক্য তৈরি হয় মানসিকতায়। আমি এখন পর্যন্ত এটা নিয়েই কাজ করছি।’
বাংলাদেশ দলের ফিঙ্গার স্পিনারদের ভিড়ে একমাত্র লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম। জিম্বাবুয়ে সফরে দলে থাকলেও বাবার মৃত্যুর কারণে না খেলেই দেশে ফিরতে হয় তাঁকে। কোয়ারেন্টিন নীতির কারণে খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও। আর এর আগেও দলে নিয়মিত হতে পারেননি চোটের বাধায়। তবে নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে তিনি আছেন। আছেন বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ পরিকল্পনাতেও। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দলে একজন লেগ স্পিনার থাকাটাকে বাড়তি স্বস্তিই মনে করেন হেরাথ, ‘ভারতীয় দলে চাহাল, কুলদিপরা আছে। শ্রীলঙ্কার আছে ওনিন্দু, সান্দাকানরা। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের দলে বিপ্লব (আমিনুল) আছে। জিম্বাবুয়েতে তাকে দেখেছি। নেটে ভালোই বল করছে। আশা করি সে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভালো করবে।’
জয়ের মানসিকতাই বড় শক্তি : রঙ্গনা হেরাথ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ