ঢাকা ১০:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

জ্বিন-তাবিজে ‘গোপন সমস্যা’ সমাধানের নামে ‘প্রতারণা’

  • আপডেট সময় : ০২:৩৯:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাবতীয় গোপন সমস্যা সমাধানের কথা বলে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক ‘ভ- কবিরাজকে’ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত মঙ্গলবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানান র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম ওয়ায়েস কুরুনী। চার বছর আগে লৌহজং এলাকায় বিয়ে করে সেখানেই থাকা শুরু করেন তিনি।
গতকাল বুধবার তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, “নানাভাবে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন তিনি। প্রতারণার অর্থে লৌহজংয়ে জমি কিনে বাড়ি করেছেন ওয়ায়েস কুরুনী।”
র‌্যাব ৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কবিরাজ আলী আশরাফ, তান্ত্রিক কবিরাজ ও হুমায়ুন আহমেদ নামে তিনটি ফেইসবুক আইডি রয়েছে ওয়ায়েস কুরুনীর। এসব আইডি থেকে ছেলে-মেয়েদের গোপন রোগের চিকিৎসা, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থতা-সফলতা, বিয়ে না হওয়া, চাকরি না পাওয়া, জমি-জমার ঝামেলা, কাউকে বশে আনা, মামলায় জয়ী হওয়া, বিয়ে বন্ধ ও বিয়ের প্রস্তাব ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের কথা লিখে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক আরিফ বলেন, এসব কাজের জন্য তার ২০ থেকে ২২ জন এজেন্ট রয়েছে। তারা সেসব পোস্ট বারবার বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। হাদিয়ার নামে বিকাশে টাকা আর কুরিয়ারে স্বর্ণলংকার নিতেন। অর্ধ শতাধিক মানুষ ওয়ায়েস কুরুনীর ফাঁদে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্বিন চালানোর মাধ্যমে ওষুধ এবং ‘গায়েবি চিকিৎসার’ নামে ‘কচি কবুতরের রক্ত, ইদুরের মাংস, বানরের লোম, বাদুরের পা, গভীর রাতে শ্মশানঘাট হতে মাটির কলসি পানি সংগ্রহ’ নানা কাজ করতে বলতেন আগ্রহীদের।
“এরপর এসব জিনিস সংগ্রহ করা সম্ভব নয় জানালে ওয়ায়েস কুরুনী নিজেই সেগুলো সংগ্রহের কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন এবং বিকাশে টাকা নিতেন। আবার তার চিকিৎসায় কাজ না হওয়ার অভিযোগ দিলে জ্বিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে জ্বিনকে স্বর্ণালঙ্কার উপহার দেওয়ার কথা বলতেন। তার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিরা সেগুলো কুরিয়ারে পাঠাতেন।”
মাঠে কাজ করতেন নারী এজেন্টরা : র‌্যাব জানায়, ওয়ায়েস কুরুনীর নারী এজেন্টরা বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে অপেক্ষমান অভিভাবকদের সঙ্গে মিশে যান। অভিভাবক পরিচয়ে তারা স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের নানা সমস্যার কথা বলে ‘কবিরাজি চিকিৎসা ও তাবিজের মাধ্যমে’ সমাধানের প্রলোভন দেন।
“অন্যদিকে টার্গেট করা নারী-পুরুষদের সঙ্গে অনলাইনে চ্যাটিং ও ভয়েস কলের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতেন ওয়ায়েস। কেউ তার কথায় অবিশ্বাস বা সন্দেহ করলে ‘দুষ্টু জ্বিনের মাধ্যমে’ তাদের হেনস্তার হুমকি দিতেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “মাদ্রাসার হেফজখানা পর্যন্ত লেখাপড়া করা ওই যুবক ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই কবিরাজি পেশা শুরু করেন। প্রথম দিকে যাত্রীবাহী বাসে তাবিজ ও বই বিক্রি করতেন। এরপর কাবিরাজির নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু করেন।” গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে পাগড়ি, স্বর্ণালঙ্কার, সাপ, তাবিজের খোসা, হরিণের চামড়া, বনজ গাছ গাছালি, সিংগা ও হাড়ের টুকরা জব্দের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জ্বিন-তাবিজে ‘গোপন সমস্যা’ সমাধানের নামে ‘প্রতারণা’

আপডেট সময় : ০২:৩৯:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাবতীয় গোপন সমস্যা সমাধানের কথা বলে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক ‘ভ- কবিরাজকে’ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত মঙ্গলবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানান র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম ওয়ায়েস কুরুনী। চার বছর আগে লৌহজং এলাকায় বিয়ে করে সেখানেই থাকা শুরু করেন তিনি।
গতকাল বুধবার তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, “নানাভাবে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন তিনি। প্রতারণার অর্থে লৌহজংয়ে জমি কিনে বাড়ি করেছেন ওয়ায়েস কুরুনী।”
র‌্যাব ৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কবিরাজ আলী আশরাফ, তান্ত্রিক কবিরাজ ও হুমায়ুন আহমেদ নামে তিনটি ফেইসবুক আইডি রয়েছে ওয়ায়েস কুরুনীর। এসব আইডি থেকে ছেলে-মেয়েদের গোপন রোগের চিকিৎসা, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থতা-সফলতা, বিয়ে না হওয়া, চাকরি না পাওয়া, জমি-জমার ঝামেলা, কাউকে বশে আনা, মামলায় জয়ী হওয়া, বিয়ে বন্ধ ও বিয়ের প্রস্তাব ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের কথা লিখে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ৩ এর অধিনায়ক আরিফ বলেন, এসব কাজের জন্য তার ২০ থেকে ২২ জন এজেন্ট রয়েছে। তারা সেসব পোস্ট বারবার বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। হাদিয়ার নামে বিকাশে টাকা আর কুরিয়ারে স্বর্ণলংকার নিতেন। অর্ধ শতাধিক মানুষ ওয়ায়েস কুরুনীর ফাঁদে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্বিন চালানোর মাধ্যমে ওষুধ এবং ‘গায়েবি চিকিৎসার’ নামে ‘কচি কবুতরের রক্ত, ইদুরের মাংস, বানরের লোম, বাদুরের পা, গভীর রাতে শ্মশানঘাট হতে মাটির কলসি পানি সংগ্রহ’ নানা কাজ করতে বলতেন আগ্রহীদের।
“এরপর এসব জিনিস সংগ্রহ করা সম্ভব নয় জানালে ওয়ায়েস কুরুনী নিজেই সেগুলো সংগ্রহের কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন এবং বিকাশে টাকা নিতেন। আবার তার চিকিৎসায় কাজ না হওয়ার অভিযোগ দিলে জ্বিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে জ্বিনকে স্বর্ণালঙ্কার উপহার দেওয়ার কথা বলতেন। তার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিরা সেগুলো কুরিয়ারে পাঠাতেন।”
মাঠে কাজ করতেন নারী এজেন্টরা : র‌্যাব জানায়, ওয়ায়েস কুরুনীর নারী এজেন্টরা বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে অপেক্ষমান অভিভাবকদের সঙ্গে মিশে যান। অভিভাবক পরিচয়ে তারা স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের নানা সমস্যার কথা বলে ‘কবিরাজি চিকিৎসা ও তাবিজের মাধ্যমে’ সমাধানের প্রলোভন দেন।
“অন্যদিকে টার্গেট করা নারী-পুরুষদের সঙ্গে অনলাইনে চ্যাটিং ও ভয়েস কলের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতেন ওয়ায়েস। কেউ তার কথায় অবিশ্বাস বা সন্দেহ করলে ‘দুষ্টু জ্বিনের মাধ্যমে’ তাদের হেনস্তার হুমকি দিতেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “মাদ্রাসার হেফজখানা পর্যন্ত লেখাপড়া করা ওই যুবক ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই কবিরাজি পেশা শুরু করেন। প্রথম দিকে যাত্রীবাহী বাসে তাবিজ ও বই বিক্রি করতেন। এরপর কাবিরাজির নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু করেন।” গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে পাগড়ি, স্বর্ণালঙ্কার, সাপ, তাবিজের খোসা, হরিণের চামড়া, বনজ গাছ গাছালি, সিংগা ও হাড়ের টুকরা জব্দের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।