ঢাকা ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ

  • আপডেট সময় : ০১:১২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অগাস্ট ২০২২
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ। অপরদিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে পুঁজি করে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্থোাও কোথাও রাত থেকেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা শুরু হয়। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে জনমনে। শুক্রবার দিবাগত রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ ও পেট্রলে বেড়েছে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দাম বাড়ার আগে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০, অকটেন ৮৯ ও পেট্রল ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো তেলের দাম। তবে ওই সময় পেট্রোল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।
এদিকে রাজধানীর শ্যামলীতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে করা মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ব্যানারবিহীন একটি মিছিল থেকে এ ভাঙচুর চালানো হয়। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একটি মিছিল হয়েছে। ওই মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজক কারা করেছিল জানতে চাইলে ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, মিছিলের সামনে কোনো ব্যানার ছিল না। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করেছেন। যে গাড়িটি ভাঙচুরের কথা শোনা যাচ্ছে সেটি আমাদের থানার গাড়ি না। গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্যামলী থেকে শতাধিক মানুষের একটি বিক্ষোভ মিছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। পথে শ্যামলী শিশু মেলার সামনে রাখা পুলিশের একটি টহল ভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়।
জ্বালানির দাম বাড়ানো ছাড়া কিছু করার ছিল না: প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। বিশ্ববাজারের প্রেক্ষাপটে আমরা বাড়তি কিছু করিনি। আর বিশ্ববাজারে যদি দাম কমে আসে তাহলে আমরা দাম আবার সমন্বয় করবো।
গতকাল শনিবার কেরানীগঞ্জে তার বাসভবনে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। এই সময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এসব কথা জানান। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি যে, দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় কিনা। কিন্তু এটা তারপরও সবার জন্য এটা সহনীয় নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের এখন এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন ১৭৩ ডলার ছিল, তখন যদি দাম বাড়াতে হতো তাহলে লিটার প্রতি ৮০ টাকা বাড়াতে হতো। আমরা তারপরও লোকসান দিয়ে গেছি। কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছিলাম, আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম আমরা নিজেদের অর্থ কতটুকু খরচ করতে পারি। কিন্তু এখন বিপিসির পক্ষে আর লোকসান টানা সম্ভব না। ৮ হাজার কোটি টাকার উপরে লোকসান হচ্ছে। এখন তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দাম বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজেলের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও লিটার প্রতি ৮ টাকা লোকসান গুনতে হবে। সেই লোকসান সমন্বয় করতেই অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোলের দাম বাড়ানোর আরেকটি কারণ হচ্ছে অকটেনের ভেজাল বন্ধ করা।’তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে ধৈর্য ধরতেই হবে। জ্বালানি তেলের নতুন দাম সমাজের সবার কাছে সহনীয় হবে না। অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারের কাছে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া উপায় ছিল না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বার বার বলা হচ্ছে সাশ্রয়ী হন, তেল কম ব্যবহার করেন, গাড়ি কম ব্যবহার করেন। কারণ যানবাহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি ডিজেল ব্যবহার করা হয়। মাত্র ১০ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার হতো বিদ্যুতে। এখনও যানবহন নিয়ন্ত্রণ করার সময় আছে।’
রাজধানীতে বাস কম, ভোগান্তি চরমে, দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে বিত-া
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর রাজধানীর সড়কে দেখা মিলেনি গণপরিবহনের। সকাল থেকেই রাজধানীতে বাস চলাচল ছিল কম। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি যাত্রীরা। দুয়েকটা বাস মিললেও আদায় করা হয় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি। এ নিয়ে চালক-সহকারীদের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়ান যাত্রীরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, নতুন বাজার, বাড্ডা, শাহবাগ ও বাংলামোটরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। অনেকেই হেঁটে হেঁটে দূরত্ব কমান। পরে কিছুটা রিকশায় চড়ে যান। আর বাসে উঠতেও পারলেও ভাড়া আদায় করা হয় দেড় গুণ থেকে দ্বিগুণ! আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে গাড়িতে গাড়িতে বাকবিত-ার কোনো শেষ নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, তেলের দাম বেড়েছে, কিন্তু এখনও ভাড়া বাড়ে নাই। তাহলে আগে থেকেই ভাড়া বেশি নিচ্ছে কেনো। শুধু তাই নয়, দাম বাড়ানোর আগে থেকেই রাজধানীর পরিবহণগুলো বেশি ভাড়া নিয়ে আসছে। সর্বশেষ যখন ভাড়া সমন্বয় করা হয় সেই ভাড়ার চেয়ে বেশি নিয়ে আসছে গণপরিবহনগুলো। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। চালক-হেলপাররা বলছেন, ডিজেলের দাম হুট করে যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা বাসগুলোর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই আপাতত যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নতুন ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ

আপডেট সময় : ০১:১২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অগাস্ট ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ। অপরদিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে পুঁজি করে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্থোাও কোথাও রাত থেকেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা শুরু হয়। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে জনমনে। শুক্রবার দিবাগত রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ ও পেট্রলে বেড়েছে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দাম বাড়ার আগে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০, অকটেন ৮৯ ও পেট্রল ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো তেলের দাম। তবে ওই সময় পেট্রোল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।
এদিকে রাজধানীর শ্যামলীতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে করা মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ব্যানারবিহীন একটি মিছিল থেকে এ ভাঙচুর চালানো হয়। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একটি মিছিল হয়েছে। ওই মিছিল থেকে পুলিশের একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে গাড়িটি কোন থানার তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজক কারা করেছিল জানতে চাইলে ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, মিছিলের সামনে কোনো ব্যানার ছিল না। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করেছেন। যে গাড়িটি ভাঙচুরের কথা শোনা যাচ্ছে সেটি আমাদের থানার গাড়ি না। গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্যামলী থেকে শতাধিক মানুষের একটি বিক্ষোভ মিছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। পথে শ্যামলী শিশু মেলার সামনে রাখা পুলিশের একটি টহল ভ্যানে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়।
জ্বালানির দাম বাড়ানো ছাড়া কিছু করার ছিল না: প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। বিশ্ববাজারের প্রেক্ষাপটে আমরা বাড়তি কিছু করিনি। আর বিশ্ববাজারে যদি দাম কমে আসে তাহলে আমরা দাম আবার সমন্বয় করবো।
গতকাল শনিবার কেরানীগঞ্জে তার বাসভবনে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। এই সময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এসব কথা জানান। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি যে, দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় কিনা। কিন্তু এটা তারপরও সবার জন্য এটা সহনীয় নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের এখন এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন ১৭৩ ডলার ছিল, তখন যদি দাম বাড়াতে হতো তাহলে লিটার প্রতি ৮০ টাকা বাড়াতে হতো। আমরা তারপরও লোকসান দিয়ে গেছি। কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছিলাম, আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম আমরা নিজেদের অর্থ কতটুকু খরচ করতে পারি। কিন্তু এখন বিপিসির পক্ষে আর লোকসান টানা সম্ভব না। ৮ হাজার কোটি টাকার উপরে লোকসান হচ্ছে। এখন তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দাম বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজেলের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও লিটার প্রতি ৮ টাকা লোকসান গুনতে হবে। সেই লোকসান সমন্বয় করতেই অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোলের দাম বাড়ানোর আরেকটি কারণ হচ্ছে অকটেনের ভেজাল বন্ধ করা।’তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে ধৈর্য ধরতেই হবে। জ্বালানি তেলের নতুন দাম সমাজের সবার কাছে সহনীয় হবে না। অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারের কাছে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া উপায় ছিল না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বার বার বলা হচ্ছে সাশ্রয়ী হন, তেল কম ব্যবহার করেন, গাড়ি কম ব্যবহার করেন। কারণ যানবাহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি ডিজেল ব্যবহার করা হয়। মাত্র ১০ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার হতো বিদ্যুতে। এখনও যানবহন নিয়ন্ত্রণ করার সময় আছে।’
রাজধানীতে বাস কম, ভোগান্তি চরমে, দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে বিত-া
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর রাজধানীর সড়কে দেখা মিলেনি গণপরিবহনের। সকাল থেকেই রাজধানীতে বাস চলাচল ছিল কম। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি যাত্রীরা। দুয়েকটা বাস মিললেও আদায় করা হয় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি। এ নিয়ে চালক-সহকারীদের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়ান যাত্রীরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, নতুন বাজার, বাড্ডা, শাহবাগ ও বাংলামোটরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। অনেকেই হেঁটে হেঁটে দূরত্ব কমান। পরে কিছুটা রিকশায় চড়ে যান। আর বাসে উঠতেও পারলেও ভাড়া আদায় করা হয় দেড় গুণ থেকে দ্বিগুণ! আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে গাড়িতে গাড়িতে বাকবিত-ার কোনো শেষ নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, তেলের দাম বেড়েছে, কিন্তু এখনও ভাড়া বাড়ে নাই। তাহলে আগে থেকেই ভাড়া বেশি নিচ্ছে কেনো। শুধু তাই নয়, দাম বাড়ানোর আগে থেকেই রাজধানীর পরিবহণগুলো বেশি ভাড়া নিয়ে আসছে। সর্বশেষ যখন ভাড়া সমন্বয় করা হয় সেই ভাড়ার চেয়ে বেশি নিয়ে আসছে গণপরিবহনগুলো। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। চালক-হেলপাররা বলছেন, ডিজেলের দাম হুট করে যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা বাসগুলোর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই আপাতত যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নতুন ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।