ঢাকা ০৭:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অগাস্ট ২০২২
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও। দলটির একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হয়। কিন্তু তারা এড়িয়ে যান। দলটির অন্তত তিনজন সভাপতিম-লীর সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতাদের কেউ কেউ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অদক্ষতার কথাও বলছেন। দলটির সম্পাদকম-লীর সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তবে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ।
ডলার সংকট এবং বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর পরই জনমনে দেখা দেয় চরম ক্ষোভ। পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। ভোক্তাপর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম বাড়ানোর আগে শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, যতদিন সম্ভব ছিল, ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়ে কিছুটা সমন্বয় করতে হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে। শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার গত অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। আশেপাশের দেশগুলো এমন ভর্তুকি দেয়নি। ফলে সেসব দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য অনেক আগেই বাড়ানো হয়েছে। তাদের মূল্য কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
‘পাশের দেশ ভারতে অনেক আগে থেকে ডিজেলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ টাকা এবং অকটেনের দাম ১৩৪-১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। আমাদের দেশে মূল্য কম হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে প্রচুর জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যাচ্ছিল। সরকারের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় আমাদের দেশে আজ যে মূল্যবৃদ্ধি, আশেপাশের দেশগুলো বহু আগেই তা বাড়িয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে ওই মন্ত্রণালয়ে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’ শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মানুষের ক্ষোভের বিষয়টি উল্লেখ করে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সাংবাদিকদের তিনি জ্বালানি মন্ত্রীর (প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। সরকার অনেক ভর্তুকি দিত এবং অনেক টাকা লোকসান করত। আরেকটা বিষয় হলো, ভারতের চেয়ে আমাদের জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ায় সেখানে তা পাচার হতো। সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, আজকের কঠিন বিশ্ববাস্তবতায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো একটি অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হলো। ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’- এ জঘন্য নীতিতে বিশ্বাস করে না দেশপ্রেমিক আওয়ামী লীগ সরকার। ভোটের আগের বছর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দলের জন্য আত্মহত্যার শামিল জেনেও দেশ বাঁচানোর বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হলো।” ‘অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে যে ধাক্কা আসত তা সামাল দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হতো না। দেশ বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে গৃহীত এ সিদ্ধান্তে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ ও আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’— বলেন এ রাজনীতিক।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

আপডেট সময় : ০১:৪৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও। দলটির একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হয়। কিন্তু তারা এড়িয়ে যান। দলটির অন্তত তিনজন সভাপতিম-লীর সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতাদের কেউ কেউ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অদক্ষতার কথাও বলছেন। দলটির সম্পাদকম-লীর সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তবে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ।
ডলার সংকট এবং বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর পরই জনমনে দেখা দেয় চরম ক্ষোভ। পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। ভোক্তাপর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম বাড়ানোর আগে শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, যতদিন সম্ভব ছিল, ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়ে কিছুটা সমন্বয় করতে হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে। শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার গত অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। আশেপাশের দেশগুলো এমন ভর্তুকি দেয়নি। ফলে সেসব দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য অনেক আগেই বাড়ানো হয়েছে। তাদের মূল্য কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
‘পাশের দেশ ভারতে অনেক আগে থেকে ডিজেলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ টাকা এবং অকটেনের দাম ১৩৪-১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। আমাদের দেশে মূল্য কম হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে প্রচুর জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যাচ্ছিল। সরকারের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় আমাদের দেশে আজ যে মূল্যবৃদ্ধি, আশেপাশের দেশগুলো বহু আগেই তা বাড়িয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে ওই মন্ত্রণালয়ে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’ শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মানুষের ক্ষোভের বিষয়টি উল্লেখ করে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সাংবাদিকদের তিনি জ্বালানি মন্ত্রীর (প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। সরকার অনেক ভর্তুকি দিত এবং অনেক টাকা লোকসান করত। আরেকটা বিষয় হলো, ভারতের চেয়ে আমাদের জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ায় সেখানে তা পাচার হতো। সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, আজকের কঠিন বিশ্ববাস্তবতায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো একটি অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হলো। ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’- এ জঘন্য নীতিতে বিশ্বাস করে না দেশপ্রেমিক আওয়ামী লীগ সরকার। ভোটের আগের বছর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দলের জন্য আত্মহত্যার শামিল জেনেও দেশ বাঁচানোর বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হলো।” ‘অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে যে ধাক্কা আসত তা সামাল দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হতো না। দেশ বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে গৃহীত এ সিদ্ধান্তে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ ও আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’— বলেন এ রাজনীতিক।