ঢাকা ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

জোয়ারের পানিতে দেশের ৯ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি

  • আপডেট সময় : ০১:২৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১
  • ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার বেগে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ওই অঞ্চলে ৩ ঘণ্টা তা-ব চালায় ইয়াস। ভয়াবহ প্রভাব পড়ে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূলীয় এলাকায়ও। এদিকে বাংলাদেশে আর আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ইয়াসের প্রভাবে ওড়িশায় দুইজন ও পশ্চিমবঙ্গে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে পড়ে গাছ। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকা। ঝড় চলাকালীন সময় মানুষের মধ্যে তীব্র আতংক দেখা দেয়। খবর এনডিটিভির। দিঘায় জলের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কার্যত পানির নিচে চলে গিয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। ভেসে গিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ধামড়াতেও প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বর্ষণ। বিধ্বস্ত দিঘায় উদ্ধার অভিযানে নামে সেনা সদস্যরা।
মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘায় শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতাও বাড়ছিল। সময় যত এগিয়েছে তত বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। সেই সঙ্গে দিঘা ও নিউ দিঘায় গার্ডরেল ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। তার ফলে বুধবার সকালেই জলমগ্ন হয়ে যায় মূল শহর। ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গে নামানো হয় সেনা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মমতার সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি বলেন, ‘আমফানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক কেউ আমরা চাই না। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে যেভাবে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সব কাজেই এভাবে সমন্বয় রাখা প্রয়োজন।’ ওড়িশায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নেয়া হয়েছে। ওড়িশা সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাখা রীতিমতো কঠিন কাজ।
এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: মমতা : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ঝড়-বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাসে এক কোটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের বড় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ভারতের গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ রাত ৮টা ৩৫ মিনিট নাগাদ আবার বন্যা আসতে পারে। ত্রাণ শিবিরে যারা আছেন, তারা এখনই বাড়ি ফিরবেন না।’ ঝড়-বৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গে ১৩৪টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে। দিঘা থেকে দেড় লাখ লোককে সরানো হয়েছেয। আরও লোক সরানোর চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক করোনা আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেও কাজ করছেন। কলকাতায় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও নিরবচ্ছিন্ন। তবে ভরা কোটালের জন্য কী হবে জানি না। এ জন্য বাংলায় ক্ষতি বেশি হবে। প্রত্যেক বছর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়। সরকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধান থাকুন। ৭-৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে।’
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ২৭ উপজেলায় ক্ষতি : বাংলাদেশে আর আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব উপজেলার মানুষের সহায়তায় সাড়ে ১৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি বিকেল ৪টা নাগাদ পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওড়িশা অতিক্রম করবে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির আঘাত হানার কোনো সুযোগ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে ১৪টি উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বা বাঁধ ভেঙে যেসব মৎস্য ও কৃষিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মৎস্যজীবী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
“যাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সরবরাহ করা হবে।”
এনামুর রহমান বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তারা ও স্থানীয় প্রশাসক মিলে নি¤œাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল থেকে আগেই মানুষকে সরিয়ে এনেছিল।”
আশ্রয়কেন্দ্র এবং মানবিক সহায়তার যথেষ্ট সংস্থান আগে থেকেই করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যথেষ্ট মাস্ক এবং স্বাস্থ্য উপকরণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। তিনি জানান, জেলা প্রশাসক, উপজেলার নির্বাহী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে।
বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আছে। সেটার সভা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যদি কোনো বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে পনি সম্পদ মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে। সাথে সাথে সারিয়ে ফেলার জন্য তারা কাজ করবে।”
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যে যে জেলায় বাঁধ ভেঙে গেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
“আমরা তথ্য পেয়েছি অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত বা পুননির্মাণের কাজ চলছে।” নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখন যে বাঁধগুলো আছে সেগুলো ষাটের দশকের। এগুলো সংস্কার করলে খুব একটা লাভ হবে না। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় একটা মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। কারণ আমি নিজেও ভিজিট করে দেখেছি বাঁধগুলো সরু হতে হতে জমির আইলের (আল) মত হয়ে গেছে। “তাছাড়া বেশিরভাগই হচ্ছে মাটির বাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে দুর্যোগ বেড়েছে, মাটির বাঁধ দিয়ে তা রক্ষা করা যাবে না।“ উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা এবং পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নে ডেল্টা প্লানে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেজন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এই রক্তস্রোত যেন বৃথা না যায়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে: খালেদা জিয়া

জোয়ারের পানিতে দেশের ৯ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি

আপডেট সময় : ০১:২৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার বেগে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ওই অঞ্চলে ৩ ঘণ্টা তা-ব চালায় ইয়াস। ভয়াবহ প্রভাব পড়ে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূলীয় এলাকায়ও। এদিকে বাংলাদেশে আর আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ইয়াসের প্রভাবে ওড়িশায় দুইজন ও পশ্চিমবঙ্গে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে পড়ে গাছ। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকা। ঝড় চলাকালীন সময় মানুষের মধ্যে তীব্র আতংক দেখা দেয়। খবর এনডিটিভির। দিঘায় জলের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কার্যত পানির নিচে চলে গিয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। ভেসে গিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ধামড়াতেও প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বর্ষণ। বিধ্বস্ত দিঘায় উদ্ধার অভিযানে নামে সেনা সদস্যরা।
মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘায় শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতাও বাড়ছিল। সময় যত এগিয়েছে তত বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। সেই সঙ্গে দিঘা ও নিউ দিঘায় গার্ডরেল ছাপিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। তার ফলে বুধবার সকালেই জলমগ্ন হয়ে যায় মূল শহর। ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গে নামানো হয় সেনা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মমতার সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি বলেন, ‘আমফানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক কেউ আমরা চাই না। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে যেভাবে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সব কাজেই এভাবে সমন্বয় রাখা প্রয়োজন।’ ওড়িশায় প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নেয়া হয়েছে। ওড়িশা সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাখা রীতিমতো কঠিন কাজ।
এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: মমতা : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ঝড়-বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাসে এক কোটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের বড় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ভারতের গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ রাত ৮টা ৩৫ মিনিট নাগাদ আবার বন্যা আসতে পারে। ত্রাণ শিবিরে যারা আছেন, তারা এখনই বাড়ি ফিরবেন না।’ ঝড়-বৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গে ১৩৪টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে। দিঘা থেকে দেড় লাখ লোককে সরানো হয়েছেয। আরও লোক সরানোর চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক করোনা আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেও কাজ করছেন। কলকাতায় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও নিরবচ্ছিন্ন। তবে ভরা কোটালের জন্য কী হবে জানি না। এ জন্য বাংলায় ক্ষতি বেশি হবে। প্রত্যেক বছর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়। সরকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধান থাকুন। ৭-৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে।’
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ২৭ উপজেলায় ক্ষতি : বাংলাদেশে আর আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব উপজেলার মানুষের সহায়তায় সাড়ে ১৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশা করছি বিকেল ৪টা নাগাদ পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওড়িশা অতিক্রম করবে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির আঘাত হানার কোনো সুযোগ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে ১৪টি উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বা বাঁধ ভেঙে যেসব মৎস্য ও কৃষিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মৎস্যজীবী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে।
“যাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সরবরাহ করা হবে।”
এনামুর রহমান বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তারা ও স্থানীয় প্রশাসক মিলে নি¤œাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল থেকে আগেই মানুষকে সরিয়ে এনেছিল।”
আশ্রয়কেন্দ্র এবং মানবিক সহায়তার যথেষ্ট সংস্থান আগে থেকেই করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যথেষ্ট মাস্ক এবং স্বাস্থ্য উপকরণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। তিনি জানান, জেলা প্রশাসক, উপজেলার নির্বাহী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আছে।
বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আছে। সেটার সভা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যদি কোনো বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে পনি সম্পদ মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে। সাথে সাথে সারিয়ে ফেলার জন্য তারা কাজ করবে।”
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যে যে জেলায় বাঁধ ভেঙে গেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধানে সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
“আমরা তথ্য পেয়েছি অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত বা পুননির্মাণের কাজ চলছে।” নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখন যে বাঁধগুলো আছে সেগুলো ষাটের দশকের। এগুলো সংস্কার করলে খুব একটা লাভ হবে না। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় একটা মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। কারণ আমি নিজেও ভিজিট করে দেখেছি বাঁধগুলো সরু হতে হতে জমির আইলের (আল) মত হয়ে গেছে। “তাছাড়া বেশিরভাগই হচ্ছে মাটির বাঁধ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে দুর্যোগ বেড়েছে, মাটির বাঁধ দিয়ে তা রক্ষা করা যাবে না।“ উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা এবং পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নে ডেল্টা প্লানে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেজন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।