প্রত্যাশা ডেস্ক: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের আগে সমমনা যে কোনো দলই জোটে আসতে পারে। আবার অন্যান্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমেও সামনে এগোতে পারে দেশের সর্ববৃহৎ এই রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। সংগঠন ছোট বড় যা-ই হোক দেশ ও জাতীয় স্বার্থে যারাই একমত হবে- তাদের সবাইকেই এই জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর এই জোটের শরিকদের একে অপরের সম্পর্ক হবে ইস্পাতকঠিন। নির্বাচন ও সরকার গঠন থেকে শুরু করে সরকার পরিচালনা ও রাষ্ট্র গঠনকাজেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে তাদের। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কেউ যাতে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরব ভূমিকা পালন করবে এই জোট। প্রয়োজনে রাজপথে প্রতিরোধ গড়া হবে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে। নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ফের ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন। নির্বাচনি জোট বা আসন সমঝোতা যা-ই হোক না কেন- ‘নির্বাচনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার’ গঠনে বিএনপির প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। জোটভুক্ত কিংবা সমমনা কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিক বা না নিক, অথবা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হোক বা না হোক- ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ঘোষিত জাতীয় সরকারের পার্ট হবে তারা। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বিকালে একত্রে ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার বিকাল ৫টায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে একত্রে বৈঠক করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দক্ষিণ বা উত্তরপন্থি নয়, বিএনপি বাংলাদেশপন্থি বা মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল। জোটের বিষয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত সমমনা যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হতে পারে। তবে জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাই যেন এক জায়গায় বসতে পারে, সেরকম পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে বিএনপি। এজন্য সব পন্থিদের সঙ্গেই আলোচনা চলছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের বর্ষপূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরুর আগে নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চলমান বৈঠকে জোট শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তারেক রহমান তাদের সবাইকে সঙ্গে রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন- সেই আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকে ত্যাগ স্বীকার করায় সমমনা দল ও জোটগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানান। এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী বিরাজমান ঐক্য অটুট রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন কিংবা আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়েও শিগগিরই আলোচনা শুরু করা হবে। যাতে করে শরিক দলের প্রার্থীরা মাঠে কাজ করতে এবং নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেন। সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে সমমনা দল ও জোটের অনেকের কাছে আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। মূলত এই বৈঠকে মিত্রদের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যাশিত আসনের তালিকা বিএনপিকে দেওয়া হবে। তবে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এবার নির্বাচনি জোট হচ্ছে না বিএনপির। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের এই শরিক দলের সঙ্গে এবার জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না দলটি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপি এখন মূলত সেই দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট ও জাতীয় সরকার গঠনে মনোযোগী, যারা একযোগে আন্দোলনে এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। এখন এর বাইরে কিছু ভাবা হচ্ছে না। তবে নবগঠিত দল এনসিপির জন্য এখনো বিএনপির দুয়ার উন্মুক্ত রয়েছে।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যেসব দল ও জোটের সঙ্গে সমন্বয় করেন, সেগুলোর সঙ্গে তারেক রহমান গতকাল বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যেসব জোট ও দলের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন, তাদের সঙ্গে আজ শনিবার বৈঠক করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
যুগপতের মিত্রদের সঙ্গে তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠক প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা এত দিন একসঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করেছি। আজকে একটা পর্যায়ে আমরা উপনীত হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের একটি সুস্পষ্ট সময় এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেছেন। বৈঠকে এগুলোসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
১২-দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই-সংগ্রাম করেছি, তাদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত এবং আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অবশেষে একটা স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। এতে আমরা আনন্দিত।’ ভবিষ্যতেও ফ্যাসিবাদবিরোধী এই ঐক্য যাতে অটুট থাকে, সেটার ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।
একই বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে নির্বাচন, আসন বণ্টন বা আরও কিছু নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশ নির্বাচনমুখী হয়েছে। নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়েছে। এটা বিএনপির নেতৃত্বে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ফসল।
১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান বলেন, হঠাৎই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট বার্তা পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় পরবর্তী রাজনৈতিক করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসি/