নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তাজনূভা জাবীন। একইসঙ্গে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ বিবৃতিতে তাজনূভা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট হওয়ার বিষয়টিতে শুধু আদর্শগত বা ঐতিহাসিক কারণে নয়, বরং যে প্রক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটিই তার প্রধান আপত্তির জায়গা। তার দাবি, এটিকে রাজনৈতিক কৌশল বা নির্বাচনি সমঝোতা বলা হলেও বাস্তবে এটি একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার ফল।
তাজনূভা বলেন, কয়েকদিন আগেই সারা দেশ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের ডাক দিয়ে ১২৫ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩০টি আসনে সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার অভিযোগ, সিদ্ধান্তটি এমনভাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঠেলে নেওয়া হয়েছে যাতে কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচনেও যেতে না পারে।
তিনি বলেন, গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক, মধ্যপন্থা, নারী ও জাতিসত্তার রাজনীতির যে কথা এনসিপি শুরু থেকে বলে এসেছে, তিনি সেই রাজনীতির ধারক ছিলেন। একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তিনি এই অবস্থান ধারণ করেই দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দলের ভেতরে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ‘মাইনাসের রাজনীতি’ ও আস্থাহীনতার কারণে সম্মানজনকভাবে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
মনোনয়ন হারানোর ভয়ে জোটের বিরোধিতা করছেন—এমন অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে তাজনূভা বলেন, তিনি আগেই জানিয়েছিলেন নিজের আসনে সমঝোতা হলে তিনি নির্বাচন করবেন না। তার অভিযোগ, কো সাধারণ সভা বা ইসি মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়নি যে জোট হলে বাকি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচন করতে পারবেন না বা জামায়াতের পক্ষে প্রচারে নামতে হবে।
তাজনূভা আরো বলেন, এনসিপির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তুলেই ভবিষ্যতে জোটে যাওয়া যেত। কিন্তু প্রথম নির্বাচনেই অন্য সব বিকল্প ধীরে ধীরে বাদ দিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে জামায়াতের সঙ্গে জোট ছাড়া আর কোনও পথ রাখা হয়নি। তিনি এটিকে রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং পরিকল্পনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দলের ভেতরে নীতির চর্চার বদলে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা প্রকৃত অর্থে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করতে চেয়েছেন, তাদের আবেগী বা অরাজনৈতিক বলে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এনসিপিতে চর্চা নয়, বরং ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এনসিপি থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন না। সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
তাজনূভা বলেন, তিনি আগে কখনও রাজনীতি করেননি। জুলাইয়ে রাজপথে নামা ছিল পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ও মধ্যপন্থার বাংলাদেশপন্থি রাজনীতির জন্য কাজ করে যাবেন।
উল্লেখ্য, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য ডা. তাসনিম জারাও পদত্যাগ করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়বেন।
এসি/আপ্র/২৮/১২/২০২৫



















