ঢাকা ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

জেসি হত্যার ঘটনায় ২২ দিন ছদ্মবেশে মাজারে ছিল আসামি বিজয়

  • আপডেট সময় : ১১:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : মুন্সিগঞ্জে বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সংস্থাটি বলছে, গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ শহরের কোটগাঁও এলাকায় প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে বন্ধু বিজয় রহমান ও তার স্ত্রী আবিদা। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছে সে। এরমধ্যে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে ছিল। পরে ধরা পড়ার ভয়ে সে রাজধানীতে এক বন্ধুর বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তাকে শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
গতকাল রোববার কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী জেসিকা মাহমুদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরপর র‌্যাব ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমানকে (১৯) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় এই হত্যাকা-ের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য স্বীকার করেছেন। আসামি বিজয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চার দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তী সময়ে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে তার সন্দেহ জাগে যে, তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে অভিযান চালাতে পারে— সেই আশঙ্কা থেকে সে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। এরপর গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামি বিজয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া, এই ঘটনায় অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবার সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক করে। বিজয় উভয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবার সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সে। পরবর্তী সময়ে বিজয় এবং আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে এবং বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, বিজয় জানিয়েছে, মূলত গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সে বিষয়টি আদিবার সঙ্গে আলোচনা করে। তারা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকালে আদিবা ভিকটিম জেসির সঙ্গে দেখা করে। ভিকটিম বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রিনশট দেখায়। এই সমস্যা মীমাংসা করার জন্য আদিবা ভিকটিম জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আসে। পরে আদিবা ফোন করে বিজয়কেও ছাদে আসতে বলে। এরপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিত-া ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে যায় বিজয় ও আদিবা। আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জেসি হত্যার ঘটনায় ২২ দিন ছদ্মবেশে মাজারে ছিল আসামি বিজয়

আপডেট সময় : ১১:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মহানগর প্রতিবেদন : মুন্সিগঞ্জে বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সংস্থাটি বলছে, গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ শহরের কোটগাঁও এলাকায় প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে বন্ধু বিজয় রহমান ও তার স্ত্রী আবিদা। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছে সে। এরমধ্যে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে ছিল। পরে ধরা পড়ার ভয়ে সে রাজধানীতে এক বন্ধুর বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তাকে শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
গতকাল রোববার কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী জেসিকা মাহমুদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরপর র‌্যাব ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমানকে (১৯) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় এই হত্যাকা-ের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য স্বীকার করেছেন। আসামি বিজয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চার দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তী সময়ে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে তার সন্দেহ জাগে যে, তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে অভিযান চালাতে পারে— সেই আশঙ্কা থেকে সে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। এরপর গত রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামি বিজয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া, এই ঘটনায় অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবার সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক করে। বিজয় উভয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবার সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সে। পরবর্তী সময়ে বিজয় এবং আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে এবং বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, বিজয় জানিয়েছে, মূলত গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সে বিষয়টি আদিবার সঙ্গে আলোচনা করে। তারা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকালে আদিবা ভিকটিম জেসির সঙ্গে দেখা করে। ভিকটিম বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রিনশট দেখায়। এই সমস্যা মীমাংসা করার জন্য আদিবা ভিকটিম জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আসে। পরে আদিবা ফোন করে বিজয়কেও ছাদে আসতে বলে। এরপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিত-া ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে যায় বিজয় ও আদিবা। আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।