নিজস্ব প্রতিবেদক: নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তারে আইনের ‘বড় ধরনের ব্যাত্যয়’ হয়েছে বলে মনে করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। ওই নারীর বিরুদ্ধে ‘প্রতারণার’ যে অভিযোগের কথা র্যাব বলছে, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে এ মানবাধিকার সংস্থার।
গতকাল বুধবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁর ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, কমিশন গঠন হলে এই মৃত্যুতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। লিখিত বক্তব্যের পর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, “পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তাকে (জেসমিন) আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সংধিান, বিদ্যমান আইন ও সথাযথ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটেছে।”
কোথায় আইনের ব্যত্যয়-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুরোটাই তো ব্যত্যয়। আটক রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার কি আছে?” জেসমিনের বিরুদ্ধে যে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ রয়েছে বলেও আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়। জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকতকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কেন র্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে কী ধরনের বার্তা দিয়েছিল তা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া, তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি: পরিবারের অভিযোগকে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এবারই প্রথম এমন অভিযোগ উঠল, তা নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়শ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। অভিযোগগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। “পূর্বের ঘটনাগুলোর আইনগত প্রতিকার না পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিচার না হওয়ার যে অপচর্চা বিদ্যমান রয়েছে, তা দূর করা অতীব জরুরি।” সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু আহমেদ ফয়জুল কবীর। উপস্থিত ছিলেন নীনা গোস্বামী, দিলীপ পাল।
জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে র্যাবের ভাষ্য, পরিবার যা বলছে: গত বুধবার সকালে নওগাঁ সদরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ৪৫ বছর বয়সী জেসমিনকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চ-ীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী পদে কমর্রত ছিলেন। র্যাবের দাবি, তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল। তবে স্বজনদের দাবি ‘নির্যাতনে’ মৃত্যু হয়েছে সেই নারীর। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হলে র্যাব-৫ রাজশাহী এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে পাওয়া আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ রয়েছে। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। “তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা তার সত্যতা পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।” তিনি বলেন, আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শুক্রবার স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়। জেসমিনকে র্যাব তুলে নেওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল তার তদন্ত দাবি করেছেন তার মামা নাজমুল হক মন্টু। তিনি বলেন, “আমার ভাগ্নি অত্যন্ত সাদামাটা একজন গৃহিনী। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সুলতানাকে সকাল ১০টার দিকে আটক করা হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ৪ ঘণ্টা আমার ভাগ্নিকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তাকে র্যাব ক্যাম্পে বা কোন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা তা এখনও আমরা জানি না।” গত সোমবার হাই কোর্ট এক আদেশে জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করে। পাশাপাশি তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়।
জেসমিনকে গ্রেপ্তারে ‘আইনের ব্যত্যয়’ দেখছে আসক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ