বিদেশের খবর ডেস্ক : হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যা ঘটেছে তার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়া, এমনটাই মনে করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সংবাদ মাধ্যমকে রুবিও বলেছেন, ভলোদিমির জেলেনস্কির উচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়া। পাশাপাশি, তিনি প্রশ্ন তুলেছেন জেলেনস্কি সত্যিই শান্তি চান কি না, বিশেষ করে তাদের আলোচনার ব্যর্থ সমাপ্তির পর। ওভাল অফিসের বৈঠক ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর, ট্রাম্প ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে রুবিও সেসব এড়িয়ে গিয়ে বরং ইঙ্গিত দেন যে মূল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে জেলেনস্কির আচরণের কারণে এবং তারই উচিত ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাওয়া। রুবিও বলেন, আপনারা সবাই কেবল শেষ মুহূর্তের নাটকীয় ঘটনাগুলো দেখেছেন, কিন্তু আসল পরিস্থিতি বুঝতে হলে এর আগের ঘটনাগুলোও দেখতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই তার অবস্থান স্পষ্ট রেখেছেন— তিনি মনে করেন এই যুদ্ধ কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না। আমি একমত যে, যদি তিনি তখন প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে এটি ঘটতো না। তিনি আরও যোগ করেন, এখন তিনি এই যুদ্ধ শেষ করতে চান। আমরা বারবার পরিষ্কারভাবে বলেছি আমাদের লক্ষ্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা, আমরা জানতে চাই সত্যিই শান্তি সম্ভব কি না। রুবিওর মতে, গত দশ দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই ওভাল অফিসের উত্তপ্ত পরিস্থিতির পথ তৈরি করেছিল। তার দাবি, এই বৈঠক হওয়াই উচিত ছিল না, কারণ তারা মূলত এসেছিলেন কেবল একটি খনিজ সম্পদ চুক্তি সই করতে। তিনি সরাসরি জেলেনস্কির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,“এই পুরো বিষয়টিকে বিশৃঙ্খলায় পরিণত করার জন্য তারই ক্ষমা চাওয়া উচিত। রুবিও আরও বলেন, এখানে এসে আমাদের শেখানোর চেষ্টা করবেন না যে কূটনীতি ব্যর্থ হবে। জেলেনস্কি আলোচনাকে এমন এক পথে নিয়ে গেছেন, যেখানে এ ধরনের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত ছিল। এরপর তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, আদৌ জেলেনস্কি তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধের অবসান চান কি না। হয়তো তিনি সত্যিই শান্তি চুক্তি করতে চান না। তার এই প্রকাশ্য বিরোধিতা অত্যন্ত হতাশাজনক, বিশেষ করে যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন তাদের জন্য। আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য অন্তত তার ক্ষমা চাওয়া উচিত, -বলেন রুবিও। সিএনএনের সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সম্পর্ক কি এখনো ঠিক করা সম্ভব? রুবিও উত্তর দেন, আমি মনে করি কিছুই অসম্ভব নয়। তবে এটা অবশ্যই বোঝা দরকার যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন একটি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
ক্ষমা চাইবেন না জেলেনস্কি
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে হওয়া উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার জন্য ক্ষমা চাইবেন না। সাংবাদিকরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন বিশেষ করে যখন ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে জেলেনস্কি তাকে অসম্মান করেছেন তখন ইউক্রেনের এই নেতা সোজাসুজি বলেন, না। তবে জেলেনস্কি স্বীকার করেন যে এমন প্রকাশ্য বিবাদ দুই দেশের জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, এই ধরনের তর্ক-বিতর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ইতিবাচক নয়। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, তিনি দুঃখিত যে তাদের বিরোধ সাংবাদিকদের সামনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। বলেন জেলেনস্কি, আমরা কৃতজ্ঞ এবং একইসঙ্গে দুঃখিতও। আমি সত্যিই চাই যে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী হোক। যখন তাকে আবারও জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না, তখন তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের সম্পর্ক সৎ এবং খোলামেলা হওয়া উচিত। আমি নিশ্চিত নই যে আমরা কোনো ভুল করেছি। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে জেলেনস্কি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। সূত্র: সিএনবিসি, মেইল অনলাইন