ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া অপরিণত: আখতার

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আখতার হোসেন -ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়া ‘অপরিণত’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকার ’৩৬ জুলাইয়ের’ (৫ আগস্ট) মধ্যে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে না পারলে জনগণকে সাথে নিয়ে তারাই তা ঘোষণা করবেন।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামোসহ অমীমাংসিত সাত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কমিশন। ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়া মতামত নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দলগুলোকে হস্তান্তর করা হয়।

বিএনপিসহ দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা খসড়া এ ঘোষণাপত্র পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন। এনসিপির সদস্য সচিব আখতারও সরকারের কাছ থেকে ঘোষণাপত্র পাওয়ার কথা বলেছেন।

‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়ায় চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রাখার কথা বলা হয়েছে। ২৬ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় বাক্ত করছে।
এবং বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এর ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে। বুধবার বিকালে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিরতিতে এ খসড়া নিয়ে কথা বলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিলে তার দল আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয়। তারা ৫ আগস্টের আগে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।

খসড়া পাওয়ার তথ্য দিয়ে আখতার বলেন, “সরকার যে খসড়া দিয়েছে সেটা পরিণত নয়। সরকারকে আমাদের পক্ষ থেকে একটি পরিণত খসড়া দিয়েছি এবং আলোচনার মধ্যেই রয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

“সরকার যদি আন্তরিক হয় এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমন্বয় করে, তবে ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যেই একটি পরিপূর্ণ, আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তিসম্পন্ন ঘোষণাপত্র জারি করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের বাস্তব ভিত্তি যাতে জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়, সেটাই তারা চান।
আমরা একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি না। সরকার যদি ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি না করে, তাহলে এনসিপি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা তা জারি করবে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।

প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকেই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলে।

চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। এখন চূড়ান্ত খসড়ার ওপর মতামত নিতে দলগুলোকে এই খসড়া দেওয়া হল। দলগুলো একমত হলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। তাতে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া অপরিণত: আখতার

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়া ‘অপরিণত’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকার ’৩৬ জুলাইয়ের’ (৫ আগস্ট) মধ্যে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে না পারলে জনগণকে সাথে নিয়ে তারাই তা ঘোষণা করবেন।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামোসহ অমীমাংসিত সাত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কমিশন। ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়া মতামত নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দলগুলোকে হস্তান্তর করা হয়।

বিএনপিসহ দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা খসড়া এ ঘোষণাপত্র পাওয়ার তথ্য দিয়েছেন। এনসিপির সদস্য সচিব আখতারও সরকারের কাছ থেকে ঘোষণাপত্র পাওয়ার কথা বলেছেন।

‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ খসড়ায় চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রাখার কথা বলা হয়েছে। ২৬ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় বাক্ত করছে।
এবং বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এর ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে। বুধবার বিকালে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিরতিতে এ খসড়া নিয়ে কথা বলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে মিলে তার দল আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয়। তারা ৫ আগস্টের আগে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।

খসড়া পাওয়ার তথ্য দিয়ে আখতার বলেন, “সরকার যে খসড়া দিয়েছে সেটা পরিণত নয়। সরকারকে আমাদের পক্ষ থেকে একটি পরিণত খসড়া দিয়েছি এবং আলোচনার মধ্যেই রয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

“সরকার যদি আন্তরিক হয় এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমন্বয় করে, তবে ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যেই একটি পরিপূর্ণ, আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তিসম্পন্ন ঘোষণাপত্র জারি করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের বাস্তব ভিত্তি যাতে জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়, সেটাই তারা চান।
আমরা একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি না। সরকার যদি ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি না করে, তাহলে এনসিপি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা তা জারি করবে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।

প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকেই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলে।

চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মতামত নেওয়া হয়। এখন চূড়ান্ত খসড়ার ওপর মতামত নিতে দলগুলোকে এই খসড়া দেওয়া হল। দলগুলো একমত হলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। তাতে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে।