ঢাকা ০৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদন

জুলাই আন্দোলনকারী নিউটন পশ্চিমবঙ্গেরও নাগরিক

  • আপডেট সময় : ০৭:৩২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

জুলাই আন্দোলনে নিউটনের অংশ নেওয়ার এ ছবি প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম- ছবি ইন্টারনেট

প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সেখানে এমন একজন ভোটার মিলেছে, যিনি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বলে খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, নিউটন দাস নামের ওই তরুণ পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ। এই কাকদ্বীপের অবস্থান সুন্দরবনের কাছে, যে বনভূমি দুই দেশের সীমানাতেই পড়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটানো জুলাই আন্দোলনে নিউটনের অংশগ্রহণের একাধিক ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেও এই তরুণ দাবি করেছেন, তিনি ভারতের নাগরিক। যদিও বাংলাদেশের বিক্ষোভে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা তিনি অস্বীকার করেননি। নিউটন দাস একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বিপ্লবের মধ্যে পড়ে যাই। আমি ২০১৪ সাল থেকে কাকদ্বীপের ভোটার, তবে ২০১৭ সালে আমার ভোটার কার্ড হারিয়ে যায়। ২০১৮ সালে স্থানীয় বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরার সহায়তায় আমি নতুন ভোটার কার্ড পাই।
হিন্দু লিখেছে, নিউটনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরাকে ভোট দেন। তবে এখন তিনি ভারত নাকি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তা খোলাসা করেননি। নিউটনের এক চাচাতো ভাই তপন দাসের ভাষ্য, তার ভাই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে এবং দুই দেশেই ভোট দিয়ে থাকে।
হিন্দু লিখেছে, তার এই বক্তব্য নিউটনের কথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাকদ্বীপের বাসিন্দা তপন সাংবাদিকদের বলেন, মহামারীর পর কিছু জমি বেচতে ও এখানে এসেছিল, তারপর আর এখানে আসেনি। ওর জন্ম বাংলাদেশে, সেহেতু সেখানেও সে ভোটার। উভয় দেশে ভোটার তালিকায় নাম লেখানো ওরই ভুল।
এই ঘটনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অভিযোগ তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম লিখিয়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, লাখ লাখ বাংলাদেশি এখন পশ্চিমবঙ্গের ভোটার।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু এও দাবি করেন, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ সদস্য সাদ শেখ মুর্শিদাবাদ জেলার ভোটার তালিকায় ছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোশাল মিডিয়া পোস্টে নিউটনের ঘটনাকে কথিত ‘এগিয়ে বাংলা মডেলের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনে এই নিউটনকে লাঠি হাতে দেখা গিয়েছিল, সেই ব্যক্তিই আজ কাকদ্বীপের নিবন্ধিত ভোটার।
‘অবৈধ অনুপ্রবেশ শিল্পকে সমৃদ্ধ’ করার জন্য ক্ষমতাসীন দল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তার পাল্টায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের।
তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, এই মানুষগুলো স্থল, নৌ বা আকাশপথ- যেভাবেই আসুক না কেন, এর দায়িত্ব বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্য প্রশাসন অবশ্যই নিজের দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, অন্যান্য রাজ্যের ভোটারদের ইলেকটোরাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিআইসি) নম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের নম্বরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তার পাল্টায় বিজেপি নেতারা তখন বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন দলের ইন্ধনেই বাংলাদেশের নাগরিকদের পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদন

জুলাই আন্দোলনকারী নিউটন পশ্চিমবঙ্গেরও নাগরিক

আপডেট সময় : ০৭:৩২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সেখানে এমন একজন ভোটার মিলেছে, যিনি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বলে খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, নিউটন দাস নামের ওই তরুণ পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ। এই কাকদ্বীপের অবস্থান সুন্দরবনের কাছে, যে বনভূমি দুই দেশের সীমানাতেই পড়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটানো জুলাই আন্দোলনে নিউটনের অংশগ্রহণের একাধিক ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেও এই তরুণ দাবি করেছেন, তিনি ভারতের নাগরিক। যদিও বাংলাদেশের বিক্ষোভে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা তিনি অস্বীকার করেননি। নিউটন দাস একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম এবং সেখানে বিপ্লবের মধ্যে পড়ে যাই। আমি ২০১৪ সাল থেকে কাকদ্বীপের ভোটার, তবে ২০১৭ সালে আমার ভোটার কার্ড হারিয়ে যায়। ২০১৮ সালে স্থানীয় বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরার সহায়তায় আমি নতুন ভোটার কার্ড পাই।
হিন্দু লিখেছে, নিউটনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরাকে ভোট দেন। তবে এখন তিনি ভারত নাকি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তা খোলাসা করেননি। নিউটনের এক চাচাতো ভাই তপন দাসের ভাষ্য, তার ভাই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে এবং দুই দেশেই ভোট দিয়ে থাকে।
হিন্দু লিখেছে, তার এই বক্তব্য নিউটনের কথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাকদ্বীপের বাসিন্দা তপন সাংবাদিকদের বলেন, মহামারীর পর কিছু জমি বেচতে ও এখানে এসেছিল, তারপর আর এখানে আসেনি। ওর জন্ম বাংলাদেশে, সেহেতু সেখানেও সে ভোটার। উভয় দেশে ভোটার তালিকায় নাম লেখানো ওরই ভুল।
এই ঘটনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অভিযোগ তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম লিখিয়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, লাখ লাখ বাংলাদেশি এখন পশ্চিমবঙ্গের ভোটার।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু এও দাবি করেন, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ সদস্য সাদ শেখ মুর্শিদাবাদ জেলার ভোটার তালিকায় ছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোশাল মিডিয়া পোস্টে নিউটনের ঘটনাকে কথিত ‘এগিয়ে বাংলা মডেলের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনে এই নিউটনকে লাঠি হাতে দেখা গিয়েছিল, সেই ব্যক্তিই আজ কাকদ্বীপের নিবন্ধিত ভোটার।
‘অবৈধ অনুপ্রবেশ শিল্পকে সমৃদ্ধ’ করার জন্য ক্ষমতাসীন দল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তার পাল্টায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের।
তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, এই মানুষগুলো স্থল, নৌ বা আকাশপথ- যেভাবেই আসুক না কেন, এর দায়িত্ব বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্য প্রশাসন অবশ্যই নিজের দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, অন্যান্য রাজ্যের ভোটারদের ইলেকটোরাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিআইসি) নম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের নম্বরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তার পাল্টায় বিজেপি নেতারা তখন বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন দলের ইন্ধনেই বাংলাদেশের নাগরিকদের পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।