নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব- মনে করে বিএনপি। তাই এ ব্যাপারে উদ্যোগে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির এ মনোভাবের কথা তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’
গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
স্থায়ী কমিটির সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে…এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং গভর্ন্যান্সের মধ্যে মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) এসেছে। আগামীকাল বুধবার সংস্কার-সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরও বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: রিজভী
সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। কারণ, এখন তো পুরো দেশের পুরো জাতির ফোকাসটা হচ্ছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপরে। ক্রাইসিসটা ওই জায়গায়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি, মানুষ সে জন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথটাকে পূরণ করতে চায়। আপনাদের বুঝতে হবে, স্থানীয় সরকার দেশ চালায় না। দেশ চালায় কিন্তু জাতীয় সংসদ, আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ-এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র ফাংশনাল হয়।’
নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত: মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের জন্য কতগুলো আনুষ্ঠানিকতা আছে, যেমন ভোটার তালিকা। যদি কেউ হালনাগাদ করতে চান, সেটা এক মাসের মধ্যেই করতে পারবেন। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সবই তো তৈরি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন করার জন্য তারা প্রস্তুত এবং তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে তৈরি আছে। তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে, দুটি নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব নয়। সুতরাং এটা জাতির স্বার্থে প্রয়োজন, এই নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন)।
পেছানোর চিন্তাটা আসে কোত্থেকে: এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ রকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই-বা আসে কোত্থেকে? কারণ, এটা তো আপনার প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা লাইনেৃ রেললাইনের ওপরে তুলতে চান, তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির এই নেতা আবারও বলেন, ‘সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমরাই তো সংস্কার আগে তৈরি করেছি, জাতির কাছে উপস্থাপন করেছি। সেই ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি, ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।’
গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গ: চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়াপত্র পেয়েছি। উনি আমাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এক দিনের নোটিশে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা (দলে) এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আরও আলোচনা করব। অন্যান্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কারণ, সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’
আগের চেয়ে ভালো আছেন খালেদা জিয়া: লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘আগের চেয়ে ভালো’ আছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আপনারাও পত্র-পত্রিকায় খবর দিচ্ছেন, আমরাও খবর নিয়েছি। উনি (বেগম খালেদা জিয়া) মানসিক দিক দিয়ে, শারীরিক দিক দিয়েৃ আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে অনেকটা বেটার।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
উন্নত চিকিৎসকার জন্য গত ৮ জানুয়ারি তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি নিজের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠান, সেই উড়োজাহাজে খালেদা জিয়া লন্ডনে যান।
সেখানকার চিকিৎসকরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে বসে খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন রোগের তথ্য জেনেছেন এবং বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে অবহিত হয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম আগের চেয়ে ভালো আছেন। রুটিন বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো ডাক্তাররা করছেন। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার রিপোর্টের ফলাফল দেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে উনার চিকিৎসার ধরনে কিছুটা পরিবর্তনও আনা হয়েছে।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার জন্য তার ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসা থেকে রান্না করা খাবার হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যায় এই খাবার হাসপাতালে নিয়ে যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান নিজে।
খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের তিন মেয়ে (তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান) সার্বক্ষণিক নানির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান জাহিদ। তিনি বলেন, ম্যাডাম নাতনিদের দীর্ঘদিন পর পাশে পেয়ে মানসিকভাবে খুবই খুশি ও উৎফুল্ল বোধ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।