নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী জুলাই মাসে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে যেসব তরুণদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে বিদ্যমান আইন দিয়ে হবে না। এজন্য আইন পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। এমন উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নেওয়া হচ্ছে।
দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিয়ে নির্বাচন সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বেশকিছু জেলায় ভিজিট করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছে, তারা আরো ইম্প্রুভ করবে। আইনশৃঙ্খলা প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে। আপনারা দেখে থাকবেন, আগের তুলনায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ভোটার তালিকা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ ঘরে ঘরে গিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে। আমরা সন্তুষ্ট, আমাদের টার্গেট ছিল ৬১ লাখ ৮৮ হাজার নতুন ভোটার নিবন্ধিত হবে। দেখা যাচ্ছে, ৪৩ লাখের ওপরে বাদ পড়া ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। নতুন হয়েছে ১৯ লাখ ৬৬ হাজার। মোট ৬৩ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। আমরা আশা করি জুনের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকাটি পেয়ে যাব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার আগেও অনেকের বয়স ১৮ হবে। তারাও ভোট দিতে চায়, এবার এই তরুণরা নতুন ভোটার হবে। নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের যেন আমরা ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে পারি এবং তারা যেন ভোট দিতে পারে।
তফসিলের আগে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ: ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের কাজ গুছিয়ে জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনার’ মুদ্রিত কপি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এরইমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আরপিও-আচরণবিধি, নীতিমালাসহ আইন সংস্কার, সীমানা নির্ধারণ, নতুন দলের নিবন্ধনসহ সার্বিক কাজ শেষ করে তফসিলের আগে মতবিনিময় করতে চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
বুধবার খসড়া ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত ডিসেম্বরের ভোট সামনে রেখে ইসির সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার। ভোটের পথে ইসির কাজগুলোকে ‘রোডম্যাপ’ না বলে কর্মপরিকল্পনা (অ্যাকশনপ্লান/ওয়ার্কপ্লান) হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে রোডম্যাপের যে বিষয়টি, যে কর্মপরিকল্পনাটি, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটা নিজস্ব কর্মপরিকল্পা ধরেই এগোচ্ছি। সে কর্মপরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে আসনের প্রশাসনিক বিন্যাসের তথ্য, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ ও শেষ পর্যায়ে গুছিয়ে এনেছি, নিবন্ধনের কাজও একটা পর্যায়ে আসছি। আইনের সংশোধনী পেলে মাস তিনেকের মধ্যে শেষ করতে পারবো আশা করি। আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা মোটামুটিভাবে ওয়ার্কপ্লানের প্রি-ওয়ার্ক যেটি সেটি হয়ে যাবে। আশা রাখি, মুদ্রিত কর্মপরিকল্পনা, যেটি নির্বাচনের আগে ইসি পাবলিশ করে, আমরা জুন-জুলাইয়ের দিকে প্রিন্টেড কপি পেয়ে যাব। সরকার ঘোষিত ডিসেম্বরের টাইমলাইনকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার জানান, এখন পর্যন্ত তিনটি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তবে তারা সময় বাড়ানোর জন্য বলেছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলগুলোর আবেদন নেওয়া হবে। সময় বাড়ানোর এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। শিডিউল ডিক্লারের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসতে হবে। নতুন দল শর্তপূরণ করে আসার পরে, নতুন যারা হবে এবং পুরোনো যারা আছে তাদের নিয়েই আমরা বসবো। নিবন্ধনের কাজ শেষ না করি, তাহলে নতুনদের তো কষ্ট থাকবে আমরা আসতে পারলাম না। দল নিবন্ধন শেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর বা সম্ভব হলে আরো আগে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় হবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।