ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

জুলাইকন্যারা আত্মগোপনসহ পরিবার-সমাজের চাপে পরাজিত

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই মধ্যরাতে হল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বেরিয়ে আসা, রাজপথে মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রতিবাদ জানানো- সবকিছুই একটি নতুন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাত তৈরি করেছিল। আন্দোলনটি ছিল নারী নেতৃত্বাধীন। কিন্তু তা নারীকেন্দ্রিক ছিল না, বরং ছিল সামগ্রিক জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন; যেখানে নারীরা এগিয়ে এসেছিলেন সাহসিকতার প্রথম সারিতে। তবে এখন এক বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে, সেই নারীদের অনেকে আর সামনে নেই। তাদের কেউ কেউ আত্মগোপনে, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কেউ বা পরিবার-সমাজের চাপের কাছে পরাজিত। এ বিষয় নিয়েই এবারের নারী ও শিশু পাতার প্রধান ফিচার

নারী যখন রাষ্ট্রবিরোধী নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হয়ে ওঠেন; তখন সমাজের নানা মুখোশ খসে পড়ে- এটিই যেন আবারও উঠে এলো জুলাই আন্দোলনের পর। এতে বাংলাদেশের নারীর সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক পরিণতি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়ার এক জটিল চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীরা বারবার সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু বারবারই তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার বড় দৃষ্টান্ত। হাজার হাজার নারী তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস দেখিয়েছিলেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তারা পাননি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা; বরং অনেকেই পেয়েছেন সমাজের অবজ্ঞা, সন্দেহ, নিঃসঙ্গতা। ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে বারবার একই ভুল করা গয়।

জুলাই আন্দোলনের নারী অংশগ্রহণকারীদের মুখ লুকিয়ে ফেলাটা নিছক মানসিক ক্লান্তি বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি একটি রূঢ় ও বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। আন্দোলনের সময় তাদের কণ্ঠস্বর যাদের পক্ষে যায়নি, তারা আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য নারী নেতৃত্বকে ব্যক্তিগত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। অপপ্রচার, সাইবার বুলিং, চরিত্রহননের ষড়যন্ত্র, ফেক পোস্ট এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- এসব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে। এই প্রেক্ষাপটে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক প্রণোদনার প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি। কাউকে যদি বলা হয় ‘তোমার কষ্ট আমরা বুঝি’, তাহলেই সেই ব্যক্তি আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা সামনের সারিতে ছিলেন, তারা যখন হঠাৎ করে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন। তারা কেবল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হননি। তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মদ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে ‘আমি কি ভুল করেছি?’ ওই দ্বন্দ্ব অনেক বেশি তীব্র হয়- যখন পরিবার, সমাজ, এমনকি সহযোদ্ধারাও দূরে সরে যায়। ফলে একজন নারী শুধু নিঃসঙ্গ নন, অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। তিনি ভাবেন, যদি সামনে না আসতাম, তাহলে হয়তো আজ আমাকে এসব সহ্য করতে হতো না। অথচ প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল, কেন একটি সমাজ নারী নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলো? তাই নারীর সাহসিকতাকে স্মৃতিতে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে জীবন্ত ইতিহাসে রূপান্তরিত করা দরকার। এমন ইতিহাস কেবল স্মৃতিস্তম্ভ বা ডকুমেন্টারির মধ্য দিয়ে রক্ষা করা যাবে না।

এখন প্রশ্ন হলো, যারা এই ইতিহাস গড়েছেন; তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষণ আজ কেমন কাটছে? তারা কি সমাজে গ্রহণযোগ্য? তারা কি কর্মজীবনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন না? তাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তাদের নিয়ে গর্ব করেন, না লুকিয়ে রাখেন? প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর। কিন্তু এড়ানো যাবে না। এখানে আরও একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে, নারী নেতৃত্বকে কে কীভাবে দেখে? একদিকে রাষ্ট্র তাদের স্মরণ করছে, উৎসব করছে, স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করছে; অন্যদিকে তাদের অনেককে সামাজিক বয়কট, অপমান, ট্রলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নারীরা যখন কেবল ‘ভিকটিম’ হন, তখন তাদের নিয়ে সহানুভূতি কাজ করে। কিন্তু যখন তারা রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করেন, নেতৃত্ব দেন, অবস্থান নেন; তখন তাদের প্রতি সহানুভূতি নয়- বরং প্রতিহিংসা, ঈর্ষা ও বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

সাইবার বুলিং এখানে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এক সময় নারীর মানসিক নিপীড়ন ঘটত সামাজিক আকারে- অন্যদের চোখে, কথায়। এখন তা ঘটছে ডিজিটালি- অপরিচিত আইডি থেকে, ফেক ভিডিও বানিয়ে, সম্পাদিত ছবি ছড়িয়ে বা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটিয়ে। এই ধরনের সহিংসতা নারীর শরীরকে স্পর্শ না করেও তার আত্মাকে জর্জরিত করে তোলে।

সরকার এখন একটি ২৪ ঘণ্টা সচল সাইবার নজরদারি ইউনিট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আইন বাস্তবায়ন না হলে এবং দ্রুত বিচার না হলে এই ঘোষণা কেবল ফাইলের মধ্যেই থেকে যাবে। যারা বুলিং করে, তাদের শনাক্ত করা, প্রকাশ্যে আনা এবং বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় সাহসী নারীদের বারবার মুখ লুকিয়ে ফেলার এই প্রবণতা আমাদের একটি বিপজ্জনক সামাজিক গহ্বরে ঠেলে দেবে। তাই সময় এসেছে, শুধু নারীদের খুঁজে বের করাই নয়; তাদের জীবনের গল্প রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের। তাদের প্রতিটি কণ্ঠ, প্রতিটি ক্ষত, প্রতিটি সংগ্রাম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হতে পারে- যদি এখনই তাদের ইতিহাস না লেখা হয়। তাদের নাম না জানলে ভবিষ্যতের ইতিহাসও ভুলে যাবে, কাদের নেতৃত্বে একটি সময় পরিবর্তন এসেছিল।

একটি কথা মনে রাখা জরুরি, নারীরা কেবল মুখ দেখিয়ে ইতিহাস রচনা করেন না। তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে ইতিহাস থমকে যায়। জুলাই আন্দোলনের মেয়েরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এটি নিছক ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতার প্রতিফলন। তাদের মুখ আবার ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে কোনো নারী হয়তো আর এগিয়ে আসার সাহস পাবেন না।

যদি সত্যিই ইতিহাসকে সম্মান করা হয়, তাহলে এখনই জুলাইকন্যাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের কষ্ট বুঝতে হবে। তাদের কণ্ঠকে আবার সাহস দিতে হবে। এতেই বলা যাবে, জুলাই আন্দোলনের নারীরা হারিয়ে যাননি। তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন এবং এই সমাজ তাদের মুখ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জুলাইকন্যারা আত্মগোপনসহ পরিবার-সমাজের চাপে পরাজিত

আপডেট সময় : ০৯:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই মধ্যরাতে হল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বেরিয়ে আসা, রাজপথে মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রতিবাদ জানানো- সবকিছুই একটি নতুন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাত তৈরি করেছিল। আন্দোলনটি ছিল নারী নেতৃত্বাধীন। কিন্তু তা নারীকেন্দ্রিক ছিল না, বরং ছিল সামগ্রিক জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন; যেখানে নারীরা এগিয়ে এসেছিলেন সাহসিকতার প্রথম সারিতে। তবে এখন এক বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে, সেই নারীদের অনেকে আর সামনে নেই। তাদের কেউ কেউ আত্মগোপনে, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কেউ বা পরিবার-সমাজের চাপের কাছে পরাজিত। এ বিষয় নিয়েই এবারের নারী ও শিশু পাতার প্রধান ফিচার

নারী যখন রাষ্ট্রবিরোধী নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হয়ে ওঠেন; তখন সমাজের নানা মুখোশ খসে পড়ে- এটিই যেন আবারও উঠে এলো জুলাই আন্দোলনের পর। এতে বাংলাদেশের নারীর সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক পরিণতি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়ার এক জটিল চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীরা বারবার সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু বারবারই তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার বড় দৃষ্টান্ত। হাজার হাজার নারী তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস দেখিয়েছিলেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তারা পাননি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা; বরং অনেকেই পেয়েছেন সমাজের অবজ্ঞা, সন্দেহ, নিঃসঙ্গতা। ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে বারবার একই ভুল করা গয়।

জুলাই আন্দোলনের নারী অংশগ্রহণকারীদের মুখ লুকিয়ে ফেলাটা নিছক মানসিক ক্লান্তি বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি একটি রূঢ় ও বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। আন্দোলনের সময় তাদের কণ্ঠস্বর যাদের পক্ষে যায়নি, তারা আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য নারী নেতৃত্বকে ব্যক্তিগত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। অপপ্রচার, সাইবার বুলিং, চরিত্রহননের ষড়যন্ত্র, ফেক পোস্ট এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- এসব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে। এই প্রেক্ষাপটে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক প্রণোদনার প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি। কাউকে যদি বলা হয় ‘তোমার কষ্ট আমরা বুঝি’, তাহলেই সেই ব্যক্তি আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা সামনের সারিতে ছিলেন, তারা যখন হঠাৎ করে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন। তারা কেবল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হননি। তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মদ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে ‘আমি কি ভুল করেছি?’ ওই দ্বন্দ্ব অনেক বেশি তীব্র হয়- যখন পরিবার, সমাজ, এমনকি সহযোদ্ধারাও দূরে সরে যায়। ফলে একজন নারী শুধু নিঃসঙ্গ নন, অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। তিনি ভাবেন, যদি সামনে না আসতাম, তাহলে হয়তো আজ আমাকে এসব সহ্য করতে হতো না। অথচ প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল, কেন একটি সমাজ নারী নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলো? তাই নারীর সাহসিকতাকে স্মৃতিতে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে জীবন্ত ইতিহাসে রূপান্তরিত করা দরকার। এমন ইতিহাস কেবল স্মৃতিস্তম্ভ বা ডকুমেন্টারির মধ্য দিয়ে রক্ষা করা যাবে না।

এখন প্রশ্ন হলো, যারা এই ইতিহাস গড়েছেন; তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষণ আজ কেমন কাটছে? তারা কি সমাজে গ্রহণযোগ্য? তারা কি কর্মজীবনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন না? তাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তাদের নিয়ে গর্ব করেন, না লুকিয়ে রাখেন? প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর। কিন্তু এড়ানো যাবে না। এখানে আরও একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে, নারী নেতৃত্বকে কে কীভাবে দেখে? একদিকে রাষ্ট্র তাদের স্মরণ করছে, উৎসব করছে, স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করছে; অন্যদিকে তাদের অনেককে সামাজিক বয়কট, অপমান, ট্রলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নারীরা যখন কেবল ‘ভিকটিম’ হন, তখন তাদের নিয়ে সহানুভূতি কাজ করে। কিন্তু যখন তারা রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করেন, নেতৃত্ব দেন, অবস্থান নেন; তখন তাদের প্রতি সহানুভূতি নয়- বরং প্রতিহিংসা, ঈর্ষা ও বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

সাইবার বুলিং এখানে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এক সময় নারীর মানসিক নিপীড়ন ঘটত সামাজিক আকারে- অন্যদের চোখে, কথায়। এখন তা ঘটছে ডিজিটালি- অপরিচিত আইডি থেকে, ফেক ভিডিও বানিয়ে, সম্পাদিত ছবি ছড়িয়ে বা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটিয়ে। এই ধরনের সহিংসতা নারীর শরীরকে স্পর্শ না করেও তার আত্মাকে জর্জরিত করে তোলে।

সরকার এখন একটি ২৪ ঘণ্টা সচল সাইবার নজরদারি ইউনিট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আইন বাস্তবায়ন না হলে এবং দ্রুত বিচার না হলে এই ঘোষণা কেবল ফাইলের মধ্যেই থেকে যাবে। যারা বুলিং করে, তাদের শনাক্ত করা, প্রকাশ্যে আনা এবং বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় সাহসী নারীদের বারবার মুখ লুকিয়ে ফেলার এই প্রবণতা আমাদের একটি বিপজ্জনক সামাজিক গহ্বরে ঠেলে দেবে। তাই সময় এসেছে, শুধু নারীদের খুঁজে বের করাই নয়; তাদের জীবনের গল্প রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের। তাদের প্রতিটি কণ্ঠ, প্রতিটি ক্ষত, প্রতিটি সংগ্রাম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হতে পারে- যদি এখনই তাদের ইতিহাস না লেখা হয়। তাদের নাম না জানলে ভবিষ্যতের ইতিহাসও ভুলে যাবে, কাদের নেতৃত্বে একটি সময় পরিবর্তন এসেছিল।

একটি কথা মনে রাখা জরুরি, নারীরা কেবল মুখ দেখিয়ে ইতিহাস রচনা করেন না। তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে ইতিহাস থমকে যায়। জুলাই আন্দোলনের মেয়েরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এটি নিছক ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতার প্রতিফলন। তাদের মুখ আবার ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে কোনো নারী হয়তো আর এগিয়ে আসার সাহস পাবেন না।

যদি সত্যিই ইতিহাসকে সম্মান করা হয়, তাহলে এখনই জুলাইকন্যাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের কষ্ট বুঝতে হবে। তাদের কণ্ঠকে আবার সাহস দিতে হবে। এতেই বলা যাবে, জুলাই আন্দোলনের নারীরা হারিয়ে যাননি। তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন এবং এই সমাজ তাদের মুখ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ