ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
আয়নাঘর ও গোপন বন্দিশালা

জীবিতদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ-নিহতদের ১০ কোটি টাকা দিতে নোটিশ

  • আপডেট সময় : ০১:১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আয়নাঘর ও গোপন বন্দিশালায় বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা এবং গুম ও হত্যার শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশ পাঠান।

নোটিশে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র‍্যাব মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নোটিশে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে যে, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হবে।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক কালো অধ্যায়ের নাম ‘আয়নাঘর’। আগের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গোপনে এই ‘আয়নাঘর’ এবং অন্যান্য অনুরূপ গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়।

এসব বন্দিশালায় কোনো আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই, কোনো বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই বহু মানুষকে গুম, বেআইনিভাবে আটক ও বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি অনেক মৃতদেহ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি যা আন্তর্জাতিক আইনে ‘enforced disappearance’ হিসেবে বিবেচিত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

এসব ঘটনা বাংলাদেশের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৩২ (ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার), অনুচ্ছেদ ৩৩ (গ্রেফতারের পর আদালতে পেশের অধিকার ও আইনজীবীর সহায়তা), এবং অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) (নির্যাতন, নিষ্ঠুর বা অমানবিক দণ্ডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা) এসব মৌলিক অধিকার পদদলিত হয়েছে।

এ ধরনের রাষ্ট্র পরিচালিত বেআইনি কর্মকাণ্ড ‘Constitutional Tort’-এর পর্যায়ে পড়ে এবং রাষ্ট্র এতে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

নোটিশে বলা হয়েছে, যারা ‘আয়নাঘর’ এবং অনুরূপ বন্দিশালায় বেআইনিভাবে আটক ছিলেন, তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর যারা সেখানে নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের বাজেট থেকে ব্যয় না করে বরং যারা এসব কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, সেসব ব্যক্তিদের জব্দকৃত সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করে একটি ‘ন্যাশনাল কমপেনসেশন ফান্ড’ গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠিত ‘গুম কমিশন’ এসব ঘটনার তদন্ত করে নিশ্চিত করে যে, ‘আয়নাঘর’ ও অনুরূপ গোপন বন্দিশালাগুলোতে অসংখ্য গুম, বেআইনি আটক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সত্যতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার আজও কোনো ক্ষতিপূরণমূলক বা পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা ‘বিচার বিলম্ব মানেই বিচার অস্বীকার’ নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

নোটিশে আরও দাবি করা হয়েছে, একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠন করতে হবে যারা নির্যাতিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে, আটককাল নির্ধারণ করবে, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে। কমিশনের রিপোর্টটি অবশ্যই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং তা বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আয়নাঘর ও গোপন বন্দিশালা

জীবিতদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ-নিহতদের ১০ কোটি টাকা দিতে নোটিশ

আপডেট সময় : ০১:১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আয়নাঘর ও গোপন বন্দিশালায় বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা এবং গুম ও হত্যার শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশ পাঠান।

নোটিশে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র‍্যাব মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নোটিশে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে যে, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হবে।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক কালো অধ্যায়ের নাম ‘আয়নাঘর’। আগের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গোপনে এই ‘আয়নাঘর’ এবং অন্যান্য অনুরূপ গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়।

এসব বন্দিশালায় কোনো আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই, কোনো বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই বহু মানুষকে গুম, বেআইনিভাবে আটক ও বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি অনেক মৃতদেহ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি যা আন্তর্জাতিক আইনে ‘enforced disappearance’ হিসেবে বিবেচিত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

এসব ঘটনা বাংলাদেশের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৩২ (ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার), অনুচ্ছেদ ৩৩ (গ্রেফতারের পর আদালতে পেশের অধিকার ও আইনজীবীর সহায়তা), এবং অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) (নির্যাতন, নিষ্ঠুর বা অমানবিক দণ্ডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা) এসব মৌলিক অধিকার পদদলিত হয়েছে।

এ ধরনের রাষ্ট্র পরিচালিত বেআইনি কর্মকাণ্ড ‘Constitutional Tort’-এর পর্যায়ে পড়ে এবং রাষ্ট্র এতে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

নোটিশে বলা হয়েছে, যারা ‘আয়নাঘর’ এবং অনুরূপ বন্দিশালায় বেআইনিভাবে আটক ছিলেন, তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর যারা সেখানে নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের বাজেট থেকে ব্যয় না করে বরং যারা এসব কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, সেসব ব্যক্তিদের জব্দকৃত সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করে একটি ‘ন্যাশনাল কমপেনসেশন ফান্ড’ গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠিত ‘গুম কমিশন’ এসব ঘটনার তদন্ত করে নিশ্চিত করে যে, ‘আয়নাঘর’ ও অনুরূপ গোপন বন্দিশালাগুলোতে অসংখ্য গুম, বেআইনি আটক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সত্যতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার আজও কোনো ক্ষতিপূরণমূলক বা পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা ‘বিচার বিলম্ব মানেই বিচার অস্বীকার’ নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

নোটিশে আরও দাবি করা হয়েছে, একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠন করতে হবে যারা নির্যাতিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে, আটককাল নির্ধারণ করবে, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে। কমিশনের রিপোর্টটি অবশ্যই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং তা বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এসি/