নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে আহত এক শিশুকে বানানো হয়েছে ‘শহীদ’। গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া ১১ বছর বয়সী শিশু সোহাগকে কৌশলে ‘মৃত’ দেখিয়ে একটি সাজানো হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এখন সেই ভুয়া মামলার চাপ ও মামলাবাজদের হুমকিতে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে শিশুটির পরিবার।
১১ বছরের শিশুটির নাম জিহাদ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হয় সে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে কিছু মানুষ তাকে মৃত বানিয়ে কাগজে-কলমে চালিয়ে দেয় ‘শহীদ’ হিসেবে।
একটি সাজানো মামলায় শিশুটিকে দেখানো হয় নিহত। ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করা মামলায় আসামি করা হয় ১১৮ জনকে। চার মাস ছয় দিন পর জানা যায়, জিহাদ আসলে জীবিত।
আদালতে হাজির হয়ে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তার বাবা জহিরুল ইসলাম রাজুও জানান, হত্যা মামলা ছিল পুরোপুরি সাজানো। এতে তিনি দায়ী করেন কেরানীগঞ্জের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মো. শাহজাহান সম্রাটকে।
জানা গেছে, জীবিত শিশু জিহাদকে মৃত দেখিয়ে ওই মামলা থেকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ও জমি পাওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয় পরিবারটিকে। সম্রাট জানান, সরকার আহত জুলাই যোদ্ধাদের ৩০ লাখ টাকা ও চার কাঠা জমি দেবে।
সেই লোভে পড়ে রাজু মামলায় রাজি হন। বলেন, ‘আমারে সম্রাট বলে আহত মামলা করবে, করছে নিহত মামলা। সেদিন ছেলে সাথেই ছিল। তাকে গাড়িতে রেখে আমাকে ওপরে নিয়ে যায়। উকিল সব বলে। আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ এই ফাঁদে পড়ার পর পুরো পরিবার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে সাহস করে আদালতে গিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়, শিশুটি জীবিত।
একটি ফোনালাপে শোনা যায়, সম্রাট রাজুকে বলছেন, ‘মামলার কপি চইলা গেছে জাতিসংঘে। যদি বাঁচতে চান দ্রুত মন্ত্রণালয়ে কাগজ জমা দেন।’ এক পর্যায়ে হুমকির সুরে বলেন, ‘আর যদি মনে করেন আত্মহত্যা করমু, সেটা আপনার বিষয়।’
জানা যায়, রাজুদের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। নদীতে ভেসে যাওয়ায় গাজীপুরে একটি দুর্গম গ্রামে বাস করছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায় জিহাদকে। পায়ে গুলির কারণে এখনো ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে সে। বলল, ‘শেখ হাসিনা যেদিন পালাইছে, বাইপাল থানার দিকে একলা পইড়া গেছিলাম। পায়ে গুলি লাগে।’ জিহাদের মা জানান, ছেলের চিকিৎসা চালাতে কিস্তিতে ঋণ নিয়েছেন। বলেন, ‘না নিলে পা কেটেই ফেলতে হতো।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু বলেন, মামলার পর পুলিশ বাদীকে খুঁজে পায়। বাদী ও আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে— জিহাদ জীবিত। মামলাটি এখনো খারিজ হয়নি, মনিটরিং সেলে রয়েছে।
এ বিষয়ে এনসিপি নেতা শাহজাহান সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এসি/