নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের ছুটি শেষে গত রোববার খুলেছে অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিস। তাই, রাজধানীতে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। চালু হয়নি লঞ্চ, ট্রেন ও দূরপাল্লার বাস। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরছেন লাখ লাখ মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে দেখা যায়, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক-মিনি ট্রাকে করে ঢাকায় আসছেন লোকজন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মজীবী মানুষের কাছে স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কর্মস্থলে যোগদান।
রাজধানীর চিটাগাং রোড সংলগ্ন সাইনবোর্ড মোড়ে ব্যাগ-বস্তাসহ দাঁড়িয়ে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছি। পাশাপাশি, ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে গিয়েছিলাম। ঈদের ছুটি শেষ। লকডাউনের কারণে পুরো পথই ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। বাসা থেকে এখন পর্যন্ত ছয় বার গাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। আরও পাল্টাতে হবে।’
সাবিনা আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ঢাকায় ঢুকলাম। জীবনটা পুরাই শেষ। দুইটা বাচ্চা, কতগুলো ব্যাগ, সবমিলিয়ে জীবন যায় যায় অবস্থা। এত কষ্ট হবে জানলে ঢাকা থেকেই বেরই হতাম না।’
লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খালিদ ফারহান বলেন, ‘ঈদের ছুটি পেয়েছিলাম তিন দিন। এর সঙ্গে বাড়তি দুই দিন ছুটি নিয়েছি। আজ ছুটি শেষ। কাল সকালে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। গাড়ি পাবো কি না, সে ঝুঁকি এড়াতে এক দিন আগেই চলে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার কোনো বাস পাইনি। অ্যাম্বুলেন্সে করে এসেছি। এক গাড়িতে আমরা ১০ জন এসেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগ ছিল না। ভাড়া পড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।’
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরেছেন সাইদুল ইসলাম। একটা বায়িং হাউজে চাকরি করেন তিনি। সাইদুল বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই রাস্তায় ভিড় বাড়বে। এ কারণে আজই রওনা হয়েছি। কয়েকবার গাড়ি পাল্টে ঢাকায় পৌঁছেঁছি। এতেই শুকরিয়া।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন সাতক্ষীরার মনিরুজ্জামান। অনলাইনে ক্লাস নিতে হয়। গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা ভালো নেই। ১৯ তারিখ থেকে অফিস খুলছে। তাই এক দিন সময় হাতে রেখেই ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ফেরি পার হয়ে আসতে হয়। যাওয়ার সময় যে সমস্যা ছিল আসার বেলায় সেই আতঙ্কে ছিলাম। তাই কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে, হাতে সময় রেখে আগেই রওয়ানা দিয়েছি। তবে এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকির চরম ব্যত্যয় ঘটেছে।’ এ অবস্থায় ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্তই ভুল ছিল বলে মনে করেন তিনি।
ফেরিতে গাদাগাদি : ঈদ শেষে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। এতে প্রতিটি ফেরিতে রয়েছে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সোমবার সকাল থেকে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। একইসঙ্গে এসব ফেরিতে জরুরি, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন পার হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলিয়াঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীদের ভিড়। তবে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আজও যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে। সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে তারা ঢাকায় ফিরছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
অন্যদিকে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতেই যাত্রী ও যানবাহনের ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছে হাজারো মানুষ। পাটুরিয়া ঘাট পার হয়েই ঢাকাগামী যাত্রীরা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ, হাইয়েজ, রিকশাভ্যান ও পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। সরকারি নির্দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে এসব যানবাহন যোগে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের।
জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই ঢাকায় ফিরছে মানুষ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ