ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে দুরন্ত ছুটে চলায় ভুলে যায় পরিবার

  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ব্যস্ততার তাগিদে আমরা সবাই যেন চলমান এক যান। কাজকর্ম, হাট-বাজার, চাকরি বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ছুটে চলি দুরন্ত গতিতে। ছুটতে ছুটতে, চলতে চলতে ভুলে যাই আমাদের চারপাশের মানুষকে; ভুলে যাই নিজ পরিবার। হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা। আমি তো পরিবারের সঙ্গেই আছি। তাদের জন্যই তো সব করছি। হ্যাঁ, পরিবারের সঙ্গেই আছেন। তাদের জন্যই এত কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক। তবে জানেন না সঙ্গে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়। সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না। এ বিষয় নিয়েই এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

আপনি কি আপনার মা-বাবার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় করেন? ছোটবেলায় একটু চোখের আড়াল হলেই মা-বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে উঠত। আজ আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আপনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় থাকেন। আপনি তা বুঝতেও পারেন না। আপনার একটু সময় দেওয়া, একটু কথা বলা, একটু বুকে টেনে নেওয়া তাদের জীবন আনন্দময় করে তুলবে। তাদের আরও বেশিদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছা করবে। এটা বোঝার সময় আপনার নেই। আপনি যদি বাবা, মা হয়ে থাকেন তবে সন্তানকে কি যথেষ্ট সময় দেন? আপনার সন্তান কি আপনার সঙ্গে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে? সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা মা-বাবার কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে। সন্তানের মা-বাবার কাছে লুকানোর কিছু নেই। যদি লুকানো থাকে আপনি তো জানেন না। তবে বলবো আপনার ওভাবে তাকিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তাদের ভেতরটা আয়নার মতো নাকি অন্ধকারাছন্ন।

আপনি আপনার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবই তো করছেন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা। সে আপনাকে বন্ধু ভাবে কিনা। আপনি কি তাকে সঙ্গ দেন। সঙ্গ মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়। সঙ্গহীনতায় স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব বেড়ে যায়। অল্প কথাতেই প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যায়। পরিবারের দেখাশোনা, খোঁজ-খবর নেওয়া, সঙ্গ দেওয়ার অভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আপনার পরিবার। আপনি হাজার কোটি টাকার পেছনে ছুটেও দিন শেষে সফলতার মুখ দেখলেও পরে যদি পরিবারের দিক থেকে থাকেন অসুখী তবে সেটার গুরুত্বটাই বা কি? এখন ভেবে দেখার বিষয় পরিবার সন্তানকে সময় না দিয়ে ছুটে চলার লাভ কতটুকু।

পরিবারই হলো রাষ্ট্র ও সমাজের মূল ভিত্তি। পরিবার থেকেই একজন নাগরিকের সৃষ্টি হয়। পরিবারই হলো মানুষ গড়ার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। ভালোবাসার জন্ম হয় পরিবার থেকেই। ভালোবাসা বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এ পরিবারেই। আর সেই পরিবারেই যদি সব সময় অশান্তি লেগে থাকে, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে, তবে সন্তানরাও কলহপ্রিয় হয়ে ওঠে। সন্তানের মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভালোবাসার বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে বা মা-বাবা পরস্পরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আবার অনেক পরিবারে মেয়েসন্তানের চেয়ে ছেলেসন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ পার্থক

মেয়েসন্তানটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এ আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এ প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়। একটি মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার সম্পূর্ণ আশা-ভরসার কেন্দ্র থাকে পরিবার।

পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাতে একদিকে যেমন আপনি ভালো থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। তাই আসুন আজ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে শপথ নিই, নিজের পরিবারকে সময় ও সঙ্গ দেওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবো।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে দুরন্ত ছুটে চলায় ভুলে যায় পরিবার

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ব্যস্ততার তাগিদে আমরা সবাই যেন চলমান এক যান। কাজকর্ম, হাট-বাজার, চাকরি বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ছুটে চলি দুরন্ত গতিতে। ছুটতে ছুটতে, চলতে চলতে ভুলে যাই আমাদের চারপাশের মানুষকে; ভুলে যাই নিজ পরিবার। হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা। আমি তো পরিবারের সঙ্গেই আছি। তাদের জন্যই তো সব করছি। হ্যাঁ, পরিবারের সঙ্গেই আছেন। তাদের জন্যই এত কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক। তবে জানেন না সঙ্গে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়। সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না। এ বিষয় নিয়েই এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

আপনি কি আপনার মা-বাবার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় করেন? ছোটবেলায় একটু চোখের আড়াল হলেই মা-বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে উঠত। আজ আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আপনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় থাকেন। আপনি তা বুঝতেও পারেন না। আপনার একটু সময় দেওয়া, একটু কথা বলা, একটু বুকে টেনে নেওয়া তাদের জীবন আনন্দময় করে তুলবে। তাদের আরও বেশিদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছা করবে। এটা বোঝার সময় আপনার নেই। আপনি যদি বাবা, মা হয়ে থাকেন তবে সন্তানকে কি যথেষ্ট সময় দেন? আপনার সন্তান কি আপনার সঙ্গে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে? সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা মা-বাবার কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে। সন্তানের মা-বাবার কাছে লুকানোর কিছু নেই। যদি লুকানো থাকে আপনি তো জানেন না। তবে বলবো আপনার ওভাবে তাকিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তাদের ভেতরটা আয়নার মতো নাকি অন্ধকারাছন্ন।

আপনি আপনার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবই তো করছেন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা। সে আপনাকে বন্ধু ভাবে কিনা। আপনি কি তাকে সঙ্গ দেন। সঙ্গ মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়। সঙ্গহীনতায় স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব বেড়ে যায়। অল্প কথাতেই প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যায়। পরিবারের দেখাশোনা, খোঁজ-খবর নেওয়া, সঙ্গ দেওয়ার অভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আপনার পরিবার। আপনি হাজার কোটি টাকার পেছনে ছুটেও দিন শেষে সফলতার মুখ দেখলেও পরে যদি পরিবারের দিক থেকে থাকেন অসুখী তবে সেটার গুরুত্বটাই বা কি? এখন ভেবে দেখার বিষয় পরিবার সন্তানকে সময় না দিয়ে ছুটে চলার লাভ কতটুকু।

পরিবারই হলো রাষ্ট্র ও সমাজের মূল ভিত্তি। পরিবার থেকেই একজন নাগরিকের সৃষ্টি হয়। পরিবারই হলো মানুষ গড়ার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। ভালোবাসার জন্ম হয় পরিবার থেকেই। ভালোবাসা বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এ পরিবারেই। আর সেই পরিবারেই যদি সব সময় অশান্তি লেগে থাকে, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে, তবে সন্তানরাও কলহপ্রিয় হয়ে ওঠে। সন্তানের মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভালোবাসার বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে বা মা-বাবা পরস্পরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আবার অনেক পরিবারে মেয়েসন্তানের চেয়ে ছেলেসন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ পার্থক

মেয়েসন্তানটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এ আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এ প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়। একটি মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার সম্পূর্ণ আশা-ভরসার কেন্দ্র থাকে পরিবার।

পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাতে একদিকে যেমন আপনি ভালো থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। তাই আসুন আজ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে শপথ নিই, নিজের পরিবারকে সময় ও সঙ্গ দেওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবো।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ