ঢাকা ০৭:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

জীবনের গল্প বললেন আফগানিস্তান থেকে পালানো নারী

  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে এই সপ্তাহে। তবে আফগানিস্তানের নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা এখনও বন্ধ। তালেবান সরকার নারীদের ওপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে, তাদের অধিকাংশকেই জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
২২ বছর বয়সী মাহ ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবান প্রবেশের পর দেশ থেকে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে ইংরেজি বিষয়ে জিসিএসই শুরু করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে মাহ বলেন, আমি এখন নিরাপদ। আমার স্বাধীনতা আছে। আমি মুক্ত। কিন্তু আফগানিস্তানে থাকা বন্ধুদের কথা ভেবে তিনি ব্যথিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধুরা কিছুই করতে পারছে না। তালেবান শাসন শুরু হওয়ার তিন বছর পরও নারীদের জীবনে বিধিনিষেধ বাড়ছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না এবং অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে না। পাশাপাশি, কাজের ক্ষেত্রেও রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা—বিউটি পার্লারগুলো বন্ধ এবং নারীরা পার্ক, জিম বা ক্রীড়া ক্লাবে যেতে পারছেন না। মাহ বলেন, যখন আমি আনন্দিত বা বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে থাকি তখন আমি আমার হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামে ছবি দেই না। আমি চাই না, আমার আফগান বন্ধুদের মনে হোক যে আমি যুক্তরাজ্যে মুক্তি পেয়েছি। মাহ বর্তমানে কার্ডিফে রয়েছেন এবং ইংরেজি বিষয়ে জিসিএসইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ওয়েলসে ধাত্রীবিদ্যায় পড়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, আমি এখানে কলেজে যেতে ও কাজ করতে পারি। কিন্তু আফগানিস্তানে আমার সমবয়সী বন্ধুরা ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছে না। তালেবান জানিয়েছে, ধর্মীয় কারণে তারা নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা বারবার বলেছে, ‘ইসলামিক’ পাঠ্যক্রম নিশ্চিত করার পর মেয়েদের স্কুলে ফিরতে দেওয়া হবে। তবে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি এবং আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যেখানে এমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মাহেরের যুক্তরাজ্যে আসার পথ সহজ ছিল না। তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পর, তিনি হেলমান্দ থেকে কান্দাহার, তারপর কাবুলে পালিয়ে যান। কাবুলে আসার তিন দিন পরই মাঝরাতে তিনি দেখতে পান তালেবান তার রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। মাহ বলেন, আমি আফগানিস্তানে থাকলে হয়তো তারা আমাকে হত্যা করত বা জোর করে বিয়ে করত। যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের মধ্যে মাহও ছিলেন। তিনি তার মাকে বিদায় জানানোরও সুযোগ পাননি। তার কথায়, আমি কখনোই এই স্মৃতি ভুলব না। মাহকে সহায়তা করেছে ওয়েলসের যুব সংগঠন উর্দ্দ। তাদের সহায়তায় অনেক শরণার্থী ওয়েলশ ভাষা শিখেছেন এবং তাদের শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম হয়েছে। মাহ বলেন, এখানে মানুষের প্রতিদিন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। নারীদের অধিকার রয়েছে, তারা যা চায় তা করতে পারে এবং তারা নিরাপদে আছে।
অন্যদিকে ১৭ বছর বয়সী আকদাসও আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন, নিউ মেক্সিকোর একটি কলেজে বৃত্তি নিয়ে। আকদাস বলেন, তালেবান কাবুল দখল করার দিন আমি জানতাম না কী করতে হবে। আমার অধিকার কি কেড়ে নেওয়া হবে? তালেবান নারী শিক্ষা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাজ্য সরকার এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তালেবানকে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জীবনের গল্প বললেন আফগানিস্তান থেকে পালানো নারী

আপডেট সময় : ০১:৪৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে এই সপ্তাহে। তবে আফগানিস্তানের নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা এখনও বন্ধ। তালেবান সরকার নারীদের ওপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে, তাদের অধিকাংশকেই জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
২২ বছর বয়সী মাহ ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবান প্রবেশের পর দেশ থেকে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে ইংরেজি বিষয়ে জিসিএসই শুরু করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে মাহ বলেন, আমি এখন নিরাপদ। আমার স্বাধীনতা আছে। আমি মুক্ত। কিন্তু আফগানিস্তানে থাকা বন্ধুদের কথা ভেবে তিনি ব্যথিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধুরা কিছুই করতে পারছে না। তালেবান শাসন শুরু হওয়ার তিন বছর পরও নারীদের জীবনে বিধিনিষেধ বাড়ছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না এবং অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে না। পাশাপাশি, কাজের ক্ষেত্রেও রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা—বিউটি পার্লারগুলো বন্ধ এবং নারীরা পার্ক, জিম বা ক্রীড়া ক্লাবে যেতে পারছেন না। মাহ বলেন, যখন আমি আনন্দিত বা বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে থাকি তখন আমি আমার হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামে ছবি দেই না। আমি চাই না, আমার আফগান বন্ধুদের মনে হোক যে আমি যুক্তরাজ্যে মুক্তি পেয়েছি। মাহ বর্তমানে কার্ডিফে রয়েছেন এবং ইংরেজি বিষয়ে জিসিএসইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ওয়েলসে ধাত্রীবিদ্যায় পড়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, আমি এখানে কলেজে যেতে ও কাজ করতে পারি। কিন্তু আফগানিস্তানে আমার সমবয়সী বন্ধুরা ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছে না। তালেবান জানিয়েছে, ধর্মীয় কারণে তারা নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা বারবার বলেছে, ‘ইসলামিক’ পাঠ্যক্রম নিশ্চিত করার পর মেয়েদের স্কুলে ফিরতে দেওয়া হবে। তবে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি এবং আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যেখানে এমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মাহেরের যুক্তরাজ্যে আসার পথ সহজ ছিল না। তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পর, তিনি হেলমান্দ থেকে কান্দাহার, তারপর কাবুলে পালিয়ে যান। কাবুলে আসার তিন দিন পরই মাঝরাতে তিনি দেখতে পান তালেবান তার রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। মাহ বলেন, আমি আফগানিস্তানে থাকলে হয়তো তারা আমাকে হত্যা করত বা জোর করে বিয়ে করত। যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের মধ্যে মাহও ছিলেন। তিনি তার মাকে বিদায় জানানোরও সুযোগ পাননি। তার কথায়, আমি কখনোই এই স্মৃতি ভুলব না। মাহকে সহায়তা করেছে ওয়েলসের যুব সংগঠন উর্দ্দ। তাদের সহায়তায় অনেক শরণার্থী ওয়েলশ ভাষা শিখেছেন এবং তাদের শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম হয়েছে। মাহ বলেন, এখানে মানুষের প্রতিদিন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। নারীদের অধিকার রয়েছে, তারা যা চায় তা করতে পারে এবং তারা নিরাপদে আছে।
অন্যদিকে ১৭ বছর বয়সী আকদাসও আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন, নিউ মেক্সিকোর একটি কলেজে বৃত্তি নিয়ে। আকদাস বলেন, তালেবান কাবুল দখল করার দিন আমি জানতাম না কী করতে হবে। আমার অধিকার কি কেড়ে নেওয়া হবে? তালেবান নারী শিক্ষা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাজ্য সরকার এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তালেবানকে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি