ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

জীবনসঙ্গীর ওপর চলে না আধিপত্য বিস্তার

  • আপডেট সময় : ০৫:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দুটি মানুষের মনের মিল যতই থাক, শতভাগ বিষয়ে সহমত হওয়া প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। অনেকেই নিজের ভাবনা চাপিয়ে দিতে চান অন্যজনের ওপর, বিশেষ করে নিজের জীবনসঙ্গীর বেলায়। কেউ যদি সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন, তাহলে কি সম্পর্কটাকে সুস্থ বলা যায়? ভালো লাগা ও ভালোবাসার ভিত্তির ওপর যে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে, আদতে কি তাতে আধিপত্য থাকতে পারে?
পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে প্রত্যেকেরই অবস্থান এবং দায়িত্ব আলাদা।

সেই অবস্থান থেকেই একজন ব্যক্তি তার জীবনসঙ্গীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও ভাবেন। সঙ্গীর খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ঘুমের সময়সহ বহু বিষয় নিয়েই তার কিছু বলার থাকতে পারে। পারিবারিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও দু’জনের ভাবনা দুই রকম হতে পারে। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন। মতের ভিন্নতা নিয়ে তো আলাপ করা যেতেই পারে। কিন্তু কথার ধরনের ওপরই নির্ভর করছে, সম্পর্কটা কেমন। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।

মতের অমিল: ধরুন, আপনার সঙ্গীকে নির্দিষ্ট কোনো রঙের পোশাকে দেখতে ইচ্ছা করে আপনার। কিন্তু রঙটা আপনার সঙ্গীর আবার অপছন্দ। এমন পরিস্থিতিতে আপনার ইচ্ছার প্রকাশ সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন তার কাছে। আপনার অনুরোধে হয়তো তিনি কখনো ওই রঙের পোশাক পরবেন কিংবা হয়তো কখনোই পরবেন না। এটি তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। যদি না-ই পরেন, আপনার অভিমান হওয়াও আবার অস্বাভাবিক নয়। তবে এ নিয়ে তার সঙ্গে আধিপত্যমূলক আচরণ করা ঠিক নয়। নিজের ইচ্ছা তার ওপর চাপিয়ে দেবেন না। বহু বিষয়েই কিন্তু দুজনের ভাবনার অমিল থাকতে পারে। সেসব নিয়ে আলাপও হতে পারে। তবে সবক্ষেত্রেই একে অন্যের ভাবনা এবং ইচ্ছাকে সম্মান করা জরুরি। সম্মানবোধ থাকলে আধিপত্যের প্রশ্ন আসে না।

আধিপত্যে সমাধান নয়: সামাজিক কারণেই অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা নানা বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন সঙ্গীর ওপর। তবে উল্টোটাও দেখা যায় অনেক পরিবারে। দুটির কোনোটিই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক নয় বলে জানালেন হাজেরা খাতুন। বরং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতি জোর দিলেন তিনি। কারও ওপর আধিপত্য দেখানো হলে তার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। বঞ্চনার অনুভূতি কাজ করতে পারে ভেতরে ভেতরে। নিজেকে পরাধীন মনে করতে পারেন। নেতিবাচক অনুভূতির চক্রে ঘুরপাক খেতে পারেন। অন্যদিকে যিনি আধিপত্য বিস্তার করেন, তিনিও কিন্তু সম্পর্কের মধুরতা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন। অর্থাৎ সম্পর্কটা দুজনের কারও জন্যই সুখকর থাকে না। এমনকি ধীরে ধীরে সম্পর্কটা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া তৃতীয় কারও সামনে আধিপত্য দেখালে সঙ্গী হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন।

কথার ধরন হোক বন্ধুত্বময়: যে কোনো বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গীর চেয়ে বেশি থাকে, সেটির ভালোমন্দ দিক আপনি সঙ্গীকে বলতেই পারেন। কিংবা ধরা যাক, সঙ্গী কোনো বিষয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। হয়তো তিনি কম ঘুমিয়ে বেশি কাজ করছেন কিংবা হুট করে কঠিন খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে ওজন কমাতে চাইছেন। ওই বিষয়ে হয়তো তার এবং আপনার একই রকম জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে। তবে তারপরও আপনি সঙ্গীর জন্য বাড়তি শঙ্কা অনুভব করছেন। অর্থাৎ সব ভাবনাই আপনার ভেতর কাজ করছে কেবল আপনার সঙ্গীর ভালোর জন্য। সেটিও আপনি তাকে নিঃসন্দেহেই বলতে পারেন। তবে যে পরিস্থিতিতেই সঙ্গীকে আপনার ভিন্ন মতের কথা বলুন না কেন, আপনার কথা এবং আচরণে প্রকাশ করুন ভালোবাসা। এমনভাবে কখনোই কিছু বলবেন না; যাতে আপনার একক আধিপত্য প্রকাশ হয়। বরং একজন যোগ্য সঙ্গী হিসেবে বন্ধুত্বময় কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করুন নিজেকে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জীবনসঙ্গীর ওপর চলে না আধিপত্য বিস্তার

আপডেট সময় : ০৫:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দুটি মানুষের মনের মিল যতই থাক, শতভাগ বিষয়ে সহমত হওয়া প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। অনেকেই নিজের ভাবনা চাপিয়ে দিতে চান অন্যজনের ওপর, বিশেষ করে নিজের জীবনসঙ্গীর বেলায়। কেউ যদি সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন, তাহলে কি সম্পর্কটাকে সুস্থ বলা যায়? ভালো লাগা ও ভালোবাসার ভিত্তির ওপর যে সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে, আদতে কি তাতে আধিপত্য থাকতে পারে?
পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে প্রত্যেকেরই অবস্থান এবং দায়িত্ব আলাদা।

সেই অবস্থান থেকেই একজন ব্যক্তি তার জীবনসঙ্গীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও ভাবেন। সঙ্গীর খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ঘুমের সময়সহ বহু বিষয় নিয়েই তার কিছু বলার থাকতে পারে। পারিবারিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও দু’জনের ভাবনা দুই রকম হতে পারে। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে সঙ্গীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন। মতের ভিন্নতা নিয়ে তো আলাপ করা যেতেই পারে। কিন্তু কথার ধরনের ওপরই নির্ভর করছে, সম্পর্কটা কেমন। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।

মতের অমিল: ধরুন, আপনার সঙ্গীকে নির্দিষ্ট কোনো রঙের পোশাকে দেখতে ইচ্ছা করে আপনার। কিন্তু রঙটা আপনার সঙ্গীর আবার অপছন্দ। এমন পরিস্থিতিতে আপনার ইচ্ছার প্রকাশ সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন তার কাছে। আপনার অনুরোধে হয়তো তিনি কখনো ওই রঙের পোশাক পরবেন কিংবা হয়তো কখনোই পরবেন না। এটি তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। যদি না-ই পরেন, আপনার অভিমান হওয়াও আবার অস্বাভাবিক নয়। তবে এ নিয়ে তার সঙ্গে আধিপত্যমূলক আচরণ করা ঠিক নয়। নিজের ইচ্ছা তার ওপর চাপিয়ে দেবেন না। বহু বিষয়েই কিন্তু দুজনের ভাবনার অমিল থাকতে পারে। সেসব নিয়ে আলাপও হতে পারে। তবে সবক্ষেত্রেই একে অন্যের ভাবনা এবং ইচ্ছাকে সম্মান করা জরুরি। সম্মানবোধ থাকলে আধিপত্যের প্রশ্ন আসে না।

আধিপত্যে সমাধান নয়: সামাজিক কারণেই অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা নানা বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন সঙ্গীর ওপর। তবে উল্টোটাও দেখা যায় অনেক পরিবারে। দুটির কোনোটিই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক নয় বলে জানালেন হাজেরা খাতুন। বরং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতি জোর দিলেন তিনি। কারও ওপর আধিপত্য দেখানো হলে তার হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। বঞ্চনার অনুভূতি কাজ করতে পারে ভেতরে ভেতরে। নিজেকে পরাধীন মনে করতে পারেন। নেতিবাচক অনুভূতির চক্রে ঘুরপাক খেতে পারেন। অন্যদিকে যিনি আধিপত্য বিস্তার করেন, তিনিও কিন্তু সম্পর্কের মধুরতা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন। অর্থাৎ সম্পর্কটা দুজনের কারও জন্যই সুখকর থাকে না। এমনকি ধীরে ধীরে সম্পর্কটা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া তৃতীয় কারও সামনে আধিপত্য দেখালে সঙ্গী হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন।

কথার ধরন হোক বন্ধুত্বময়: যে কোনো বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গীর চেয়ে বেশি থাকে, সেটির ভালোমন্দ দিক আপনি সঙ্গীকে বলতেই পারেন। কিংবা ধরা যাক, সঙ্গী কোনো বিষয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন। হয়তো তিনি কম ঘুমিয়ে বেশি কাজ করছেন কিংবা হুট করে কঠিন খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে ওজন কমাতে চাইছেন। ওই বিষয়ে হয়তো তার এবং আপনার একই রকম জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে। তবে তারপরও আপনি সঙ্গীর জন্য বাড়তি শঙ্কা অনুভব করছেন। অর্থাৎ সব ভাবনাই আপনার ভেতর কাজ করছে কেবল আপনার সঙ্গীর ভালোর জন্য। সেটিও আপনি তাকে নিঃসন্দেহেই বলতে পারেন। তবে যে পরিস্থিতিতেই সঙ্গীকে আপনার ভিন্ন মতের কথা বলুন না কেন, আপনার কথা এবং আচরণে প্রকাশ করুন ভালোবাসা। এমনভাবে কখনোই কিছু বলবেন না; যাতে আপনার একক আধিপত্য প্রকাশ হয়। বরং একজন যোগ্য সঙ্গী হিসেবে বন্ধুত্বময় কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করুন নিজেকে।