নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার দেশে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে যেটা আমরা লক্ষ্য করছি, যেই তাদের নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে, তারা আবার সেই পুরনো কায়দায় ঠিক একইভাবে ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমাদের ছাত্রদলের ওপর হামলা, আমাদের বিভিন্ন জেলাগুলোতে হামলা, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘরে হামলা— আজকে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে তারা।’
বিগত কয়েক বছরের মতো বিএনপির মহাসচিব পুনরায় উল্লেখ করেন, ‘আমরা এখানে শপথ নিয়েছি— কোনও ভয়ভীতি আমাদেরকে দমন করতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষকে কোনও দিন দমন করতে পারেনি। আমরা সবকিছুকে মোকাবিলা করে এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, গণতান্ত্রিক উপায়ে অবশ্যই এই ভয়াবহ যে ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা আজকে পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তাদেরকে সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের পার্লামেন্ট এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।’
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এই দিনকে ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১১টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন। নেতা-কর্মীরা সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
এ সময়ে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিনুল হক, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোয়াজ্জেম মুন্না, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নায়াব ইউসুফ, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ডা. সরকার শামীম, প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম, ডা. মাসুদ আক্তার জিতু, এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন রোকন, ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির আবদুল করিম আব্বাসী, শাহাদাত হোসেন সেলিম, তমিজ উদ্দিন টিটু, এম এ বাশার, চাষী এনামুল হক, একেএম মহিউদ্দিন, এসএম বেলাল প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাজধানীর দক্ষিণ ও উত্তরের মোট ৭০টি স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার সামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন- ড্যাবের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণের জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়ার ছবি পোস্টার প্রকাশ করেছে ও কয়েকটি দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।