নিজস্ব প্রতিবেদক : জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিনা কারণে গাছের ডাল ভাঙারও বিধান নেই। সেখানে জঙ্গিবাদের নামে মানুষ হত্যার প্রশ্নই আসে না।
গতকাল রোববার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অডিটোরিয়াম রুমে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও নিরসনকল্পে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্তৃক সংকলিত ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থের কাজে সহযোগিতা করেছেন এন্টি টেররিজম ইউনিটের ডিআইজি মনিরুজ্জামান ও মিডিয়া অফিসার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসলাম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়। এ কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম বাংলাদেশ। যদিও উস্কানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। এসব কিছু ঘটানোর পেছনে ছিল বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা। তিনি বলেন, আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হলো। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকল। এরমধ্যেই হলি আর্টিজানে হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
‘আমরা দেখলাম অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়িতে বাসা বাড়িতে আগুন সেখান থেকে যখনই আমরা কন্ট্রল করলাম তখনই, শুরু হলো নতুন অধ্যায় জঙ্গিবাদের। আমরা দেখলাম ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজারকে হত্যা করা হলো। রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা, পঞ্চগড়ে ইস্কন মন্দিরের পুরোহিত, বান্দরবানের বৌদ্ধ মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। মসজিদে বোমা ফাটানোর চক্রান্ত হলো’—যোগ করেন তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়ার যে চেষ্টা চলছে। সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নেই। এটা বিদেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস। এটা সন্ত্রাস-জঙ্গিদের উদ্দেশ্য পালন করার একটা অপপ্রয়াস। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতা সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরি দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা জঙ্গিবাদ চাই না।
আইএস জঙ্গিদের কর্মকা-ের নিয়মিত খবর প্রকাশকারী সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্সের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, এক ইসরায়েলি মহিলা সাইট ইনটেলিজেন্স নামক সাইটে লিখতেন, ছবি প্রকাশ ও সংবাদ প্রকাশ করতেন। ওনারা (বিদেশিরা) ছুটে আসতেন, আপনি বলেন, আইএস নাই এই যে দেখেন এসব হোমগ্রোন এসবের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনালি কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের পুলিশ বাহিনী সেদিন জীবন বাজি রেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। এখন পাশ্ববর্তী দেশের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীরাও এখন আমাদের প্রশংসা করেন। আমরা কীভাবে পারলাম হোমগ্রোন টেরোরিস্টদের নির্মূল করতে।
‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থটি শুধু বাংলা নয়, সব ভাষাতেই প্রকাশ করার তাগিদ দেন মন্ত্রী। বলেন, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন বলেন, ইসলামকে বর্তমানে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ধর্ম হিসাবে পরিচিত করতে ইসরায়েলসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। সেখানে মুসলমানদেরকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণকে জানাতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কামরুল আহসান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদসহ বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজিরা।
বিশ্বব্যাপী ইসলামিক চিন্তাবিদদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে: আইজিপি : জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদরা অজানা কারণে কথা বলতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। রোববারের এই অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ইসলামি চিন্তাবিদ, মাওলানা ও ধর্মীয় নেতা যারা আছেন তাদেরকে কথা বলতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী ইসলামিক চিন্তাবিদদের কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন প্রচুর ইসলামিক ভিডিও দেখা যায়। যেখানে কোনো সেনসর নেই। অর্থাৎ কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তা বোঝা মুশকিল। কারণ ইউটিউবে ও সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো মডারেটর নেই। অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ভাইরাল হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতাদের কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরে আমাদের দেশের আ্যম্বাসিগুলো পরিবার ছাড়া আ্যম্বাসি ঘোষণা করা হলো। এরপর প্রতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে থাকলো বাংলাদেশে কারা কারা আসতে পারবে না। বিমানের মাধ্যমে তখন অনেক দেশ কার্গো বন্ধ করে দিয়েছিল। যদি আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হ্যান্ডেল না করতে পারতাম তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। পুলিশ প্রধান বলেন, অনেকেই তখন বলছিল, জঙ্গিবাদ থেকে বাংলাদেশ কখনো বেরোতে পারবে না। তবে আল্লাহর রহমতে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে পেরেছি। আমাদের সব সময় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যাকারী, তাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ট্যাগস :
জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যাকারী
জনপ্রিয় সংবাদ