ঢাকা ০৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জিমি কার্টারের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৯ জানুয়ারি

  • আপডেট সময় : ০৭:২৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : ছিলেন বাদামচাষি। এরই ফাঁকে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর হন সিনেটর। একপর্যায়ে রাজ্যের গর্ভনরের পদটাও হাসিল করেন। এরপর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদটি অলংকৃত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন এটাই। ১০০ বছর বয়সে এসে মারা গেছেন জিমি কার্টার। স্থানীয় সময় রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। বাদাম চাষ জিমি কার্টারের পারিবারিক ব্যবসা। ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে ফিরে আসেন। বাদাম চাষে মনোযোগী হন। স্কুলজীবনে তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন কার্টার। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর কাজ করে সাবমেরিন কর্মকর্তাও হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা এই নেতার শেষকৃত্যের পরিকল্পনা মার্কিন সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি কার্টারের অনুরোধে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রশংসা বক্তব্য দেবেন, ৯ জানুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ৬ দিনের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শনিবার (৪ ডিসেম্বর) শুরু হবে। কার্টারের মরদেহ সেদিন তার নিজ শহর জর্জিয়ার প্লেইন্সে নিয়ে যাওয়া হবে।

সেখানে তার শৈশবের খামারে ৩৯ বার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজানো হবে, যা তার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি স্মরণে করা হবে। এরপর মরদেহ আটলান্টায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে ৭ জানুয়ারির সকাল পর্যন্ত কার্টারের মরদেহ প্রেসিডেন্সিয়াল সেন্টারে থাকবে। সেখান থেকে তার মরদেহ ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে ইউএস ক্যাপিটলের রোটন্ডায় তাকে রাখা হবে। ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের পর কার্টারের পরিবারের জন্য একটি ব্যক্তিগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। তাকে তার স্ত্রী রোজালিন কার্টারের পাশে, তাদের দীর্ঘদিনের বাড়ির প্রাঙ্গণ প্লেইন্সে সমাহিত করা হবে।

রাজনীতি
জিমি কার্টারের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচনের আগে তিনি ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন। দেই দফায় সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর হন। এ সময় তিনি প্রকাশ্যেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে আরও বেশি কথা বলতে শুরু করেন। তার শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই বর্ণ বৈষম্যের সময় পার হয়ে গেছে। ’ তিনি ক্যাপিটল ভবনে মার্টিন লুথার কিংয়ের ছবি স্থাপন করেন এবং আফ্রিকান আমেরিকানরা যেন সরকারি অফিসে নিয়োগ পান তা নিশ্চিত করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন তখন আমেরিকা উত্তাল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে।

এ সময় তিনি নিজেকে পেশাদার রাজনীতিকের চেয়ে একজন বাদামচাষি হিসেবেই তুলে ধরেন। শুরুতে জনমত জরিপগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তার মাত্র চার শতাংশ সমর্থনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নয় মাস পর তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে দেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।

প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়ে এসেছিলেন কার্টার। তিনিই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি হোয়াইট হাউজের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছিলেন যা পরে রোনাল্ড রিগ্যান সরিয়ে ফেলেন। তার সময়ে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ে এবং এ কারণে তার জনপ্রিয়তাতেও ধস নামে। তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনা করলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে পারেননি। জিমি কার্টারের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সফল হতে শুরু করেছিল।

তার সময়েই ১৯৭৮ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক ক্যাম্প ভেডিভ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তার সফলতা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। ব্যক্তি জীবনে ধার্মিক ছিলেন জিমি কার্টার।

তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি ধর্ম বিশ্বাস ও পাবলিক সার্ভিসকে আলাদা করতে পারেন না। আমি কখনোই ঈশ্বরের ইচ্ছা আর আমার রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখিনি। আপনি একটা লঙ্ঘন করলে, আরেকটাও লঙ্ঘিত হবে। ’২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন জিমি কার্টার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জিমি কার্টারের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৯ জানুয়ারি

আপডেট সময় : ০৭:২৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদেশের খবর ডেস্ক : ছিলেন বাদামচাষি। এরই ফাঁকে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর হন সিনেটর। একপর্যায়ে রাজ্যের গর্ভনরের পদটাও হাসিল করেন। এরপর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদটি অলংকৃত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন এটাই। ১০০ বছর বয়সে এসে মারা গেছেন জিমি কার্টার। স্থানীয় সময় রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। বাদাম চাষ জিমি কার্টারের পারিবারিক ব্যবসা। ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে ফিরে আসেন। বাদাম চাষে মনোযোগী হন। স্কুলজীবনে তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন কার্টার। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর কাজ করে সাবমেরিন কর্মকর্তাও হয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা এই নেতার শেষকৃত্যের পরিকল্পনা মার্কিন সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি কার্টারের অনুরোধে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রশংসা বক্তব্য দেবেন, ৯ জানুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ৬ দিনের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শনিবার (৪ ডিসেম্বর) শুরু হবে। কার্টারের মরদেহ সেদিন তার নিজ শহর জর্জিয়ার প্লেইন্সে নিয়ে যাওয়া হবে।

সেখানে তার শৈশবের খামারে ৩৯ বার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজানো হবে, যা তার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি স্মরণে করা হবে। এরপর মরদেহ আটলান্টায় নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে ৭ জানুয়ারির সকাল পর্যন্ত কার্টারের মরদেহ প্রেসিডেন্সিয়াল সেন্টারে থাকবে। সেখান থেকে তার মরদেহ ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে ইউএস ক্যাপিটলের রোটন্ডায় তাকে রাখা হবে। ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের পর কার্টারের পরিবারের জন্য একটি ব্যক্তিগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। তাকে তার স্ত্রী রোজালিন কার্টারের পাশে, তাদের দীর্ঘদিনের বাড়ির প্রাঙ্গণ প্লেইন্সে সমাহিত করা হবে।

রাজনীতি
জিমি কার্টারের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচনের আগে তিনি ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন। দেই দফায় সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর হন। এ সময় তিনি প্রকাশ্যেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে আরও বেশি কথা বলতে শুরু করেন। তার শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই বর্ণ বৈষম্যের সময় পার হয়ে গেছে। ’ তিনি ক্যাপিটল ভবনে মার্টিন লুথার কিংয়ের ছবি স্থাপন করেন এবং আফ্রিকান আমেরিকানরা যেন সরকারি অফিসে নিয়োগ পান তা নিশ্চিত করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন তখন আমেরিকা উত্তাল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে।

এ সময় তিনি নিজেকে পেশাদার রাজনীতিকের চেয়ে একজন বাদামচাষি হিসেবেই তুলে ধরেন। শুরুতে জনমত জরিপগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তার মাত্র চার শতাংশ সমর্থনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নয় মাস পর তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে দেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।

প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়ে এসেছিলেন কার্টার। তিনিই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি হোয়াইট হাউজের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছিলেন যা পরে রোনাল্ড রিগ্যান সরিয়ে ফেলেন। তার সময়ে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ে এবং এ কারণে তার জনপ্রিয়তাতেও ধস নামে। তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনা করলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে পারেননি। জিমি কার্টারের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সফল হতে শুরু করেছিল।

তার সময়েই ১৯৭৮ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক ক্যাম্প ভেডিভ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তার সফলতা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। ব্যক্তি জীবনে ধার্মিক ছিলেন জিমি কার্টার।

তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি ধর্ম বিশ্বাস ও পাবলিক সার্ভিসকে আলাদা করতে পারেন না। আমি কখনোই ঈশ্বরের ইচ্ছা আর আমার রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখিনি। আপনি একটা লঙ্ঘন করলে, আরেকটাও লঙ্ঘিত হবে। ’২০০২ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন জিমি কার্টার।