নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির জিএম কাদের অংশকে বাদ রেখে রওশন এরশাদপন্থিদের নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুর আরেক অংশের ঐক্য হয়েছে; সম্মেলনে নতুন কমিটিও গঠন করেছে এক হওয়া এ দুই অংশ।
শনিবার (৯ আগস্ট) সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের এই অংশের চেয়ারম্যান এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির এই অংশের সম্মেলনে তাদের নির্বাচন করা হয়। জিএম কাদের অংশকে বাদ রেখে এ সম্মেলনকে দলের ‘দশম জাতীয় সম্মেলন’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আসা প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে নতুন কমিটির এই চারজন নির্বাচিত হন। গত ৭ জুলাই জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জি এম কাদের এবং যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। এরমধ্যে এদিন জি এম কাদেরকে সরিয়ে রেখেই দশম সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির আনিসু মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও চুন্নু অংশের নেতারা। এতে দলের রওশনপন্থি অংশের নেতা কাজী ফিরোজ রশিদসহ অন্যদের দেখা যায়।
যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, ইতিহাসে লেখা থাকবে: অন্তবর্তী সরকারের আমলে অপমানিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি বলেন, অনেকভাবে আমাদের অপমান করা হয়েছে, এই জাতিকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু, এবার যেভাবে অপমান করছে, এটি ইতিহাসে লেখা থাকবে।
শনিবার রাজধানীর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের জোট শরিক জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আটকের তথ্য দিয়েছিল পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেয় বলে খবর আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় পাঁচটি মামলার আসামির তালিকায় নাম রয়েছে মঞ্জুর। নব্বইয়ের দশকে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী মঞ্জু ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। পরে তিনি দল ভেঙে আলাদা সংগঠন শুরু করেন, যা এখন জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) হিসাবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে মঞ্জুকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দপ্তর পাল্টে মঞ্জুকে তিনি দেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পিরোজপুর-২ আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হলেও সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হেরে যান মঞ্জু। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
অনির্বাচিত সরকার এখন সরকার চালাচ্ছে মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, আমাদের দুঃখ লাগে, এই দেশে যারা রাজনীতি করেছে, এদেশের মানুষের সাথে যারা সংগ্রাম করেছে, আন্দোলন করেছে, তাদের বাদ দিয়ে এখন দেশ কারা চালাচ্ছে?
নন-গভর্নমেন্ট। গভর্নমেন্ট চালাচ্ছে কারা? নন-গভর্নমেন্ট। তাহলে তো চলার কথা না। সে প্রথমে বলে দিয়েছে, যে আমি চালাচ্ছি না। উপদেশ দিচ্ছে কারা, যারা এই দেশে বসবাস করতেন না। অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোথায় আমেরিকায় ছিল, লন্ডনে ছিল, জাপানে ছিল—তাদের এনে বই লেখাচ্ছে। সংস্কার করতেছে। বাস্তবায়ন করবে কে?
মঞ্জু বলেন, এখন রাজনীতি কোথায় আছে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ জানে না। ১৮ কি ২০ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। পাকিস্তানের অন্যায়, শোষণ, অবজ্ঞা-এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি; স্বাধিকারের জন্য। সেটি এক পর্যায়ে স্বাধীনতার রূপ গ্রহণ করল। আমরা বিপ্লব করে, পাকিস্তান ভেঙে আমরা বাংলাদেশ করেছি। এখন আমরা যে বাংলাদেশ করলাম, এটা দিয়ে আবার একটা বিপ্লব হচ্ছে। সংস্কার করছে।
এরশাদ সরকারের আমলেও সংস্কার হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবস্থায়ও তো সংস্কার ছিল। এরশাদ সাহেব সংস্কার করেন নাই। স্বাস্থ্যনীতি, শিক্ষানীতি, এই উপজেলা ব্যবস্থা—এগুলো সংস্কারেরই অংশ। দেশে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে জেপি চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছবে? দেশে একটা নির্বাচন হবে কি হবে না, করতে দিবে কি দিবে না, এই দোদুল্যমান অবস্থার ভেতর আমরা বসবাস করছি।
আগামী নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা করে তিনি বলেন, আমি অনেকসময় হালকা মেজাজে বলি, নির্বাচন করার দরকার কি, তোমরা দুটোই তো দল আছ। যে কয়টা আসন আছে, ভাগাভাগি করে নাও। যে কটা মন্ত্রি প্রয়োজন, ভাগাভাগি করে নাও। মাঝখান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করার দরকার কী?
এই আশঙ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে মঞ্জু বলেন, কেনো এ কথা বলি? কারণ, অমুককে নির্বাচন করতে দেবে না, তমুককে নির্বাচন করতে দেবে না। আন্দোলনটা ছিল মানুষের অধিকারের ব্যাপারে। তাদের মৌলিক অধিকারের জন্য। কিন্তু, আজকে মৌলিক অধিকারের কথা কেউ বলে না, বাকস্বাধীনতার কথা বলে না, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলে না। সংবাদপত্রে পড়লাম, দখলের রাজনীতি হচ্ছে। ব্যবসা দখল হচ্ছে, দোকান দখল হচ্ছে। চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। নিয়মকানুনের ভেতরে নেই।
গত ৭ জুলাই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জি এম কাদের এবং যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। জি এম কাদেরকে সরিয়ে রেখেই শনিবার দশম সম্মেলন করছেন জাতীয় পার্টির নেতারা, যেখানে দলের অন্য অংশের নেতাদেরও দেখা গেছে।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সে অংশের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি নাজমা আক্তার।